ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিনা-কৃষ্ণার জন্য কোচ ছোটনের শুভকামনা

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাবিনা-কৃষ্ণার জন্য কোচ ছোটনের শুভকামনা

রুমেল খান ॥ ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশী কোন ক্লাবের হয়ে খেলা প্রথম খেলোয়াড়ে পরিণত হন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের তৎকালীন সহ-অধিনায়ক এবং ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। সেই সঙ্গে গড়েন যাচ্ছেন ইতিহাস। এবার সাবিনার সাফল্যের মুকুটে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি পালক। এবার তিনি খেলবেন ভারতের সেথু এএফসিতে। সাবিনা একা নন, সেখানে তিনি সহযোদ্ধা হিসেবে পাবেন জাতীয় দলের আরেক ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকারকেও। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া ইন্ডিয়ান উইমেন্স ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক লীগে খেলবেন জাতীয় ও অ-১৬ দলের দুই অধিনায়ক সাবিনা-কৃষ্ণা। ক্লাবটিতে খেলার প্রস্তাব সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা পান বাফুফের মাধ্যমে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কদিন আগে থেকেই জানতাম একটা কিছু হবে। কিরণ আপার (মাহফুজা আক্তার কিরণ) সঙ্গে এটা নিয়ে পল স্যার (পল স্মলি) আগেই আলাপ করেছিলেন। পরে নিশ্চিত হয়ে আমাকে এবং কৃষ্ণাকে জানানো হয়। এখন সেথু এফসি ডেট দিলেই আমরা কদিনের মধ্যে (ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে) ভারত রওনা হব।’ ওই লীগে অনেক অভিজ্ঞ-দক্ষ ফুটবলার খেলবেন। এ প্রসঙ্গে সাবিনার মতামত, ‘তবে আমরাও যেহেতু কয়েক বছর ধরে ফুটবল খেলেছি, আমরাও নিশ্চয়ই ওদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। তারপরও আমাদের জন্য এটা হবে অভিজ্ঞতা অর্জনের আদর্শ মঞ্চ। আশা করি, খুব দ্রুতই ওখানকার সবকিছুর সঙ্গেই আমরা মানিয়ে নিতে পারব।’ সাবিনার ভাষ্য, ‘এর আগে মালদ্বীপে গিয়ে দু’বার খেলে এসেছি। তারপরও বলব, সেই অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই ভারতে গিয়ে অনেক কাজে দেবে। ওখানকার ম্যাচগুলোতে অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’ মালদ্বীপের দুটি ক্লাবে দু’দফায় যখন গিয়ে লীগ খেলে এসেছিলেন সাবিনা, তখন ওই লীগে অনেক ভারতীয় টপ প্লেয়ারও ছিল (যেমন জাতীয় দলে খেলা বালা দেবী)। তাদের নিয়ে বা বিপক্ষে খেলেছেন। কাজেই তাদের সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা আছে। কাজেই এবার ভারতে খেলতে গেলে কোন সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন তিনি। মালদ্বীপে গিয়ে দু’দফায় খেলে মোট ৫৯ গোল করেছিলেন সাবিনা। এটিই কি আকৃষ্ট করেছে সেথু এফসিকে সাবিনাকে তাদের দলে ভেড়াতে? ‘আমার মনে হয় না। আমি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপসহ একাধিকবার খেলতে গিয়েছিলাম ভারতে। সেখানে গিয়ে অনেক গোলও করেছি। সেখানে আমার ও কৃষ্ণার খেলে দেখেই হয়তো আমাদের সিলেক্ট করেছে ওরা।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবিনা বলেন, ‘একবার বলেছিলাম ইউরোপের কোন ক্লাবের হয়ে লীগে খেলতে চাই। সেই স্বপ্নটা এখনও আছে। মালদ্বীপ, ভারতের মতো এভাবে যত বেশি দেশেই খেলব, ততই আমাদের প্রতিনিয়ত খেলার মান বাড়বে। ফলে একদিন নিশ্চয়ই ইউরোপে খেলার ডাকও পাব।’ সবশেষে জানান, ‘আমার এবং কৃষ্ণার ভারতে গিয়ে খেলাটা নিশ্চয়ই অন্য ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করবে। আমরা ওদের জন্য রোল মডেল হতে পারি। আমরা যদি ভাল কিছু করতে পারি, তাহলে অন্যরাও বাইরে গিয়ে খেলতে চেষ্টা করবে। এতে করে আরও বাংলাদেশী ফুটবলারদের বিদেশের লীগে খেলার পথটা সুগম হবে।’ কৃষ্ণা রানী সরকার। টাঙ্গাইলের মেয়ে। ফরোয়ার্ড। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে কৃষ্ণা জানায়, ‘বুধবার লাঞ্চ টাইমে সুখবরটা পাই। ছোটন স্যার (গোলাম রব্বানী ছোটন) খবরটা দেন। শুনে খুবই খুশি হয়েছি। যদিও এর পাঁচ দিন আগেই সাবিনা আপু আমাকে এ বিষয়ে আভাস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন সুখবর আসতে পারে। যদি সাবিনা আপু চান্স না পেত আর আমি একাই চান্স পেয়ে ভারতে খেলার খবরটা পেতাম, তাহলে কিন্তু মোটেও খুশি হতাম না বরং মহা নার্ভাস হয়ে পড়তাম। কেননা এর আগে কখনই একা বিদেশ সফর করিনি। যখন শুনলাম সাবিনা আপুর সঙ্গেই যাব, তখন খুশি হওয়ার চেয়ে বরং অনেক স্বস্তিবোধই করেছিলাম।’ কৃষ্ণা আরও যোগ করে, ‘সাবিনা আপুর কাছে শুনেছি ওখানে নাকি গিয়ে আমাদের ট্রায়াল দিতে হবে। আশা করি টিকে যাব। তখন ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকবে বেস্ট ইলিভেনে খেলা, ভাল খেলা, গোল করা এবং দলকে জেতানো। নিজের সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করব।’ বাংলাদেশের জাতীয় দল এবং সব বয়সভিত্তিক দল মিলিয়ে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ২০ গোল করা কৃষ্ণা মা করে জানায়, ‘গত ডিসেম্বরে আমাদের অ-১৫ দলটা সাফে চ্যাম্পিয়ন হলো। বয়স বেশি থাকার কারণে আমি ওই দলে খেলতে পারিনি। যদিও একসময়ে ওই দলের সবার সঙ্গেই খেলেছিলাম অ-১৪ দলে। দলের সাফল্যে খুশি হলেও আফসোসও হয়েছে এই ভেবেÑ ইশ, বয়সটা যদি ১৫-এর মধ্যে থাকত, তাহলে আমিও তো দলটার সাফল্যের অংশীদার হতে পারতাম!’ সাবিনার মতো কৃষ্ণাও একদিন ইউরোপের লীগে খেলতে চায়, ‘সাবিনা আপু আমার আদর্শ। এজন্যই তার স্টাইলেই চুল কেটেছি (হাসি)! যদিও আপু মানা করেছিলেন কাটতে। আসলে বড় চুল নিয়ে খেললে ঝামেলা মনে হয়, অস্বস্তি লাগে। এজন্যই কেটে ফেলেছি।’ ২০১১ সালে ফুটবল খেলা শুরু কৃষ্ণার। বঙ্গমাতা ফুটবলে খেলেছে জেলা পর্যায় পর্যন্ত। গোলাম রায়হান পাপন স্যার (গোলাম রব্বানী ছোটনের ছোট ভাই) এবং নিজ স্কুলের হেড স্যার আব্দুল লতিফের অবদানেই কৃষ্ণা আজ এই পর্যন্ত এসেছে। সাবিনা-কৃষ্ণার কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘ভারতীয় ক্লাবের হয়ে খেলার ডাক পাওয়াটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের নারী ফুটবল অনেক উন্নতি করছে এবং এগুচ্ছে। ওদের ওখানে খেলার ডাক পাওয়াটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য বড় প্রাপ্তি। এই ধারাটা সবে শুরু হলো। আগামীতে তাদের দেখানো পথ ধরে অন্য মেয়েরাও নিশ্চয়ই নিজেদের যোগ্যতায় ওখানে যাবে। আমি সাবিনা-কৃষ্ণার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।’
×