ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি

ষাণ্মাষিক মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। বিনিয়োগ সহায়ক ব্যবস্থা রাখার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক এই পদক্ষেপ নিয়েছে। চলতি বছরের জানুুয়ারি-জুন এই ছয় মাসের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা গত জুলাই-ডিসেম্বর প্রথম ছয় মাসে ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এবার বেড়েছে বলা যায়। বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে বছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই ঘোষণা করা হয় মুদ্রানীতি। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের এই মুদ্রানীতিতে সরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আট দশমিক তিন শতাংশ করা হয়েছে। আর এবারের মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়ে আনা হয়েছে। গত মুদ্রানীতিতে যেখানে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যদিও অর্জন হয়েছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, নতুন ঘোষণায় তা কমিয়ে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে। মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই ঘোষিত হয়েছে এবারের মুদ্রানীতি, যা অত্যন্ত আশার কথা। আগামী জুন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি থাকার কথা ৫ দশমিক ৮ শতাংশের নিচে; কিন্তু এরই মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। গত কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকলেও সাম্প্রতিককালে চাল, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা চাপ পড়তে পারে। তবে তা যেন সহনীয় মাত্রায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। বাজার যেন লাগামহীন, নিয়ন্ত্রণহীন না হয়ে পড়ে সে বিষয়েও সর্তকতা জরুরী। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিনিয়োগ বাড়ানো। জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখাসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন তথা টেকসই অর্থনীতির জন্য জোর দিতে হবে বিনিয়োগকে। এর জন্য বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মাত্রা বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোয় ঋণ বিতরণ ও বৈদেশিক ঋণের দায়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেয়ার ক্ষমতা কিছুটা কমানো হবে। ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাতে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হবে। আগামী জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ অনুপাত কমিয়ে আনার সুযোগ পাবে। বেসরকারী ঋণের লাগাম টানতে হলে ঋণ আমানত অনুপাত বা এডিআর হ্রাস করা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। সে ইঙ্গিত অবশ্য মুদ্রানীতিতেও রয়েছে। এটা অবশ্য বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং হবে ইতিবাচক। ঋণের মান কেমন হবে, তা নিয়ে মুদ্রানীতিতেও যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেনি যদিও। এডিআর কমালে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। নতুবা বিনিয়োগ হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত। সে পথ পরিহার করাই হবে উত্তম। নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারী খাতে ঋণ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। তাই ঋণ প্রবাহের সীমা না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো হয়েছে। প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির কারণেই বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল বিরাজমান প্রবৃদ্ধি স্থবিরতা কাটিয়ে ব্যাপক বিস্তৃত গতিশীলতায় ফিরেছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও উৎপাদন কর্মকান্ডের মূলধনী যন্ত্রাদি ও উৎপাদন উপকরণাদি আমদানির জোরালো প্রবৃদ্ধি এসেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে। এবার বিনিয়োগ ও উৎপাদন কর্মকান্ডে প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা বজায় রাখতে দ্বিতীয়ার্ধে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবাহে সংযোগ আনা হয়নি। আমরা মনে করি, প্রবৃদ্ধির এ জোরালো গতিবেগ বজায় রাখার স্বার্থেই মূল্যস্ফীতির চাপ ও বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতার ওপর চাপের বাড়তি ঝুঁকি কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনা প্রয়োজন।
×