ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাদিক আল আমিন

এপিলেপটিক হায়দার

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এপিলেপটিক হায়দার

আলী হায়দার, জগতের ধারাবাহিক জীবনরূপের মাঝেও নিজেকে আলাদা ভাবে। ভাবে খুব অসহায়, একাকী। নিজের হীনসত্তা পাগল করে তুলে তাকে। করে তুলে অতিষ্ঠ। নিয়মিত এ্যাটাক হয় রাস্তাঘাট, অলিগলি, শহরের যে কোন প্রান্তে। অথচ এই মৃগী রোগ হওয়াটা তার নিজের দোষ নয়। প্রকৃতি প্রদত্ত। তবুও কেন জানি নিজেকে অন্যদের থেকে খুব আড়াল মনে হয়। হঠাৎ কোথাও এ্যাটাক হয়ে গেলে কিছু মানুষ এগিয়ে আসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। অনেকেই আবার দেখেও না দেখার ভান করে লোকচক্ষুর আড়ালে মিশে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হায়দায় এপিলেপটিক রোগী। তার রোগ সম্পর্কে পরিবারে জেনে যাবার পর তার মা আর তাকে গ্রামে রাখতে চায় না। শহরমুখো হতে বাধ্য করে। গ্রামে থাকলে নানা লোকের কানাঘুষোর মাধ্যমে হায়দারের রোগের ব্যাপারটা প্রচার হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় তার মা তাকে গ্রামে থাকতে দিতে চায় না। হায়দার শহরে এসে চাকরি খোঁজে। মাকে তার কাছে নিয়ে আসতে চায়। বড় ভাইয়ের বউ নামমাত্র তার শাশুড়িকে রাখে। এক ধরনের নিমরাজি হয়ে। হায়দার চাকরির খোঁজ করে প্রতিদিন। অথচ চাকরি মেলে না। যা মেলে, তা হলো জনসাধারণের সহানুভূতি। একবার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে এ্যাটাক হয় তার। এক লোক তাকে সাহায্য করে। লোকটির সঙ্গে কিছুটা সখ্যও হয় হায়দারের। মৃগী রোগ নিয়ে হায়দারের চিন্তার তেমন কিছুই হয়ত থাকত না, যদি না সে অজ্ঞান অবস্থায় দুঃস্বপ্ন দেখত। হায়দার খিচুনি দিয়ে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। আর তখনি দেখে ভয়ঙ্কর অলৌকিক কিছু দুঃস্বপ্ন। যেমন, সীসা তৈরি জমিন। সূর্যটা খুব কাছে চলে এসেছে। প্রচ- তাপদাহে মাংস গলে যাচ্ছে মানুষের। তবুও তারা ছুটছে অনন্তের পানে। এ রকম দুঃস্বপ্ন দেখে হায়দার। তবে তার মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হয়। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা গেলেও অচেতনে অর্থাৎ অজ্ঞান অবস্থায় কিভাবে স্বপ্ন দেখা সম্ভব! এর রহস্য বের করতে বহু কসরত করতে হয় হায়দারকে। হায়দারের দুঃসম্পর্কের এক খালা আছে। খালু বেশ জ্ঞানী মানুষ। তার কাছে হায়দার স্বপ্নের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি তার এক বন্ধুর কাছে হায়দারকে যেতে বলেন। হায়দার সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গেস্টরুমে অপেক্ষা করে। সেখানে বাড়ির কর্মচারীর কাছে ভদ্রলোকের ছেলের ব্যাপারে জানতে পারে। ভদ্রলোকটির ছেলেও হায়দারের মতো এপিলেপসি রোগে আক্রান্ত ছিল। এখন সে আর নেই। এক ধরনের রহস্যের মধ্য দিয়ে ছেলেটি মারা যায়। হায়দার তার সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পায়। হায়দার ভাবে, তবে কি তাকেও অজ্ঞাত রহস্যের মধ্য দিয়ে মরতে হবে! হায়দার সেই ভদ্রলোকের কাছ থেকেও কোন সন্তুষ্টিমূলক উত্তর খুঁজে পায় না। এক সময় হায়দার নিজেই সমাধান খুঁজে পায়। নিজের ভেতর আহ্লাদ ও আত্মতুষ্টি অনুভব করে। আর যে কাজের অভাবে তার এই রহস্যঘন দুঃস্বপ্ন দেখা, সেই কাজ পালনে ব্রত হয়। তকিব তৌফিকের সরল ব্যাখ্যা এবং পরিশুদ্ধ কলমের আঁচড়ে পূর্ণতা পেয়েছে ‘এপিলেপটিক হায়দার’ উপন্যাসটি। তার প্রথম উপন্যাস এটি। প্রতিটি ঘটনার তিনি তৈরি করেছেন অনন্য ব্যঞ্জনা এবং রহস্যময়তা। ধরে রেখেছেন পাঠকের আকর্ষণ। আশা করি প্রতিশ্রুতিশীল এবং সম্ভাবনাময় এই লেখক ভবিষ্যতে তার পাঠকদের আরও ভাল কিছু কথাসাহিত্য উপহার দিতে সক্ষম হবেন।
×