অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তার প্রকৃত প্রতিফলন নেই অর্থনীতিতে। বিশেষ করে, একই গতিতে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। নেমে গেছে দরিদ্র মানুষ কমার হারও। ফলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে প্রবৃদ্ধির সংখ্যা, তথ্য এবং উপাত্ত নিয়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল সংখ্যাসর্বস্ব প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থনীতি এগুনো সম্ভব নয়। বরং তা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করবে বড় ঝুঁকি।
দেশের অর্থনীতি এখন প্রায় পরিপক্ব। রফতানি, প্রবাসী আয় কিংবা বিনিয়োগ, আপাতদৃষ্টিতে স্বস্তিতে সব সূচকই। যার ফলে, গত কয়েক অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। যেমন ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৬ শতাংশের হার সবশেষ অর্থবছরে গিয়ে ছাড়িয়েছে সোয়া সাতের ঘর। কিন্তু তারপরও যেন ঘাটতি রয়ে গেছে কোন এক জায়গায়। তা হলো, অর্থনীতির গতি যে হারে বাড়ছে, তার সঙ্গে মিল রেখে উন্নত হচ্ছে না অন্য সূচকগুলো। বিশেষ করে, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং দারিদ্র্যের হার।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার নতুন কিংবা পুরনো পরিসংখ্যানে। যেমন ২০০০ সাল থেকে হিসাব করা যাক। প্রথম পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল পাঁচ দশমিক ১ শতাংশ। আর তা কাজের সুযোগ করেছিল বাড়তি সোয়া তিন শতাংশ মানুষের। কেবল তাই নয়, এই প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য কমিয়েছিল পৌনে দুই শতাংশের বেশি। কিন্তু পরের বছরগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু উল্টো পথে হেঁটেছে অন্য দুটি সূচক। আর এই ব্যবধান সবচেয়ে বেশি ছিল সবশেষ পাঁচ-ছয় বছরে। যেখানে গড় প্রবৃদ্ধি সাড়ে ছয় হলেও কর্মসংস্থান তৈরির প্রবণতা নেমে এসেছিল দুই শতাংশের নিচে। অথচ এই সময়ে দেশে উচ্চ প্রযুক্তির বিকাশও হয়নি খুব বেশি। তাহলে প্রশ্ন এমন প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য কতখানি টেকসই?
প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে এমন বিতর্কে সরকারী অবস্থানও স্পষ্ট। কিন্তু বিশ্লেষকদের আশঙ্কা হলো কেবল সংখ্যার ভিত্তিতে অর্থনীতি চললে, বড় সঙ্কটে পড়তে হবে সামনের দিনগুলোতে।