ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধারাটি এখনও অব্যাহত-

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

ধারাটি এখনও অব্যাহত-

রাজধানীর রাজপথ, ফুটপাথ ও গলিপথে প্রতিদিন লক্ষাধিক হকার জীবন ও জীবিকার তাগিদে নেমে আসে। তারা পসরা সাজিয়ে বসে থরে থরে। তাদের এই ভাসমান বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়তই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে; যার মধ্যে বড় বিষফোঁড়া চাঁদাবাজি। জানা যায়, কেবল ঢাকার হকারদের ঘিরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এই চাঁদার টাকা আদায় করছে নগরীর তিন শতাধিক অবৈধ টোল আদায়কারী যারা ‘লাইনম্যান’ নামে পরিচিত। যাদের আরেক পরিচয় তারা পুলিশের একশ্রেণীর মনোনীত সোর্স। এরাই পুলিশ ও রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে আঁতাত করে হকারদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট থানা ও আদালতে একাধিক মামলা হলেও চূড়ান্ত প্রতিকার মেলে না। এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে হকারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। তাদের কাছ থেকে দিনে ২০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। বেসরকারী সংস্থা বিআইজিডির ‘নগর পরিস্থিতি : ঢাকা মহানগরে যানজট-শাসন-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে’ নামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে ঢাকার ফুটপাথের দৈর্ঘ্য ৪৩০ কিলোমিটার। এসব ফুটপাথে বছরে প্রায় ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়, যা দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্মিলিত বাজেটের প্রায় সমান। এ চাঁদার টাকা পুরোটাই চলে যাচ্ছে চাঁদাবাজ ও অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকদের পকেটে। লাইনম্যান নামধারী চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বহু মামলা রয়েছে। মামলা থাকলেও পুলিশের চোখের সামনেই এরা নির্বিঘেœ ও নিরাপদে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। সময় সময় গ্রেফতার হলেও জামিন নিয়ে বের হয়ে আবার চাঁদাবাজি করছে। তাদেরকে সহায়তা-সমর্থন দিচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু পুলিশসহ রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকর্মী ও হকার সংগঠনের নেতারা। কার্যত লাভবান হচ্ছে এরাই, হকাররা নয়। একথা সত্য যে, হকাররা অর্থনীতির একটা বড় অংশ। তাই এদের নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা দরকার। বিষয়টি নিয়ে রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের ভাবা উচিত। একথা ভুললে চলবে না ফুটপাথ হলো জনসাধারণের হাঁটার জন্য, হকারদের ব্যবসার জন্য নয়। তারপরও বলব বিকল্প স্থানের সংস্থান না করে ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদ নয়। এখন সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশে সরকারী অফিস ছুটির পর ফুটপাথে দোকান বসানোর যে সিদ্ধান্ত চলছে সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হোক। এবং তা লাইনম্যান নয়, অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল অঙ্কের টাকা সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব খাতে যোগ করার কথা ভাবা যায়। হকারদের পরিচয়পত্র ও লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের একটি ব্যবস্থার আওতায় আনা যায়। একটা নিয়মের মধ্যে আনা যায়। পুলিশ বা পাবলিক যেই এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে হকারকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি বন্ধ হতে বাধ্য।
×