ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হরেক রকম সমস্যার আবর্তে ঢাকার নারীরা

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

হরেক রকম সমস্যার আবর্তে ঢাকার নারীরা

অর্থনীতির সমৃদ্ধির জোয়ারে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার এক যুগান্তকারী পর্বের অপেক্ষায়। প্রবৃদ্ধির এই সুবর্ণ সময়ে রাজধানী ঢাকার সার্বিক চেহারার গুণগতমানও অনেকখানি এগিয়ে যাচ্ছে। তার পরেও সমস্যা শঙ্কুল বাংলাদেশের প্রতিদিনের সঙ্কট আর দুর্ভোগেরও যেন কমতি নেই। নগর উন্নয়ন প্রকল্পে ঢাকাকে নানা মাত্রিক কর্মপ্রক্রিয়ায় সচল রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হলেও অনেক বাধা বিপত্তি এখনও অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। যে কোন সমস্যার স্থায়ী নির্মূল যেমন হয় না একইভাবে নতুন নতুন সঙ্কট তৈরিতে ও বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। সমস্যা পুরো জনগোষ্ঠীর হলেও এখানে নারী-পুরুষের প্রভেদ ও দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষণীয়। নগরীটিকে নারীবান্ধব করতে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও দৈনন্দিন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় শুধু নারীকে। যানজট একটি বহুল আলোচিত এবং অবর্ণনীয় দুর্দশার একটি নির্মম চিত্র যা রাজধানীবাসীকে সব সময়ই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোন ফারাক থাকে না। কিন্তু ব্যবধান লক্ষ্য করা যায় গণপরিবহনে নারীদের অসহনীয় দুর্ভোগ নিয়ে যা একজন পুরুষ সহযাত্রী চাইতেও একজন মহিলা যাত্রীকে যন্ত্রণার বলি হতে হয়। প্রথমত যানজটের অসহয়নীয় দুর্ভোগ পোহানো; কিন্তু পরবর্তীতে মেনে নিতে হয় লিঙ্গ বৈষম্যের চরম দুর্গতি। অধিকাংশ নারীর জন্য সিট বরাদ্দ থাকে মাত্র ৮-২০টা। তাও আবার সব সময় খালি পাওয়া যায় না। তার ওপর বেশি করে বর্তায় নারী হিসেবে আরও কিছু নিপীড়ন। চালক কিংবা সহকারীর অনাকাক্সিক্ষত উৎপাত সহ্য করতে হয় নারী যাত্রীকে। সেটা বাসে ওঠা থেকে শুরু করে পুরো যাত্রাপথ শেষ অবধি নেমে যাওয়া পর্যন্ত। এর মধ্যে যদি বখাটে কোন পুরুষ সহযাত্রী থাকে তাহলে সেই নাজেহালের অবস্থা ষোলোকলা পূর্ণ হয়। সম্প্রতি ‘এ্যাকশন এইড’-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকা শহরের নারীদের প্রতিদিনের দুর্ভোগ নিয়ে এক তথ্য জনসমক্ষে উঠে আসে। সেখানে দেখা যাচ্ছে পথযাত্রার দুর্ভোগের আশঙ্কায় ৫৬% নারীরা ঘর থেকেই বের হতে চান না। বিশেষ করে যাদের গণপরিবহন ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকে না। এর মধ্যে যারা বের হয় তাদের ২৩% শিকার হন শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের। শুধু কি গণপরিবহনে? রাস্তায় ফুটপাথ কিংবা হকার মার্কেটে পুরুষের গতিবিধি যতখানি সহজ এবং শোভন মহিলাদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই কঠিন এবং অশোভন। আর কোন মা তার সন্তানকে নিয়ে সাময়িক বিনোদনের আশায় পার্ক কিংবা মাঠে ময়দানে যেতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এখানেও কোন নারীকে নিগৃহীতা হতে হয় কোন বখাটে মস্তান কিংবা সন্ত্রাসীদের হাতে, আর গণশৌচাগারে নারীদের প্রবেশ এক আপত্তি-বিপত্তিমূলক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সম্ভবত এই কারণে চিকিৎসকদের মতে নারীদের ইউরিন প্রদাহের হার পুরুষের তুলনায় বেশি। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার যেসব কর্মসূচী হাতে নেয়া হয় তাতে পুরো জনগোষ্ঠীর সব চাহিদা হয়তবা মেটে না কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে সেটা হয়ে দাঁড়ায় একেবারে সমস্যা পীড়িত। সুতারং পুরো পরিবেশ যদি কোনভাবে নারী-ঘনিষ্ঠ হতে না পারে দেশের আধুনিক অগ্রযাত্রায় নারী সম্পৃক্ততা ততবেশি দৃশ্যমান হবে না। বিশেষ করে গণপরিবহনে কর্মজীবী এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিপন্ন অবস্থার কথা আমলে এনে মহিলাদের জন্য আরও বাস বাড়ানো অত্যন্ত জরুরী। যাতে তারা নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সাধারণ পরিবহনে ও সিট সংখ্যা বাড়িয়ে নারী যাত্রীদের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের মধ্যেই বর্তায়। মহিলা এবং শিশুদের জন্য আলাদা কোন পার্ক কিংবা সামরিক বিনোদনের স্থান নির্দিষ্ট করা যায় কিনা তাও বিবেচনায় রাখা নগর উর্ধতন কর্মকর্তাদের অন্যতম কর্তব্য। যেভাবে ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সম্প্রতি মেয়েদের জন্য একটি আলাদা মার্কেট খুলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিলম্ব করেননি। সেভাবে নগরীর নারী সম্পৃক্ত বিভিন্ন সমস্যাকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে তার যথাযথ সমাধান নগর কর্তৃপক্ষের জন্য খুব বেশি বেগ পেতে হবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে গণশৌচাগারের ব্যাপারটি নারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং আবশ্যকীয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সমস্যাগুলো সহৃদয় বিবেচনায় এনে ঢাকাসহ সারাদেশের পরিবেশ নিরাপদ এবং নিশ্চিত করে নারীদের প্রতিদিনের কর্মযাত্রা সহজ এবং স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসবে এই প্রত্যাশা প্রত্যেকের। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×