ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে রফতানির প্রস্তুতি

দেশেই বিশ্বমানের নাট, বোল্ট স্ক্রু তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

দেশেই বিশ্বমানের নাট, বোল্ট স্ক্রু তৈরি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নাট, বোল্ট ও স্ক্রু। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল, অটোমোবইলসহ অসংখ্য পণ্য উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল। আকারে ছোট হলেও এসব প্রকৌশল পণ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট পণ্যের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য এগুলো যথেষ্ট মানসম্পন্ন হতে হয়। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের এসব পণ্য ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস’ হিসেবেও পরিচিত। বাংলাদেশে এই খাতের রয়েছে বিশাল বাজার। যার বেশিরভাগ আমদানি নির্ভর। ওয়ালটন এখন দেশেই তৈরি করছে আমদানি বিকল্প বিশ্বমান সম্পন্ন নাট, বোল্ট ও স্ক্রু। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির প্রস্তুতিও নিচ্ছে ওয়ালটন। ২০১৭ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজে স্থাপন করা হয়েছে নাট-বোল্ট ও স্ক্রু’র উৎপাদন কারখানা। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৮০০ টন। নিজস্ব চাহিদা ৩৬০ থেকে ৪০০ টন। সে হিসেবে প্রায় ১৩০০ টন নাট-বোল্ট-স্ক্রু দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে দেশীয় কিছু ফার্নিচার, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও কিচেন এ্যাপ্লায়েন্সেস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের পণ্য দেশে উৎপাদিত হওয়ায় আর আমদানি করতে হবে না ভেবে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এর মান নিয়েও। বিদেশী কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও রফতানি বিষয়ে আলোচনা চলছে। ওয়ালটনের স্ক্রু আরএনডি (গবেষণা ও উন্নয়ন) বিভাগের প্রধান পৃথ্বিশ কুমার সাহা বলেন, বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির মেশিনারিজ ও দক্ষ প্রকৌশলী-টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নাট-বোল্ট ও স্ক্রু’র উৎপাদন ইউনিট। এখানে বিভিন্ন সাইজের ফাসেনার (ঋধংঃবহবৎ- যা দিয়ে বিভিন্ন অংশকে একত্রে আবদ্ধ করা হয়) তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই থেকে দশ মিলিমিটার ব্যাসের এবং পাঁচ থেকে ৭৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যরে সেলফ ট্যাপিং ও সেলফ ড্রিলিং স্ক্রু, ৮.৮ ও ১০.৯ গ্রেডের হেক্সাগোনাল ও অ্যালেন বোল্ট; মেশিন স্ক্রু এবং হেক্সাগোনাল নাট। উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে তাইওয়ানের ডাই ও মেশিনারিজ। মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মান প্রযুক্তির ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়্যার ড্রইং; স্ফেরে‌্যাডাইজিং এ্যানেলিং; পিকলিং, ফসফেটিং এ্যান্ড মেটাল সোপ ট্রিটমেন্ট; কোল্ড ফর্মিং; হিট ট্রিটমেন্ট এ্যান্ড ইলেকট্রপ্লেটিং। স্ক্রু এবং বোল্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ গুণগতমানের বোরন মিশ্রিত ইস্পাত। অন্যদিকে কার্বন ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নাট-বোল্ট। জানা গেছে, শতভাগ হিট ট্রিটমেন্টে তৈরি এসব প্রকৌশল পণ্যের মান যাচাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে স্টেরিও মাইক্রোস্কোপ, ম্যাটালার্জিক্যাল মাইক্রোস্কোপ ও মাইক্রো হার্ডনেস যন্ত্র। সূক্ষভাবে এসব ধাতব পণ্যের মান যাচাইয়ে মাইক্রোস্কোপে প্রায় এক হাজার গুণ বড় করে স্ট্রাকচারাল টেস্ট করা হয়। অন্যদিকে মাইক্রো হার্ডনেস যন্ত্র দিয়ে হার্ডনেস মাপা হয়। কমপক্ষে ৯৬ ঘণ্টা সল্ট স্প্রে টেস্টে উত্তীর্ণ ওয়ালটনের নাট-বোল্ট ও স্ক্রু’র মরিচারোধক ক্ষমতা তুলনামূলক অনেক বেশি। ওয়ালটন কম্প্রেসার আরএনডি বিভাগের প্রধান মীর মুজাহিদীন ইসলাম বলেন, কম্প্রেসারে ছয় ধরনের স্ক্রু লাগে। এসব স্ক্রু’র থ্রেড ও স্কেলিং সঠিক না হলে কম্প্রেসারে লিকেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, কম্প্রেসারে ব্যবহৃত স্ক্রু উচ্চ গুণগতমানের হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ালটন কম্প্রেসারে ব্যবহৃত স্ক্রু আগে ইটালি থেকে আনা হতো। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের সমমানের স্ক্রুই এখন ওয়ালটন তৈরি করছে। দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওয়ালটনের তৈরি নাট-বোল্ট ও স্ক্রু’র প্রতি নিশ্চিন্তে শতভাগ আস্থা রাখা যায়। ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, দেশ-বিদেশে নাট, বোল্ট ও স্ক্রু’র মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ নামী-দামী প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব আউটসোর্সিং করে থাকে। ওয়ালটন নিজেরা এসব পণ্য তৈরি করায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগুলো। যা দেশের শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করবে।
×