ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরডিএর ‘বনলতা প্রকল্পে’ প্লট কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

আরডিএর ‘বনলতা প্রকল্পে’ প্লট কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১ প্লট হরিলুটের তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এই প্লট কেলেঙ্কারির তদন্ত করছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম। জানা গেছে, গত বছরের ৩১ মে বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১ প্লটের মধ্যে আয়তনে বড় ও অধিকাংশ প্লট লটারির নামে প্রহসন করে নিজেদের নামে বরাদ্দ নেন আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ও এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই সময় বনলতার প্লট হরিলুটের ঘটনায় রাজশাহীতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্লট বরাদ্দ বাতিল করে সুষ্ঠুভাবে লটারির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ ও প্লট কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত বছর ৯ জুলাই মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন রাজশাহীবাসী। এদিকে প্লট কেলেঙ্কারির ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েরও দৃষ্টিতে পড়ে। এর আগে মন্ত্রণালয় একদফা তদন্ত করেন বনলতার প্লট কেলেঙ্কারির ঘটনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্লট কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়। তারই সূত্র ধরে সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেমকে ঘটনাটি তদন্তের ভার দেয়া হয়। জানা যায়, তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে অতিরিক্ত সচিব কয়েকদফা রাজশাহীতে আসেন। তিনি পৃথকভাবে কথা বলেন, প্লট বরাদ্দ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে। প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করেও নিয়ে যান ঢাকায়। সূত্র মতে, তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তলব করে আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমানসহ বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীদের এতসংখ্যক প্লট প্রাপ্তির যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু আরডিএর সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কোন জবাব দিতে ব্যর্থ হন। জানা গেছে, বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক উন্নয়ন প্রকল্পে ২০১৩ সালে ১৯৩টি প্লট ২৬টি শ্রেণী ক্যাটাগরির ও কোটাভুক্তদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়। ওইসময় আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য কোটা ৭টি প্লটের জন্য মাত্র ৪ জন আবেদন করেন। বাকি ৩টি প্লটের জন্য কোনো আবেদনকারী না থাকায় সেগুলি রেজ্যুলেশন করে অন্য ক্যাটাগরির অপেক্ষমাণ আবেদনকারীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়। তদন্ত সূত্র জানায়, ১৯৩ প্লটের মধ্যেই আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোটা শেষ হয়ে যায়। পরে বরাদ্দকৃত ৩১ প্লটের মধ্যে তাদের কোনো কোটা প্রাপ্য ছিল না। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারার জন্য তারা বরাদ্দ যোগ্য শ্রেণী ক্যাটাগরি ২৬টি থেকে নামিয়ে ৮টিতে নিয়ে আসেন। তবে এই ৩১ প্লটের জন্য কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আবেদন করার কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি। অনেকেই আবেদন করেও প্লট পাননি। সূত্র আরও জানায়, বেছে বেছে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামে ৬ কাঠা, ৫ কাঠা, ৪ কাঠা ও সাড়ে তিন কাঠার সেরা প্লটগুলো লটারিতে কীভাবে উঠল তা খুবই রহস্যজনক। আর সকাল সাড়ে ৯টায় লটারি অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী মহানগর পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়নি। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান বজলুর রহমান ৬ কাঠা, এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামান পৌনে ৭ কাঠা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ৫ কাঠার একটি করে প্লট নিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা সকাল সাড়ে ৯টায় লটারি অনুষ্ঠানের কথা প্রচার করলেও ওইদিন লটারি হয়েছে এমন প্রমাণ মেলেনি। বরং চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে বরাদ্দ কমিটি নিজেরা মূল্যবান প্লটগুলো নিয়েছেন। বনলতার প্লট কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। কীভাবে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা এতসংখ্যক প্লট পেয়েছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মূলত কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত হচ্ছে। সেখানে অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
×