ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল রূপাতলী হাউজিং এস্টেটে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

বরিশাল রূপাতলী হাউজিং এস্টেটে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

সরকারের সকল নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলিকে দেখিয়ে আইন বর্হিভূতভাবে বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকায় একের পর এক গড়ে উঠেছে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে পরিবেশ, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে অবৈধ কর্মকান্ড-কে বৈধতা দিচ্ছে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, সরকার জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ৪৭০টি আবাসিক প্লট নিয়ে বিসিসির ২৪নং ওয়ার্ডে গড়ে তোলা হয় ‘রূপাতলী হাউজিং এস্টেট’। বরাদ্দ প্রাপ্তির নীতিমালা অনুযায়ী কোন গ্রাহক তাদের নির্মিত স্থাপনায় কোন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা কিংবা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে পারবেন না। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি দফতর কাজ করলেও তারা এখন ঠুটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছেন। সরজমিনে দেখা গেছে, ‘রূপাতলী হাউজিং এস্টেট’ এ বর্তমানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচা বাজার, বেসরকারী স্কুল ও কলেজ, মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্ডেন, এনজিও, হাসপাতাল, আবাসিক হোটেল, ফার্নিচারের শো-রুম, বিউটি পার্লার, ফ্যাশন হাউজ, ইলেকট্রিক শপ, হার্ডওয়ার, স্যানিটারি, খাবার হোটেল, স্টুডিও, কম্পিউটার শো-রুম, ফোন-ফ্যাক্স, মোবাইল শো-রুম, গার্মেন্টস শো-রুম, এ্যাপেক্স জুতার শো-রুম, ওয়াল্টন শো-রুম, অটোমোবাইল মেশিনারি শো-রুম, স্টেশনারি, মুদি দোকানসহ কয়েক শ’ অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা। এমনকি এস্টেটের প্রধান প্রবেশ গেটটিও ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড হিসেবে। আর এগুলো বরাদ্দ দিয়ে মালিকপক্ষ জামানত হিসেবে আদায় করছে কোটি কোটি টাকা যা সম্পূর্ণ আইন বর্হিভূত। আর এ সকল বাণিজ্যিক স্থাপনায় ব্যবহৃত বিদ্যুত বিল পরিশোধ করছেন আবাসিক হিসেবে। নিয়ম অনুযায়ী হাউজিং এলাকায় সরকারীভাবে বাজারের জন্য একটি স্থান বরাদ্দ থাকলেও সেখানে কোন স্থাপনা গড়ে উঠেনি। ভাসমান ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে সেখানে বাজার বসালেও কোন ধরনের অনুমতি ছাড়া ঠিক তার বিপরীতে হাউজিং নিবাসী জনৈক (অবঃ) সরকারী কর্মকর্তা গড়ে তুলেছেন একটি কাঁচা বাজার। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে ওই কাঁচা বাজারের দায়িত্বরত আজিজ হাওলাদার বাবুল বলেন, কোন ব্যবসায়ী উদ্দেশে নয়, সড়ক বিভাগ কর্তৃক রাস্তার পার্শে¦ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর মানবিক কারণে আমরা ওই ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিয়েছি। এছাড়া হাউজিংয়ের অভ্যন্তরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র সড়কের দুই পার্শে¦ গড়ে তুলেছেন ছোট ছোট টং ঘর। যা থেকে প্রতিদিন নিদিষ্ট হারে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুত সংযোগের মাধ্যমে বাণিজ্যিককে আবাসিক বিলে রূপান্তরিত করে দুই একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মাসিক তিন থেকে পাঁচ শ’ টাকা করে উৎকোচ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুত বিতরণ বিভাগের দায়িত্বরত লাইন সাহায্যকারী নজরুল ইসলাম ও লাইনম্যান নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। রূপাতলী হাউজিং এস্টেট এ অবস্থিত হাওলাদার মার্কেটের মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে মার্কেট করেছি। আইন অনুযায়ী আপনি এখানে মার্কেট করতে পারেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দ্বিতীয় পার্টি। আমার জন্য ওই আইন প্রযোজ্য নয়। তবে বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে রূপাতলী হাউজিং এস্টেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় হোক কিংবা তৃতীয় হোক এখানে বসবাসকারী সকলের ক্ষেত্রেই একই আইন প্রযোজ্য। তিনি আরও বলেন, আমরা রূপাতলী হাউজিং এস্টেটে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণকারীদের নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা বিষয়টি কর্ণপাত না করায় ঢাকা অফিসকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশ মতো পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে বিদ্যুত বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ওজোপাটিকোর নিবার্হী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, রূপাতলী হাউজিং এস্টেটে বাণিজ্যিক সংযোগ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। যারা অবৈধভাবে আবাসিক মিটারের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সংযোগ ব্যবহার করছে সুনিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রূপাতলী হাউজিং এস্টেট কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সুরুজ মোল্লা বলেন, এখানে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি কোন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না। তার পরেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আমাদের অনুরোধ এবং মৌখিক নির্দেশকে অমান্য করে একের পর এক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি তারা যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে হাউজিং এলাকায় ৪৫ একর জমিতে ৪৭১টি প্লট বরাদ্দকালে হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের জন্য ১২তলা মার্কেট নির্মাণের জন্য একপাশে জমি বরাদ্দ রেখে প্লান করা হয়। এর মধ্যে জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে জেলা পরিষদ থেকে ছয় শতক জমির ওপর ১৫টি স্টল নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে হাউজিংয়ের বাসিন্দারা লিখিত এবং মৌখিকভাবে জেলা পরিষদকে বিষয়টি অবহিত করলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু ক্ষমতাসীন দলের ওই ঠিকাদার প্রভাব খাটিয়ে ১২ শতক জমি দখলে নিয়ে ১৪০ ফুটের স্থলে ৩ শ’ ফুট জমিতে ৫৮ টি স্টল নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে কোনভাবে কাজ বন্ধ করতে না পেরে হাউজিংয়ের বাসিন্দা জনৈক আবুল কালাম উচ্চাদালতে রীট আবেদন করেন। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এবং বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, রূপাতলী হাউজিং এস্টেটে কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা অবৈধ। খুব শীঘ্রই সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবৈধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের তালিকা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
×