ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাশ্রমে ভাসমান সেতু, ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীর

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বেচ্ছাশ্রমে ভাসমান সেতু, ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীর

সিমেন্ট বালি কিম্বা লোহা নয়। প্লাস্টিকের ব্যারেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রায় আধা কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে এবং নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতুটি। যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। আর এতে উপকৃত হয়েছেন ঝাঁপাসহ পার্শ্ববর্তী ৩টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ। অনন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামবাসী। মণিরামপুর উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক শহর রাজগঞ্জ বাজার। এই বাজার সংলগ্ন বৃহত্তর বাঁওড় ঝাঁপা। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাঁওড়ের চারপাশ দিয়েই ঘিরে রেখেছে ঝাঁপা গ্রাম। যে গ্রামে বসবাস করে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। কিন্তু দ্বীপ সদৃশ গ্রাম হওয়ায় এর যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। বাইরের সঙ্গে গ্রামবাসীর যোগাযোগের তাই একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। ঝড় বৃষ্টি কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় রুদ্ধ হয়ে যায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমটিও। এতে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী কিংবা জরুরী কাজে অন্যত্র যাওয়া মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। গত ২৯ নবেম্বর রাত ১০টার দিকে ঝাঁপা গ্রামের মরহুম ডাক্তার আজিবর সরদারের বড় ছেলে শামসুজ্জামান মন্টু (৫৮) স্ট্রোক করেন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের করা হলেও কোন যানবাহন না পাওয়ায় পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। চলতি বছরে ঝড়বৃষ্টির সময় ঝাঁপা বাঁওড় দিয়ে সাধারণ মানুষসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পারাপারের সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত না হলে বই খাতাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। গত ৬ মার্চ রাতে ঝাঁপা গ্রামের কাঁচামাল বিক্রেতা মতিয়ার রহমানের মেয়ে রোকেয়া বেগমকে (২০) হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ৫ অক্টোবর সকালে রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসার পথে আবদুল আজিজের ছেলে সুমন (১২) ঝাঁপা বাঁওড়ে পড়ে যায়। এরপর জেলেরা তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ঝাঁপা গ্রামবাসী বাঁওড়ের উপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছেন। কিন্তু তাতে কোন সুফল মেলেনি। ভাসমান এ সেতু নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান টুটুল জানান, যখন সরকারী দফতরগুলোতে আবেদন করার পরও কোন সুফল মেলেনি তখন স্থানীয়ভাবে এর সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে পর্যাপ্ত সাড়া মেলে ঝাঁপা গ্রামবাসীর। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় অবশেষে নির্মিত হয় ১৩শ’ ফুট দৈর্ঘ্যরে ভাসমান এ সেতু। যার প্রস্থ হচ্ছে ৯ ফুট। আর সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হয় ৮৮৯টি বড় আকারের প্লাস্টিকের ব্যারেল। যা সংযুক্ত রাখার জন্য লোহার তার ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যারেলের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য দেয়া হয় ১৩শ’ ফুট দৈর্ঘ্যরে লোহার পাত। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ভাসমান এ সেতু। যার পুরো অর্থই ঝাঁপা গ্রামবাসী বহন করছেন। তাছাড়া যারা অর্থ সহযোগিতা করতে পারেননি তারা স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণকাজে অংশ নিচ্ছেন। প্রায় সাড়ে ৩ মাস ধরে সেতুটি তৈরির পর আগামী পয়লা জানুয়ারি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। অন্যতম উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান টুটুল জানান, সেতুটির ওপর দিয়ে ভ্যান, রিক্সা ও ইজিবাইকসহ হালকা যান চলাচল করতে পারবে। তবে প্লাস্টিকের ব্যারেল দিয়ে সেতুটি নির্মিত হওয়ায় ভারি যান চলাচল করা আদৌ সম্ভব হবে না। সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×