ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলে মেয়েদের উপহার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

ফুটবলে মেয়েদের উপহার

বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের কিশোরী মেয়েরা ফুটবলে বিজয় ছিনিয়ে এনে দেশবাসীকে এক অনন্য উপহার দিয়েছে। সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনালে হারিয়েছে ভারতের মতো শক্তিশালী টিমকে। অপরাজিত দল হিসেবেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই দারুণ সাফল্যের জন্য অপরাজিত কিশোরীদের আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের কারণেই আমরা আরেকবার বলতে পারছি শাবাশ বাংলাদেশ। আশা করি এই স্বপ্নময় জয়যাত্রা থেমে থাকবে না। বাংলাদেশের ফুটবলের পতাকা এখন কিশোরীদের হাতেই- এমন অভিমত ক্রীড়ামোদীদের মুখে মুখে। টুর্নামেন্টের চার খেলায় আমাদের দলটি প্রতিপক্ষদের জালে ১৩টি গোল দিয়েছে; কিন্তু নিজেদের গোলবার রেখেছে সম্পূর্ণ নিরাপদ, একটিবারের জন্যও সেখানে বল প্রবেশ করেনি। এ চিত্র থেকে স্পষ্ট- তহুরা, আঁখি খাতুন, শামসুন্নাহার, আনুচিংয়ের দলটি আক্রমণ ও রক্ষণভাগে সমান দক্ষতায় খেলেছে নিজেদের উজাড় করে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পাটখোলা গ্রামের তাঁতিপাড়ায় মেয়েটার জন্ম। বাবা আক্তার হোসেন নিজেই তাঁত শ্রমিক। আর মা নাসিমা বেগম বুনেন সুতা। ছোটবেলায় নিজেও মায়ের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন সুতা বুনতে। কিন্তু ভাগ্য কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কি কেউ বলতে পারে! ছোটবেলায় সুতা বোনা সেই আঁখি খাতুনই হয়েছেন অনুর্ধ-১৫ সাফ ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়। তাঁতিপাড়া থেকে উঠে এসে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের খেতাব উঠেছে আঁখির হাতে। তাও আবার একজন ডিফেন্ডার হয়ে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জয় করা, সামান্য কথা নয়! দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে ভারতের সাম্রাজ্যটা একেবারেই গেড়ে বসা। সিনিয়র চারটি সাফ ফুটবলের চারটিতেই তারা চ্যাম্পিয়ন। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াই করে রানার্স আপ হতে হয়েছে তাদের। ফাইনালের আগে গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছিল বাংলাদেশ। সেটা ছিল হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে এসে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া। সিনিয়র পর্যায়ে এখন ভারতকে হারানো না গেলেও বয়সভিত্তিক ফুটবলে টানা চার ম্যাচে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ। দেশের মহিলা ফুটবলে জাগরণের শুরু থেকেই আছেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা শুধু ঠেকাতাম। কত কম গোল খাওয়া যায় তাই শুধু ভাবতাম। এখন দিন পরিবর্তন হয়েছে। সামনের সিনিয়র সাফেই ভারত আর আমাদের সঙ্গে পারবে না।’ কিশোরীরা যে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলছে, মেয়েদের ফুটবলে যে জাগরণ তার পেছনে অনন্য ভূমিকা রাখছে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে আয়োজিত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপের নিয়মিত আয়োজন। প্রতিভা অন্বেষণের এমন আরও অনেক আয়োজন চাই। একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের পরিচর্যার প্রতিও দিতে হবে মনোযোগ। খেলাধুলায় ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সে কথা বলাই বাহুল্য। ফুটবলে কিশোরীরা ভাল খেলছে এবং আরও ভাল করবে- এমন সম্ভাবনা শুধু সংগঠকরা দেখছেন তা নয়, দেশবাসীও আশায় বুক বাঁধছে। তাদের প্রতি এ মনোযোগ অব্যাহত এবং প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে সংশ্লিষ্ট সবাই সদা যত্নবান হবেন- এটাই একান্তভাবে কাম্য। ক্রিকেটে আমাদের সাফল্যের ঝুলি ভরে উঠছে। ফুটবল, হকি এবং অন্যান্য খেলাতেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লাল-সবুজের স্থান করে নিতে হলে সুষ্ঠু ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা চাই। আমাদের প্রত্যাশা, কিশোরীদের চমৎকার বিজয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমাদের নীতি-নির্ধারকদের আলোড়িত করবে। তাদের কাছ থেকে দেশবাসী পাবেন প্রত্যাশিত উদ্যোগ। যার সুফল নিশ্চয়ই ফলতে থাকবে আগামীতে ধারাবাহিকভাবে।
×