ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বই ॥ আহমদ শরীফকে লেখা নির্বাচিত পত্রাবলি -ড .পৃথিলা নাজনীন নীলিমা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

বই ॥ আহমদ শরীফকে লেখা নির্বাচিত পত্রাবলি    -ড .পৃথিলা নাজনীন নীলিমা

বাংলা একাডেমি থেকে সদ্য প্রকাশিত আহমদ শরীফকে লেখা নির্বাচিত পত্রাবলী, দু’খন্ডের মধ্যে কিছুদিন আগে প্রখম খন্ড- প্রকাশিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে গ্রন্থটি বর্তমান সময়ে গ্রন্থ সাম্রাজ্যে একটি উল্লেখ্যযোগ্য সংযোজন। বর্তমান খন্ডটির ভূমিকা থেকে নির্ঘণ্ট পর্যন্ত মোট ৪৪০ পৃষ্ঠা ব্যাপী ব্যাপ্তি । সংকলিত পত্রগুলো ১৯৩৯-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এবং এই উল্লেখিত সময়ের মধ্যে লিখিত ৩৮২টি পত্র সন-তারিখের ক্রমানুযায়ী সন্নিবেশিত হয়েছে। সংকলিত পত্রগুলো সবই ড. আহমদ শরীফকে লিখিত এবং এর আগে অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি। পত্রগুলোর মধ্যে ইংরেজী ভাষায় ৯/১০টি ছাড়া অন্যসব পত্র উভয় বঙ্গের বাংলা ভাষা-ভাষীদের থেকে এসেছে। পত্রগুলোর মধ্যে তাঁর শিক্ষকতুল্য বা রাজনৈতিক সুহৃদ, পেশাগত সহকর্মীসহ বন্ধু, প্রাক্তন ছাত্র এবং শুভাকাক্সক্ষীদের লেখা পত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে তাঁর শিক্ষক এবং শিক্ষকতুল্যের মধ্যে ড. শহীদুল্লাহ, ড. মুহম্মদ এনামুল হক, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, অধ্যাপক মনসুরউদ্দীন, অধ্যাপক আহসাবউদ্দীন আহমদ প্রমুখ রয়েছেন। পেশাগত সহকর্মী বা সাহিত্যামোদী যাঁদের সাথে পত্রালাপ ছিল তাঁদের মধ্যে সৈয়দ মুর্তজা আলী, সৈয়দ আলী আহসান, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান,আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কাজী আবদুল মান্নান ও আবদুল হক অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর শিক্ষক ও শিক্ষকতুল্যের মধ্যে ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য, ড. সুকুমার সেন ও অধ্যাপক জনার্দন চক্রবর্তী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া উভয় বঙ্গের সাহিত্যামোদীদের মধ্যে ড. সুখময় মুখোপাধ্যায়, ড. দেবীপদ ভট্টাচার্য, ড. ক্ষেত্রগুপ্ত, ড.অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখক, সাহিত্যিক ও মনীষী ড. আহমদ শরীফের সঙ্গে পত্রালাপ করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য: শওকত ওসমান. কবীর চৌধূরী, সরদার ফজলুল করিম, ড. আশরাফ সিদ্দীকি, সন্জীদা খাতুন, রফিকুল ইসলাম , গোলাম মুশিদ, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ। সংকলিত পত্রগুলো অবশ্যই সময় ও কালের প্রভাবে সম্পৃক্ত এবং তা সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও দর্শনের প্রতিফলনসহ ক্ষেত্রবিশেষে গবেষক ও উৎসাহী পাঠকদের তখনকার সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পত্রলেখকের সাথে পত্রপ্রাপকের সম্পর্ক এবং ভাব বিনিময় বোঝাতে সাহায্য করবে। নির্বাচিত পত্রগুলোর মধ্যে প্রথম পত্রটি ইংরেজী ভাষায় ১৯৩৯ সালে ভারত থেকে তাঁর বাল্যবন্ধু লিখেছিলেন এবং অত্র গ্রন্থে সংকলিত ৩৮২টি পত্রের মধ্যে বেশিরভাগ পত্রই সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে , দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে অনুসন্ধানমূলক ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়াদির উপর লিখিত। উল্লেখ্য যে, সংকলিত পত্রগুলো পড়তে যেয়ে লক্ষ্য করেছি যে, তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়াও অতি সাধারণ অচেনা ব্যক্তির চিঠিও আছে। পত্র মানুষের মনের দর্পণ। পত্রের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে যেভাবে ব্যক্ত করতে পারে, অন্য কোন উপায়ে তা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান গ্রন্থটি যে কোন গবেষক যারা সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে ভাবেন বা চর্চা করেন তারা অবশ্যই উপকৃত হবেন। সংকলিত চিঠিগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত বা উপাদান পাওয়া যাবে যা তৎকালীন সমাজ ও সংস্কৃতি সমন্ধে ব্যক্তির অভিব্যক্তিকে নতুন নির্দেশনা দেবে। সংকলন ও সম্পাদনার এই দুরূহ কাজটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. নেহাল করিম। সাহিত্যের বাইরের হয়েও তিনি অত্যন্ত নিখুঁত ও পরিশ্রমসহকারে এই কষ্টসাধ্য কাজটি করে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের জ্ঞানভা-ারকে সমৃদ্ধ করেছেন। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, গ্রন্থে উল্লেখ আছে প্রকাশকাল এপ্রিল ২০১৭, কিন্ত বাজারে এসেছে নভেম্বরের মাঝামাঝি, প্রায় ছয় মাস পর। এছাড়া এই বইয়ের সবচেয়ে দুর্বল দিক হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রমলব্ধ এই গবেষণার কাজটি বাংলা একাডেমি ছাপিয়েছে সাধারণ বা ‘কর্ণফুলি’ কাগজ দিয়ে, বইয়ের অনেক পৃষ্ঠা অত্যন্ত ময়লা এবং নোংরা অথচ বাংলা একাডেমি রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশকিছু বই আরো উন্নতমানের কাগজ দিয়ে ছাপিয়েছে। আলোচ্য খন্ডটিও উন্নতমানের কাগজ দিয়ে ছাপালে গ্রন্থটির আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত। গ্রন্থটিতে কিছু মুদ্রণ প্রমাদ রয়ে গেছে, তবে তা সহজে চোখে পড়ে না। পরিশেষে, নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের গবেষকদের জন্য একটি আকর গ্রন্থ হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ আকর্ষণীয়, প্রচ্ছদটি করেছেন শিল্পী অশোক কর্মকার তবে শিল্পী খন্ড-টির সংখ্যা ড. আহমদ শরীফের মাথার পাশে উল্লেখ না করে ‘পত্রবলী’ লেখার পাশে সংখ্যাটি উল্লেখ করলে ভালো হতো। গ্রন্থটির মূল্য ৫৮০ টাকা, প্রাপ্তিস্থান বাংলা একাডেমির পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র। আমরা দ্বিতীয় খন্ড-টির অপেক্ষায় থাকলাম।
×