ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থবছরের প্রথম দুই মাস

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে তিনগুণ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে তিনগুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের শুরুতেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে ৫২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত আমদানির ব্যয়ের চেয়ে রফতানি আয় কম হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। শুধু বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধিই নয়, এ সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতিতে রয়েছে দেশ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলার। অথচ গেল অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৮১ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ছিল। সাধারণত চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোন ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। অন্যদিকে রফতানি আয় ও আমদানি ব্যয়ের পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ৫৭১ কোটি ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিবাবদ বাংলাদেশের ব্যয় হয় ৮৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে আমদানিবাবদ ব্যয় হয় ৬২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে এ সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ডলার। গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এছাড়া গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৪৭ কোটি ডলার। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৪৬ কোটি ডলার। পণ্যের পাশাপাশি সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি হয়েছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। এদিকে গেল অর্থবছরে উদ্বৃত্ত দিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও এবার বড় ঘাটতি দিয়ে তা শুরু হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর জুলাই-আগস্ট সময়ে এই ঘাটতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে ৮১ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এ সময়ে দেশে ৩২ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে নিট বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে নিট বিদেশী বিনিয়োগও বেড়েছে (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট)। এই দুই মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিট বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। গেল অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০ লাখ ডলার।
×