ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পশুহাট থেকে মহাসড়ক সর্বত্র দুর্গন্ধ ॥ নোংরা পানিতে একাকার সারাবছর

দূষণ ছড়াচ্ছে নগরবর্জ্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

দূষণ ছড়াচ্ছে নগরবর্জ্য

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভাগাড়ের নগর বর্জ্যই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজশাহী নগরবাসীর জন্য। পরিকল্পনা ছাড়াই নগরীর সিটি বাইপাস সড়ক ঘেঁষে গড়ে তোলা ভাগাড়ের কারণে এখন ওই এলাকার মানুষ বসবাস করতে পারছেন না। সেই ভাগাড় ঘেঁষেই এ অঞ্চলের সবচেয় বড় পশু হাট। হাজার হাজার পশুর কেনাবেচা চলে এখানে। তবে ভাগাড়ের দূষিত বর্জ্য গিলে ফেলেছে পুরো পশু হাট। শুধু তাই নয়, রাজশাহী সিটি বাইপাস সড়কের দুই কিলোমিটার এলাকা গ্রাস করেছে নগরবর্জ্য। সেখান থেকে বছরের পর বছর ছড়াচ্ছে দূষণ। এ অবস্থায় নগরবাসী চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সর্বত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সড়কের একপাশে রাসিকের বর্জ্য ফেলার ভাগাড় হলেও বর্জ্যে একাকার পুরো সড়ক। এমনকি পশুহাটের অফিস ঘর পর্যন্ত বর্জ্য আবর্জনায় ভর্তি হয়ে রয়েছে। হাটের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনও ভরে গেছে দূষিত বর্জ্যে। ভাগাড় থেকে পশুহাট ও মহাসড়কে উঠে এসেছে বর্জ্য। বর্জ্যে মারা গেছে কয়েকটি কুকুরও। মরে আছে কাকও। সেখানে যোগ হয়েছে বেসরকারী ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্য। আবর্জনার দূষিত গন্ধে এখন ওই এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাগাড় ছেড়ে মহাসড়কের ওপরই বর্জ্য ফেলা হয়। এ অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে। এলাকায় প্রবেশ করলেই নাকে রুমাল চেপে ধরা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর সড়কে সব সময় হাঁটু সমান কাদাপানি লেগেই থাকে। সপ্তাহে দুদিন পশুহাট বসলে সেখানে প্রবেশ করতে হয় হাঁটুসমান বর্জ্য মাড়িয়েই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি হাটের এক পাহারাদার বলেন, কোন কোন সময় এসব ক্লিনিকের মরা শিশুও ফেলে রেখে যায়। এছাড়া মরা পশুপাখি ও বর্জ্যের বিশ্রি গন্ধে এলাকা দূষিত হয়ে উঠেছে। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা তো বটেই ওই এলাকার বাসিন্দাও গন্ধে টিকতে পারছে না। জানা গেছে, নগরীর সব বর্জ্য হাটের পাশের ভাগাড়ে ফেলা হলেও উপচে চলে এসেছে সড়কে। হাটের মধ্যে কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাসিক কর্তৃপক্ষ হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নাগরিক সেবার কোন নাম নেই। মূল শহর পরিচ্ছন্ন রাখলেও শহরের মধ্যেই চরম পরিবেশ দূষণ করছে খোদ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ ‘পরিচ্ছন্ন’ হিসেবে খ্যাত হলেও রাজশাহী নগরীর বর্জ্যে এখন দূষিত হয়ে উঠেছে নগরীর সিটি বাইপাস এলাকা। আর সিটি কর্পোরেশনের অসহযোগিতায় কোটি কোটি টাকার রাজস্বের এই হাট এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে চলছে পশু কেনাবেচা। তবে রাসিক কর্মকর্তারা বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাগাড়েই পশুহাটটি আছে। কেউ সিটি হাট এলাকায় এলেই টের পাবেন পুরো হাট এখন পরিণত হয়েছে দূষিত বর্জ্যের ভাগাড়ে। এমনকি হাটের প্রবেশমুখসহ পুরো রাস্তায় রাসিকের বর্জ্যে ভরপুর। জানা গেছে, শহরে আধুনিক বর্জ্য ফেলার স্থান থাকলেও সেখান থেকে নিয়ে টনে টনে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সিটি বাইপাস সড়কে। ফলে নগরীর পাশ ঘেঁষে নির্মিত বাইপাস সড়ক আর সিটি পশুহাট এখন হয়ে উঠেছে নর্দমার পাহাড়। রাসিক কর্তৃপক্ষের দাবি ক্রেনড্রেজার মেশিন অকেজো থাকার পরও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে বর্জ্য অপসারণের। পশুহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে হাটটি ইজারা নেয়া হয়েছে। রাসিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ও অসহযোগিতায় অসহনীয় দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। বর্জ্যে দুর্গন্ধে হাটে টিকে থাকা এবং আবর্জনা মিশ্রিত কাদা-মাটিতে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মাদ মামুন (ডলার) বলেন, মূলত রাসিকের বর্জ্য ফেলা ভাগাড়ের উপরে সিটি পশুহাট। এরপরও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নগর বর্জ্য অপসারণে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে গাড়ি ভেতরে ঢুকতে পারছে না। তাই রাস্তার ওপরই গাড়ি থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রীষ্ম-বর্ষা কোনকালেই ভাগাড়ে বর্জ্য ফেলা হয় না। সব আবর্জনা ফেলা হয় সড়কের ওপর থেকেই। এ কারণে পুরো এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে মহানগরীর দূষিত বর্জ্য।
×