ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় লন্ডনে জামায়াত-বিএনপির চক্রান্ত

ঢাকায় বার্তা পৌঁছে দেয়ার পর জামায়াত নেতাদের বৈঠক ॥ লন্ডন ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকায় বার্তা পৌঁছে দেয়ার পর জামায়াত নেতাদের বৈঠক ॥ লন্ডন ষড়যন্ত্র

শংকর কুমার দে ॥ লন্ডনে বসে জামায়াত নেতার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপি নেতারা গোপন মিশন নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করছিল বলে যে খবর পাওয়া গেছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ছক কষে সরকারের পতন ঘটাতে লন্ডনে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাদের সহযোগীরা। লন্ডন থেকে ঢাকায় বার্তা পৌঁছানোর পর গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল জামায়াত নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮ জনকে পৃথক দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নং রোডের ৩ নং বাড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে সোমবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমানসহ সবাইকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিও রয়েছে; যারা পলাতক থেকে রাজধানীতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। গোয়েন্দা পুলিশ তাদের আটক করার পর পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালত থেকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, লন্ডনে বসে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপির নেতাদের গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার উদ্যোক্তা হচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। জামায়াতের এই ব্যারিস্টার নেতাই এখন গোপন বৈঠকের জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে লিয়াজোঁ করছেন। লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান গোপন বৈঠক করে সরকারের পতন ঘটাতে জামায়াত-শিবিরকে সংগঠিত হয়ে নাশকতা ও সহিংসতা ঘটানোর নির্দেশ দেন। এর পরই জামায়াতের নেতারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। রাজধানীর উত্তরায় গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে জামায়াত নেতারা কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর এলাকায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে নাশকতা চালিয়েছিল। ওই মামলায় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে লন্ডন ষড়যন্ত্রের কথা চলে আসে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধী, বিএনপি ও জামায়াতের কোন কোন নেতা এখন লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করে সরকারের পতন ঘটাতে ছক কষছে। লন্ডন থেকেই ঢাকায় সরকার পতন ঘটানোর বার্তা দেয়া হচ্ছে। জামায়াত নেতারা দেশে নৈরাজ্যকর ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে বিএনপি তাদের প্রকাশ্যে সমর্থন ও সহযোগিতা দেবে এমন আভাসও দেয়া হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতারা। আর এর প্রধান কৌশল হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে নাশকতাকে। এ বিষয়ে সরকারের কাছে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ আছে। লন্ডনে ষড়যন্ত্র ছাড়াও দুবাই এবং ব্যাংককে বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা ছাড়াও তদের সঙ্গে থাকছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিশেষ গোষ্ঠী অব্যাহত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর নেপথ্যে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে একটি রাজনৈতিক দলও। তারা ক্ষমতায় যেতে দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত করছে। অবৈধ পন্থায় সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় যেতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য নাশকতা ঘটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে জামায়াতের সঙ্গে রয়েছে জঙ্গীগোষ্ঠীও। লন্ডনে এখন যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত ও বিএনপি নেতারা একত্রিত হয়ে সরকারের পতন ঘটাতে ঢাকায় জামায়াত নেতাদের কাছে বার্তা পাঠানো হচ্ছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত-শিবির আবারও সংগঠিত হচ্ছে গোপনে এমন জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জামায়াত লন্ডনকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে যে তথ্যাদি পাওয়া গেছে সে বিষয়ে গ্রেফতারদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জামায়াতের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও দলীয় মিশন নিয়ে বিভিন্ন সময় লন্ডন ছাড়াও বিভিন্ন দেশে সফর করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮জনের পৃথক দুই মামলায় পাঁচদিন করে ১০ দিনের রিমান্ড নিয়ে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি শেখ নাজমুল আলম জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮জনকে কদমতলী থানায় দুটি পৃথক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তাদের ডিবি পুলিশও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ ছাড়াও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর আমির মোহাম্মদ শাজাহান, সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার আমির জাফর সাদেক, সেক্রেটারি জেনারেলের ব্যক্তিগত সহকারী নজরুল ইসলাম ও মোঃ সাইফুল ইসলামকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কদমতলী থানার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত নেতারা গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কদমতলী থানাধীন বিক্রমপুর গার্ডেন সিটির ৪৪২/২ পূর্ব ধোলাইপাড়ের বাসার ৭ তলায় আসামিরা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে জামায়াতের ১০ জনকে গ্রেফতারে সমর্থ হলেও অন্য আসামিরা পালিয়ে যায়। গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনসহ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, অন্তর্ঘাতমূলক কার্য সম্পাদন ও জ্বালাও-পোড়াও পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য একত্রিত হয়েছিল বলে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
×