ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কের ৩ কি.মি. খানাখন্দে ভরপুর

প্রকাশিত: ০৩:২০, ৭ অক্টোবর ২০১৭

চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কের ৩ কি.মি. খানাখন্দে ভরপুর

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা ॥ রিপিয়ারিংয়ের নামে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ হলেও চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ কমছে না। শহরের ৩ কিলোমিটার রাস্তা এখন খানাখন্দ ও কাদা-পানিতে ভরপুর। চলাচলের অনুপযোগী। প্রতিদিন এ সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে চলাচলকারী শত শত যানবাহন ও জনসাধারণের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। রাস্তা মেরামতের নামে ইট বিছিয়ে যা করা হচ্ছে তা কোন কাজেই আসছে না। একদিন যেতে না যেতেই আবার একই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। কবে নাগাদ এ অবস্থা দূর হবে তারও কোন ঠিক নেই। চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গার থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত রাস্তাটি সাদা সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে ঢালাই দেয়া হয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে রাস্তাটি ভেঙ্গে পিচকরণ করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন পথচারীরা বেশ আরাম-আয়েশেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করত। ২০১২ সালে মূল শহরের আড়াই কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত ও মাঝখানে ডিভাইডার বসানো হয়। দু’পাশে তিন ফুট করে মোট ৬ ফুট চওড়া করা হয় রাস্তাটি। এই রাস্তা প্রশস্তকরণের কিছুদিনের মধ্যে বৃদ্ধি করা অংশটুকু দেবে যায়। সেই সময় এই রাস্তা নির্মাণকারী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে চরম নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠে। তারা যেনতেনভাবে কাজ করে বিল তুলে নেয়। তারপরও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরপর থেকে ৩-৪ বছর জোড়াতালি দিয়ে সড়কে যান চলাচল ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। জেলার ৫টি আঞ্চলিক মহাসড়কসহ সড়ক ও জনপথের রয়েছে ১৪৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ৩০ ভাগ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে মেহেরপুর-ঢাকা ভায়া চুয়াডাঙ্গা রাস্তাটির জেলা শহরের আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল থেকে বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। এই রাস্তায় সর্বত্র ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টির হয়েছে। এতে সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। একদিকে যেমন যানবাহন নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক বলতে যা বোঝায় তার কোনটি নেই। কাদা-পানিতে রাস্তা একাকার থাকায়, অনেকেই অজান্তে ডুবোগর্তে পড়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। অথচ প্রতিবছর এই সড়ক রিপেয়ারিং ও মেনটেন্যান্স বাবদ প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকার সিংহভাগই কাজ না হওয়ার অভিযোগ এলাকাবাসীর। পিকআপ চালক লিটন শেঠ বলেন, প্রধান সড়কটির এমন করুণ হাল আগে কখনও হয়নি। হেঁটেও যাওয়া যায় না, আবার গাড়ি চালিয়েও যাওয়া যায় না। ২-৩ বছর ধরে শুনে আসছি রাস্তাটি নতুনভাবে তৈরি হবে। কিন্তু কোন আলামত দেখতে পাচ্ছি না। এই সড়কে প্রায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। গত দুই বছর ধরে রাস্তাটি ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় থাকলেও মেরামতের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সড়কটির বেহাল দশার কারণে ছোট ছোট যানবাহন এই পথ ব্যবহার না করে পাড়া-মহল্লার রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। সওজের কার্য সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে অধিকাংশ সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিন বড় বড় গর্তে ইট-বালু দিয়ে রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা চলছে। চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ঝিনাইদহ-মুজিবনগর ভায়া চুয়াডাঙ্গা সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১২ সালে। চুয়াডাঙ্গা অংশে ২৭.৩ কিলোমিটারের মধ্যে ২০১৪ সালে ৯ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাকি অংশে ৬৭ কোটি ৬১ লাখ ৭২ হাজার ৯৬১ টাকার ১৮.২৫ কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ জুন এই রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করা হবে। শহরের মধ্যে ২.২ কিলোমিটার হবে ৪ লেন অর্থাৎ ফুটপাথসহ ৫৪ ফুট প্রশস্ত । আর বাকি রাস্তাটি হবে ফুটপাথসহ ৩০ ফুট প্রশস্ত। রাস্তাটি নির্মাণে ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছেন আরএবি-আরসি প্রাঃ লিঃ, রানা বিল্ডার্স ও জহুরুল ইসলাম।
×