ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাম তার জমিদার

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ৭ অক্টোবর ২০১৭

নাম তার জমিদার

না আছে জমিদারী। নেই অঢেল জমি। তারপরও নাম তার জমিদার। বাবা-মায়ের দেয়া নুরুল হক মোল্লা নামটি মুছে গেছে। তামাটে রঙের এ মানুষটির মধ্য বয়স পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। চোখে-মুখে সবসময় হাসির ঝিলিক। উচ্চৈঃস্বরে ডাকাডাকি করে এক ধরনের খাবার বিক্রি করেন। পুরো কলাপাড়া শহর ছাড়াও সংলগ্ন গ্রামীণ জনপদেও বিক্রি করেন। তার ভাষায়, খাবারটির নাম ‘ঝুড়ি ভাজা’ । কাকডাকা ভোরে এই ঝুড়িভাজা তৈরি করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ভাঁজার পরে নামেন বিক্রি করতে। মোবাইলে উচ্চৈঃস্বরে গান শোনেন, আর ডাকাডাকি করে ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করেন। কলাপাড়া পৌরশহরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল হককে এখন আর জমিদার না বললে কেউ চেনে না। নিজেও জানেন না এ মানুষটি কেন তার নাম জমিদার হয়েছে। স্ত্রী শিউলি বেগমকে নিয়ে তার সংসার। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তার ভাষায়, ‘আল্লায় খুব সুখে রাখছে।’ জমিদার জানান, ২৪টি বছর ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করছেন। জিলেপির স্টাইলে চিকন করে তেলে ভাজেন। চারটি ঝুড়ি ভাঁজা একটি প্যাকেটে করে তা ১০ টাকায় বিক্রি করেন। কি পরিমাণ দৈনিক আয় ও কত টাকা বিক্রি করেন- জিজ্ঞেস করায় বলেন। কিন্তু কাগজে প্রকাশ করতে বাধা দেন। তবে এসব বিক্রি করে বাড়ির জায়গায় একটি ঘর করেছেন। জানালেন, মটর ডাল, ময়দা, বিট লবণ, সামান্য একটু খাবার সোডা লাগে তার এ খাবার সামগ্রী বানাতে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্রির বড় বাজার জমিদারের। সকাল-সন্ধ্যা প্রায় সতেরো শ’ ঝুড়িভাজা বিক্রি হয় এ মানুষটির। কোন ধারদেনা নেই। দিনভর উচ্চৈঃস্বরে গান শোনেন আর বিক্রি করেন ঝুড়িভাজা। জমিদারের ভাষায়, ‘গান অইছে মনের ক্ষুদা। আর পেটের ক্ষুদা অইছে টাকা-পয়সা।’ তার কোনটারই অভাব নেই। জমিদারের পরামর্শ, ‘একটা কিছু করা শুরু করতে অইবে। তয় মন দিয়া। তাইলেই টিইক্যা থাহা যাইবে।’ মেজবাহউদ্দিন মাননু কলাপাড়া থেকে
×