ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যারা সিম দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল সিম উদ্ধারে অভিযানে নামছে বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল সিম উদ্ধারে অভিযানে নামছে বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মোবাইল সিম উদ্ধারে বিটিআরসি অভিযান চালাবে। রোহিঙ্গাদের কাছে মোবাইল সিম বিক্রি করা টেলিযোগাযোগ আইনে বড় ধরনের অপরাধ। তারপরও এক শ্রেণীর মানুষ রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রি করে ব্যবসা করছে। যারা রোহিঙ্গাদের হাতে সিম তুলে দিচ্ছে বিটিআরসি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শীঘ্রই বিটিআরসি এ অভিযান শুরু করবে। তবে মানবিক কারণে যোগাযোগের জন্য শরণার্থী শিবিরে টেলিটকের ১৫টি বুথ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) কার্যালয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মোবাইল সিম বিক্রি নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে দমনপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা ৫ থেকে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয় কেন্দ্রে। তারা বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে। এবার টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকেও রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা সিম উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে সিম কেনার নিয়ম থাকলেও হাজার হাজার রোহিঙ্গার হাতে মোবাইল সিম রয়েছে। দেশের মানুষের সহযোগিতায় তাদের হাতে এ সিমগুলো চলে গেছে। তারা রোহিঙ্গাদের কাছে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে এমন অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। ওই সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম উপস্থিত ছিলেন। তিনি সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সরেজমিনে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মোবাইল হ্যান্ডসেট ও সিম ব্যবহার করছেন। আমরা জানি বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়া সিম এ্যাকটিভ থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন কিভাবে তারা সিম ব্যবহার করছেন সেটা খুঁজে বের করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিটিআরসি জেনেছে কিছু ব্যক্তি অর্থের লোভে তাদের নিজের নামে থাকা নিবন্ধিত সিম বিক্রি করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে। এটা কেউ করতে পারেন না। এ কাজ বড় ধরনের অপরাধ। রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা সিম শনাক্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে কোন কোন সিম এ্যাকটিভ হয়েছে, তার একটি ডাটা নেয়া হবে। কোন কোন রিটেইলার সেখানে আছেন, তাদের তালিকা নেয়া হয়েছে। আমরা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে অগ্রসর হচ্ছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশী মোবাইল সিম ব্যবহার করতে দেখা গেলেও আইনানুযায়ী বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়া এই সংযোগ তাদের পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। মংডুর গর্জনদিয়া গ্রামে বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার পর নাফ নদী পেরিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছেন। বাংলাদেশে আগে থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। এদের জঙ্গী তৎপরতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। অনিবন্ধিত সিম যদি পাওয়া যায় তাহলে অপারেটরদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারানা হালিম। মোবাইল সিম উদ্ধারে ইতোমধ্যে কোর্ট অভিযান চালাচ্ছে। যারা সিমগুলো বিক্রি করেছেন, এটি যে তাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা নিয়ে প্রচার চালানো হবে। সেই সিমে দিয়ে অপরাধ হলে দায় নিতে হবে তাকেই। তাই অন্য কেউ সিম নিবন্ধন করে রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রি করতে পারবে না। যদি তা করা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে আশ্রিত রোহিঙ্গা বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হচ্ছে। তা শেষ হলে তাদের কাছে সিম বিক্রি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা হবে। ক্যাম্পগুলোতে একটি করে বুথ স্থাপন করা হবে। টেলিটকের সিমের মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন তারা। খুবই স্বল্প খরচে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। শীঘ্রই এ সেবা শুরু করা হবে এবং সেখানে টু জি নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে টেলিটককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টেলিটক রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কয়েকটি বুথ স্থাপন করেছে। এই সেবা দেয়ার পরও বহু রোহিঙ্গার হাতে বিভিন্ন অপারেটরের সিম চলে গেছে। এখানে অপারেটরদের কোন যোগ রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। বিটিআরসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ওই সিম উদ্ধারে অভিযানে নামবে। যদি দেশের কোন নাগরিকের নামে সিম পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেলিযোগাযোগ আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল জরিমানার বিধান রয়েছে বলে বিটিআরসি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ১৫টির মতো ক্যাম্পে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। যদি আরও নতুন ক্যাম্প হয় সেখানেও বুথ বসানো হবে। রোহিঙ্গারা এসব বুথে আপাতত স্থানীয় কল করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক কল করতে পারবেন না। কেউ যদি আন্তর্জাতিক কল করার সুযোগ করে দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×