ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

মিসরের অর্থনীতি পথ বদলাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ অক্টোবর ২০১৭

মিসরের অর্থনীতি পথ বদলাচ্ছে

মিসরের রাষ্ট্র মালিকানাধীন রেল নেটওয়ার্ক হলো ৬৭০০ কিলোমিটার। এটি আফ্রিকার প্রাচীনতম। এক সময় এই রেলওয়ের সুদিন ছিল। এখন নেই। স্টেশনগুলোর অবস্থা শোচনীয়। ট্রেনগুলোও হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। টাইম টেবিলের ঠিক নেই। সম্প্রতি দুই ট্রেনে সংঘর্ষে ৪১ জন নিহত হয় যা ছিল ২০১২ সালের পর থেকে ভয়াবহতম। আর ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। শুধু গত বছরেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২শ’। দুর্ঘটনার পর পরিবহনমন্ত্রী বলেছেন, মানোন্নয়ন ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য রেলওয়েকে বেসরকারী খাতে দেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত সেটা করা হলে বোঝা যাবে সে মিসর তার অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর পথে এগোচ্ছে। ১৯৫২ সালের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আধুনিক মিসরের সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্র ব্যবসার ক্ষেত্রে সেটুকু ভূমিকা পালন করা উচিত তার চেয়ে ঢের বেশি ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্র কল-কারখানা চালিয়েছে, ব্যাংক চালিয়েছে, ইউটিলিটি এমনকি সংবাদপত্র প্রকাশনা শিল্পও চালিয়েছে। এক পর্যায়ে মিসরের অর্ধেকেরও বেশি শিল্প উৎপাদন ও ব্যাংকিং আয়ের ৯০ শতাংশ এসেছে রাষ্ট্রীয় খাত থেকে। এই সামাজিকীকৃত অর্থনীতি শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে। তবে ১৯৭০ দশক নাগাদ এই সরকারী খাতে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং অদক্ষতা প্রকট রূপ নেয়। প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত মুক্তদ্বার নীতি নিয়ে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে কিছুটা সফল হয়েছিলেন। সাদাতের উত্তরসূরি হোসনি মোবারকের সময় সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯১ সালে তার সরকার ৩১৪টি সরকারী প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীয়করণের জন্য বেছে নেয়। বেসরকারী মালিকানায় গিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান ১০ লাখ লোককে চাকরি দেয় এবং ২১৪০ কোটি ডলারেরও বেশি বার্ষিক আয় সৃষ্টি করে যা ছিল জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ। ১০ বছরের মধ্যে রাষ্ট্র অর্ধেকেরও বেশি সরকারী কলকারখানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেচে দেয়। এর মধ্যে সফট ড্রিঙ্ক কোম্পানিগুলো কোকাকোলা ও পেপসিকে এবং সিমেন্ট কোম্পানিগুলো লাফার্জ কোম্পানিকে দেয়া হয়। এগুলোতে কর্মসংস্থানের পেছনে সামান্য খরচ বাড়লেও উৎপাদন বেশ বেড়ে যায়। কিন্তু ২০১১ সালে মোবারক উৎখাত হওয়ার সময় বিরাষ্ট্রীয়করণ দুর্নীতি ও বেকারত্বের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন আহমেদ এজ। তিনি একটি সরকারী ইস্পাত কারখানা কিনে নিয়ে বাজারকে কোণঠাসা করে ফেলেন। এরপর তিনি একজন প্রভাবশালী এমপি হয়ে প্রায় মনোপলি প্রতিষ্ঠা করে বসেন। এ জাতীয় দুর্নীতি, অসাধু ব্যবসায় কারবারের অসংখ্য ঘটনা ঘটে এবং একটা কায়েমি স্বার্থ গড়ে ওঠে। ২০১১ সালের অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয়করণ পুনরায় শুরু হয়। বিরাষ্ট্রীয়করণ থেমে যায়। ২০১৭ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও সরকারের এখন নগদ অর্থের দারুণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। গত জুন মাসে সমাপ্ত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ১০.৯ শতাংশ। এই বেশিরভাগই সরকারী ঋণের সুদ পরিশোধ করতে চলে যায়। সুতরাং এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় পরিসম্পদ আবার বিক্রি করার পর্যায় এসে গেছে। সরকার দেশী ও বিদেশী তিনটি ব্যাংকে তার শেয়ারের একাদশ তেল কোম্পানি ইএনপিপিআইয়ের কাছে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ১৫ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে। সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ‘ব্যাংক দ্য কায়রে’র কিছু শেয়ারও বিক্রি করতে চায় যা থেকে ৩ বছরে ১ হাজার কোটি ডলার পাওয়া যাবে। গত বছর মিসর তার মুদ্রা ভাসমান রাখার সুযোগ করে দেয় যাতে করে আইএমএফের কাছ থেকে ১২০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যায়। মুদ্রার বিনিময় মূল্য হ্রাস পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে করে বৈদেশিক রেমিটেন্স বেশ বেড়েছে। পর্যটন শিল্পেও ধীরে ধীরে গতি ফিরে আসছে। ট্যুরিস্টের সংখ্যা গত বছরের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় এ বছর একই সময় ৫৪ শতাংশ। পর্যটন খাতে আয় লাফ মেরে ১৭০ শতাংশ বেড়েছে। এ সবই শুভ লক্ষণ। তবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এতে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। সমস্যা ধীরে ধীরে আবার ফিরে আসবে। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×