ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছিয়াশিতে মোতাহার হোসেন সুফী

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১ অক্টোবর ২০১৭

ছিয়াশিতে মোতাহার হোসেন সুফী

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক ও গবেষক মোতাহার হোসেন সুফী ৮৬ বছরে পদার্পণ করলেন আজ। তিনি ১৯৩২ সালের আজকের দিনে রংপুর শহরের মুনশীপাড়ার ‘অলিবাগ’ বাসভবনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর শহরের মুনশীপাড়া সাধারণ পাঠাগার থেকে হাতে লেখা ‘মশাল’ নামে দেয়ালপত্রিকা গল্প প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যজগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি ১৯৪৯ সালে প্রগতিশীল রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ও ছাত্রসমাজে নেতৃত্ব দেন। পঞ্চাশের দশকে গবেষণামূলক নিবন্ধ রচনার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চায় সক্রিয়ভাবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি গবেষণামূলক সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে পরিচিত করেছেন বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও অবদান, নারী জাগরণের অগ্রদূতী বেগম রোকেয়া, বাংলাদেশ ভূখ-ে পবিত্র কোরান শরীফের প্রথম মুসলিম অনুবাদক তসলিমুদ্দীন আহমদ, সাংবাদিক অগ্রণী মহমুদ হোসেন, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ কাজী মোহাম্মদ ইদরিস, ইংরেজ বিরোধী তেভাগা সংগ্রামের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কমরেড মণিকৃষ্ণ সেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম মূলত গবেষণাধর্মী। তাঁর গবেষণাসমৃদ্ধ গ্রন্থরাজির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ‘ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক।’ এই গ্রন্থটি ২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রকাশ হয় । বিগত বছর ২০১৬ সালে গ্রন্থটির চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এই গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য গবেষণাগ্রন্থ ‘বেগম রোকেয়া : জীবন ও সাহিত্য’ ১৯৮৬ সালে প্রথম প্রকাশ হয়। নারী জাগরণের অগ্রদূতী বেগম রোকেয়ার জীবন ও পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে এটি প্রথম গ্রন্থ। বেগম রোকেয়ার নারীমুক্তি সম্পর্কিত বিশিষ্ট গ্রন্থ ‘নারীবাদ ও বেগম রোকেয়া।’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর রচিত গবেষণাধর্মী গ্রন্থরাজি জীবনীগ্রন্থ পবিত্র কোরান শরীফের প্রথম মুসলিম অনুবাদক ‘তসলিমুদ্দীন আহমদ’ (১৯৯৩), স্বনামধন্য সাংবাদিক ‘কাজী মোহাম্মদ ইদরিস (১৯৮৯), ‘বাংলা সাহিত্যে রঙ্গপুরের অবদান (২০০১), ‘রঙ্গপুরের ইতিহাস’ (২০১৬) ঐতিহ্যসমৃদ্ধ প্রাচীন ভূখ- রঙ্গপুরের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস। তাঁর রচিত গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘সাংবাদিক অগ্রণী মহমুদ হোসেন’, (১৯৮৬), ইংরেজ বিরোধী তেভাগা সংগ্রামের অন্যতম নেতা ‘কমরেড মণিকৃষ্ণ সেন : জীবন ও সংগ্রাম’, ‘রঙ্গপুরের লোকসঙ্গীত, (২০১২), রঙ্গপুরের নাট্যচর্চার ইতিহাস (২০১২)। তাঁর গবেষণাধর্মী সম্পাদিত গ্রন্থ ‘সাংবাদিক অগ্রণী মহমুদ হোসেনের কবিতা’, (১৯৮৮), ‘স্মরণীয়জন’ (১৯৯০), ‘সংস্কৃতি : সংগ্রাম’ (১৯৯১), ‘সংগ্রামী জননেতা কমরেড মণিকৃষ্ণ সেন’ (১৯৯২), ‘মহাত্মা রাজা রামমোহন রায়’ (২০১০) ‘মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর’ (২০১৩), ‘পীরগঞ্জের ইতিহাস’ (২০১৭)। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে রংপুর কল্যাণ ট্রাস্ট স্বর্ণপদক, ১৯৯২ সালে ঢাকার রংপুর সাংস্কৃতিক পরিষদ কর্তৃক ‘র. সা. প পদক’, ১৯৯৪ সালে রংপুর জেলা সমিতি সাহিত্যপদক, ঢাকার স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট ১৯৯৬ সালে রোকেয়া পদক এবং ১৯৯৭ সালে ঢাকার কারমাইকেল কলেজ সাবেক ছাত্র সমিতি এবং ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ভাষাসৈনিক হিসেবে সংবর্ধিত। ১৯৯৯ সালে নাগরিক কমিটি, পীরগঞ্জ, রংপুর আয়োজিত গুণীজন সংবর্ধনা ’৯৯ অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিক সাহিত্যিক ও গবেষক হিসেবে সংবর্ধিত। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পরিচালিত সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০০০ প্রাপ্ত। গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনায় তিনি এখনও সক্রিয়। তিনি বাংলা একাডেমি ও ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির’ জীবন সদস্য। তিনি ‘অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ (১৯৭৮)’ এবং ‘রংপুর গবেষণা পরিষদ (২০০২)’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
×