ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পকে চরম মূল্য দিতে হবে ॥ কিম জং উন

প্রশান্ত মহাসাগরে ॥ হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার হুমকি

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রশান্ত মহাসাগরে ॥ হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার হুমকি

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিং ইয়ং হো বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের যে হুমকি দিয়েছেন তার জবাবে প্রশান্ত মহাসাগরে খুব শক্তিশালী পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হতে পারে। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপি। উত্তর কোরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। কিন্তু তারও কয়েক ঘণ্টা আগে সে দেশের নেতা কিম জং উন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার যে হুমকি দেন তার জবাবে এই মর্মে সতর্ক করেন যে নির্বোধ বৃদ্ধ কানে কম শোনে অথচ আস্ফালন করে বেশি। তাকে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমেই শায়েস্তা করতে হবে এবং হুমকির জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। উত্তর কোরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি সপ্তাহের শেষদিকে জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার জন্য বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। মার্কিন সামরিক হুমকির জবাবে উত্তর কোরিয়ার ভূমিকা কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে রি ইয়ং হো বলেন, আমাদের নেতা কিম জং উন কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন সে বিষয়ে আমাদের কোন ধারণা নেই। তবে প্রশান্ত মহাসাগরে সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের মাধ্যমেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির জবাব দেয়া হতে পারে। এর আগে চলতি মাসের তিন তারিখে উত্তর কোরিয়া সে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভূগর্ভে এক শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলÑ যার পরিপ্রেক্ষিতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষার প্রভাব এই অঞ্চলে আগে থেকেই তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। তার উপর জাতিসংঘের মতো বিশ্ব ফোরামে দাঁড়িয়ে দেশটিকে বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার ঘোষণা অধিবেশন স্থলে উপস্থিত অনেককে বিস্মিত করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর কোরীয় নেতা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার কোন কোন অংশকে শালীনতা বর্জিত বলা চলে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএকে দেয়া বিবৃতিতে কিম জং উন, ট্রাম্পকে বিকৃত মস্তিস্ক এক দুর্বৃত্ত বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি তাকে অপরাধী চক্রের দলনেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, লোকটি আগুন নিয়ে খেলতে ভালবাসে। কিম জং হোয়াইট হাউসে থাকা ট্রাম্পের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ট্রাম্পের তুলনা করে বলেন যে, এই ব্যক্তি এমন শক্তিধর একটি দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ার সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। সে কোন দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত করার চেয়ে নির্বোধের মতো কথাবার্তা বলে তা আরও উস্কে দেয়। যা তার আগেকার মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কখনও করেননি। উত্তর কোরীয় নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থায় দাঁড়িয়ে যেভাবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিলেনÑ অভূতপূর্ব এবং নজিরবিহীন। আসলে ট্রাম্প ভয় পেয়ে গেছেন এবং ভয়ার্ত কুকুর ঘেউ ঘেউ করে বেশি।’ কিম জং উন তার দীর্ঘ সমালোচনা শেষে বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করেছে যে, আমি যে পথ অনুসরণ করছি তা সঠিক এবং শেষ পর্যন্ত আমি এ পথেই এগিয়ে যাব।’ কিম জং উনের সমালোচনামূলক বিবৃতি প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার জাহাজ, বন্দর, তৈরি পোশাক শিল্প ও ব্যাংকিং খাতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ট্রাম্প দাবি করেন এখন থেকে চীনের ব্যাংকগুলো ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন করবে না। তবে চীন সরকারের পক্ষ থেকে তার দাবির পক্ষে সম্মতিসূচক কোন বার্তা এখনও পাওয়া যায়নি। যদি সত্যিকার অর্থে ট্রাম্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চীন-উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে তবে তা দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ফাঁস হিসেবে দেখা দেবে। কারণ দেশটির ৯০ শতাংশ অর্থাগম হয় এর বাণিজ্য খাত থেকে এবং তাকে সহায়তা করে চীনের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। তবে এটি এখনও সুস্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না যে, এ ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা। কেননা, উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের নিশ্চিত বিশ্বাস যে, তার দেশের অস্তিত্বের স্বার্থেই এই পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। আরেক খবরে জানা গেছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে তার নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিলেন তখন তার সঙ্গে লাঞ্চ করছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ এই দুটি মিত্রদেশ উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকির মুখে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় আছে এবং প্রতিবেশী দেশটির হুমকি মোকাবেলায় মার্কিন সামরিক সাহায্য প্রত্যাশা করে থাকে।
×