ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ষড়যন্ত্র চলছে ॥ সাবধানতার বিকল্প কোথায়?

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৭ আগস্ট ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ষড়যন্ত্র চলছে ॥ সাবধানতার বিকল্প কোথায়?

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। তখন কি হয়? দূরের জিনিস খুব পরিষ্কার দেখা যায়। আর কাছের মানুষকে মনে হয় ঝাপসা। আমাদের দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক জগতের দিকে তাকালে এ সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ক’দিন ধরে দেশের মানুষের পাশাপাশি আমাদেরও শরীরের টান টান অবস্থা। যে মানুষটির বয়ান ও রায় নিয়ে এই হাল তিনি আমাদের প্রধান বিচারপতি। তিনি কি বলছেন তিনিই ভাল জানেন। তাঁর পরিচয় ও অতীত এদেশের অতবড় আসনে তাঁকে আসীন হতে দেবার কথা ছিল না। কথাটা শুনতে খারাপ হলেও নির্মম সত্য। চলুন একটু পিছিয়ে যাই। বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার হত্যাকা-ের পর এদেশের সংবিধান আর সংবিধান থাকেনি। কলম দিয়ে এমনকি লাঠি দিয়ে পরিবর্তন করলেও হয়ত এত কথা বলতে হতো না। পরিবর্তিত হয়েছিল বেয়নটের খোঁচায়। সেই বেয়নেট আর বুটের তলায় থাকা জাতি সহজে গণতন্ত্র হজম করতে পারবে এমন ভাবাটা অন্যায়। তারপরও আমাদের জনতার বল আর শক্তি অসাধারণ। তারা বলতে গেলে এক খুনী আর তার মায়ের অপশাসন থেকে দেশমুক্ত করে দায়িত্ব দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে। যিনি এখন সময়ের মাপে প্রাজ্ঞ। যাঁর দূরদর্শিতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। আগে সংবিধানের কথায় আসি। যারা সংবিধান পড়েছেন তারা জানেন জিয়ার আমলে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম যোগ করে পরের লাইনে লেখা আছেÑ যে বা যারা এই বাণীর ধারক বা একে সমুন্নত রাখবেন তারাই সর্বোচ্চ পদে আসীন হবার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আমাদের প্রধান বিচারপতি কি পারেন? সেই সংবিধানকে ধীরে ধীরে সহনীয় করে শেখ হাসিনার সরকার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান নির্বিশেষে সবাইকে সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বাঙালী মুসলমানের সাহস ও শক্তির পাশাপাশি ধৈর্যকেও তিনি বাড়িয়ে তোলার কাজে ব্রতী আছেন। এখন গোল বেধেছে সুযোগ সন্ধানীদের নিয়ে। তারা সুযোগ বুঝে উদার, সুযোগ মতো সাম্প্রদায়িক। এই সাম্প্রদায়িক মানুষেরা শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে পারে না। তারা সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়তে একপায়ে খাড়া। এরা এখন বলে, তিনি নাকি হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের মদদ দিচ্ছেন। আমার পরিচিত এক বন্ধু স্থানীয় মানুষ আমাদের বাড়ি বয়ে এসে বলে গেছেন, এটা আন ফেয়ার। এটা নাকি প্রমাণ করে হিন্দু বা সংখ্যালঘুরা লেখাপড়া জানে আর মুসলমানরা জানে না। বাঙালী মুসলমানের জয়যাত্রা বা তাদের অগ্রগামিতাকে এমন অপমান করার কারণ তিনিই ভালো জানেন। তিনি লেখাপড়া জানা বাঙালী। এমন না যে, তিনি কিছু বোঝেন না। এই বোঝার মানুষগুলোও এখন বেপোরোয়া। সে পরিবেশ, সে অশান্তির দোহাই নিয়েও শেখ হাসিনার সরকার একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে তুলে এনেছে। আর সে তিনি এখন বলছেন পাকিস্তানের কথা। উদাহরণ দিচ্ছেন এমন এক দেশের যেখানে সামরিক আইন সামরিক বিচার তাদের জনগণের সব আশা পায়ে চেপে রাখে। কতবড় দুর্ভাগ্য আমাদের, শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি শান্তি কমিটির লোকও ছিলেন। আমরা যারা আমজনতা তারা অবাক হয়ে দেখি, এই মানুষও প্রধান বিচারপতি হয়ে দেশের বিচার আইনের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা করেন! বিদ্যাসাগরের বিষয়ে একটা চমৎকার গল্প মনে পড়ছে। তিনি দানবীর ছিলেন। প্রায়ই দান খয়রাত করতেন। একবার একজন এসে তাঁর কাছে বলছিল, কোন এক লোক তাঁকে গালমন্দ করছে। তিনি গায়ে মাখেননি এই অভিযোগ। লোকটি ক’দিন পর পর এসে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকল, ঐ লোকটি ধারাবাহিকভাবে নাকি গালমন্দ করে চলেছে। বিরক্ত হয়ে বিদ্যাসাগর একটি খাতা খুলে মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখলেন তারপর মুখ তুলে নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, হতেই পারে না। সে কেন আমায় গালমন্দ করবে? তখন অভিযোগকারী আশ্চর্য হয়ে জানতে চেয়েছিল, কিভাবে আপনি নিশ্চিত হলেন? তাও একটি খাতা দেখে! বিদ্যাসাগর মহাশয় তখন বলেছিলেন, এই খাতায় তাদের সবার নাম আছে যাদের আমি টাকা দিয়েছি বা সাহায্য করেছি। তার নাম তো নেই এখানে। উপকার যদি নাই করি সে কেন আমায় গালমন্দ করবে? এই হচ্ছে আমাদের জাতীয় চরিত্র। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সব জানেন। আমরা যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই, তারাই সাবধানতার কথা জানাতে চাই। কারণ কেউ বসে নেই। জামায়াত-বিএনপি, এরশাদ বা দেশী-বিদেশী চক্র সবাই যার যার মতো করে খেলছে। বাংলাদেশে এখন উন্নয়নের ধারা প্রবহমান। চীন এসেছে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে। এতে ভারত নাখোশ হতেই পারে। আবার চীন এসেছে বলে পাকিচক্র উল্লসিত হবে এটাও ধরে নিতে পারি। তাছাড়া যেখানে টাকা সেখানে মাছি ভন ভন করবেই। খুব বেশি দিনের কথা না, এদেশের একটি চক্র ওয়ান ইলেভেনের নামে পটপরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়েছিল। সেবার দেশে গিয়ে দেখি মোটরবাইকে সয়লাব যুবকদের নিয়ে নতুন বিরোধী দলের মহড়া। কোথায় সেই ফেরদৌস কোরেশী? কোথায় সেই বিরোধী দল? তারপরও খায়েশ বলে কথা! যে নাড়ুক বা যারাই নাড়ুক, কলকাঠি নড়ছে। একবার তাঁর মুখোমুখি হবার সুযোগ হয়েছিল সিডনিতে। রাগী মানুষ। শক্ত চোয়াল, কথায় কথায় বলছিলেন তিনি সবার বিচারপতি। এমনকি জামায়াতেরও। শুনে নড়েচড়ে বসেছিলাম আমরা সবাই। জানি না কার ভেতরে কি আছে। তবে এটা বুঝি আমাদের ভরসার জায়গা শেখ হাসিনা। কারণ এর পরে যারা লাইন দিয়ে আছে তারা চোরের বড় ভাই ডাকাতের দল। সংবিধান-আইন-বিচার নিয়ে কথা বলার মতো আহম্মক আমরা নই। আমরা চাই দেশে শান্তি থাকুক। জনগণের কাছে বিচার দেয়া প্রধানমন্ত্রীকে যেন কেউ জোর করে গায়ের জোরে বা পরাশক্তির পায়ে ভর দিয়ে কোন কথা বলতে না পারে। তিনি না থাকলে যারা এটাকে ছায়া পাকিস্তান বানাবে তাদের দোসর হতে চাওয়া যে অনেকেই অতীতে আঁস্তাকুড়ে গিয়েছেন। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই সংঘাত বা বিতর্কের একটা সহজ সমাধান বেরিয়ে আসবে। রাজনৈতিক নেতারা তাদের মুখের জবান সামলে কথা বলবেন। মনে রাখা দরকার কথা বা জিভ মানুষের মিত্র আবার চরমতম দুশমন। যেসব বাক্য মানুষের মনে গিয়ে লাগে বা আঘাত করে সেগুলো না বলাই মঙ্গলের। আর এগুলোর মাধ্যমে নিজেকে ছোট করা ব্যতিরেকে আজকাল আর কোন কিছু হয় না। সময়ের কাছে জমা থাকলেও বিষয়টা দুর্ভাবনার। বিশেষত যেখানে ষড়যন্ত্র চলমান। সাবধান হবার বিকল্প কোথায় আজ? [email protected]
×