ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি দামে নিম্নমানের এই যন্ত্র কেনা হয়েছে ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না মশক নিধন কর্মীরা নতুন করে আবার যন্ত্র কেনার পাঁয়তারা

দুই সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার অর্ধেক যন্ত্রই অচল

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ আগস্ট ২০১৭

দুই সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার অর্ধেক যন্ত্রই অচল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশা মারার যন্ত্রগুলো অর্ধেকই অচল। নষ্ট হওয়া এসব মেশিন মেরামত করতে যন্ত্রাংশও পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা এই যন্ত্রের বেশিরভাগ নিম্নমানের। অভিযোগ রয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বেশি দামে নিম্নমানের এই যন্ত্রগুলো কিনেছেন। ফলে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না মশক নিধনকর্মীরা। দুই সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত ১৭ জুলাই তৈরি করা দক্ষিণ সিটির ওই প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য সংস্থার ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪২টি হস্তচালিত, ৪৪৭টি ফগার ও ৫১টি হুইল ব্যারো মেশিন। ৪৪২টি হস্তচালিত মেশিনের মধ্যে ২০৮টি, ৪৪৭টি ফগার মেশিনের মধ্যে ১৮৬টি অচল ও ১৬টি অংশিক অচল এবং ৫১টি হুইল ব্যারো মেশিনের মধ্যে ১৮টি মেশিন অচল রয়েছে। সব মিলিয়ে তিন ধরনের ৯৪০টি মেশিনের মধ্যে ৪২৮টি মেশিনই অচল। অন্যদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে মশা নিধনের জন্য সংস্থাটির ৬৫৩ মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে হস্তচালিত মেশিনের সংখ্যা ৩৮৭টি, ফগার মেশিন ২৫৫টি, হুইল ব্যারো মেশিন ১০টি এবং একটি ভ্যাহিক্যাল মাউন্টেড ফগার মেশিন। এই মেশিনগুলোরও অর্ধেকের মতো বিকল রয়েছে। দুই সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের মশক নিধন কর্মীদের মাধ্যমে পরিচালিত মেশিনগুলো মেরামতের জন্য বিভিন্ন সময়ে ভা-ার বিভাগে চাহিদা দেয়া হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ভা-ার বিভাগ বলছে, বিকল যন্ত্রগুলোর যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। মেশিনগুলো সরবরাহের সঙ্গে জড়িত একজন ঠিকাদার বলেন, বিদেশী যে কোম্পানিগুলো থেকে মেশিনগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, সেসব কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি ওয়েবসাইটে কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশগুলো পাওয়া যাবে। এতে কম খরচে মেশিনগুলো সচল করা যাবে। কিন্তু সংস্থার কর্মকর্তারা বিকল মেশিনগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে আবার যন্ত্র কেনার পাঁয়তারা করছেন। কারণ নতুন করে মেশিন কিনলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া যাবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে সংস্থার স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, মেশিনগুলো ভা-ার বিভাগের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছে। আগে যেসব মেশিন ক্রয় করা হয়েছে, সেগুলো অনেক ভাল। একবার স্টার্ট করলে ৪০ মিনিটের ওপরে চলে। ওজনেও হালকা। স্প্রে কর্মীরা কাঁধে বহন করে সহজেই চলতে পারেন। কিন্তু এখনকার মেশিনগুলো ৫-৭ মিনিট পর গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ওজনেও অনেক ভারি। দামও বেশি। কিছু দূর যেতে না যেতে কর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এতে ওষুধ ও সময় দুটোই নষ্ট হচ্ছে। কর্মীরাও কাজে গতি পাচ্ছেন না। সম্প্রতি নগরজুড়ে চিকুনগুনিয়ার পাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় কোমড় বেঁধে মশা মারতে মাঠে নেমেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এ রোগকে কেন্দ্র করে সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমও জোরদার করা হয়। বাড়ানো হয়েছে বাজেট বরাদ্দও। একই সঙ্গে নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, র‌্যালি, আলোচনা সভা ও মাইকিংসহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে, যা পালিত হয়। সেই সঙ্গে খোলা হয়েছে জরুরী তথ্যকেন্দ্রও। দেয়া হচ্ছে ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধসামগ্রী। কিন্তু আসল কাজটিই করা হচ্ছে না। গত ৩ আগস্ট দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় পুরান ঢাকার সামাজিক সংগঠন অনির্বাণ যুব সংসদ আয়োজিত ‘চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই জনসচেতনতা’ শীর্ষক এক কর্মসূচী পালিত হয়। এ সময় সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ শেখ সালাহ্উদ্দীন স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে মশা নিধনের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এতে ৩-৪ জন মশক নিধনকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দেখা গেছে, বারবার চেষ্টা করেও একটি মেশিন চালু করা যাচ্ছে না। পরে ওই মেশিনটি রেখেই বাকি মেশিনগুলো দিয়ে কাজ করা হয়েছে। তাতেও ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে কর্মীদের। মেশিনগুলো চালু করার মাত্র কয়েক মিনিটের মাথায় গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ শেখ সালাহ্উদ্দীন একটি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা যান্ত্রিক জিনিস। নষ্ট তো হতেই পারে। অর্ধেকের মতো মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার মেশিন কিনব। এখনও ২৫০টির মতো মেশিন সচল রয়েছে। এগুলো দিয়ে কাজ চলছে।’
×