ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে শিশুকে নিষ্ঠুর নির্যাতন ॥ আপোসের প্রস্তাব পুলিশের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৬ আগস্ট ২০১৭

লক্ষ্মীপুরে শিশুকে নিষ্ঠুর নির্যাতন ॥ আপোসের প্রস্তাব পুলিশের

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর, ১৫ আগস্ট ॥ শিশু নির্যাতনের ঘটনা কিছুতেই থামছে না। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের কাঞ্চনপুর শিশু শাবীব মাহমুদ হিমেলও (১২) নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সামান্য ঘটনা নিয়ে শিশু হিমেলকে এসকান্দার মিয়ার বিদেশ ফেরত ফারুক হোসেন ও জাকির হোসেন দুই ভাই মিলে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেছে। আর এ ঘটনা ঘটিয়েছে হিমেলের মায়ের সামনে। ছেলেকে মারধর করার সময় মা গ্রামবাসীর সাহায্য চাইলেও প্রভাবশালী ফারুক জাকিরের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা ১০ আগস্ট। তাকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনা নিয়ে হিমেলের মা গৃহিণী সালমা বেগম রামগঞ্জ থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অভিযোগ নিয়েছে। প্রতিপক্ষের প্রভাবে অভিযোগটি তুলে নিতেও পুলিশ সালমা বেগমকে চাপ দিচ্ছে। পুলিশ সালমাকে ডেকে নিয়ে বলে দিয়ে আপোস-মীমাংসা করতে। রামগঞ্জ থানার ওসি তোতা মিয়া জানান, এটা খুব সামান্য ঘটনা আমরা হিমেলের মাকে আপোস করার জন্য বলে দিয়েছি। এ বিষয় নিয়ে আরও কথা বললে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, যা খুশি লিখতে পারেন। আপনি কত বড় সাংবাদিক হয়েছেন। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহসিনও বিষয়টি নিয়ে সালমা বেগমকে চাপ দিয়েছে আপোস করার। আর মামলা করতে হলে ২০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। অসহায় সালমা টাকা দিতে না পারায় তার ছেলেকে যারা নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করল তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করতে পেরে বুকভরা দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। স্বামী সহিদ উল্লা দুবাই থাকেন। তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু স্বামীকে জানিয়ে কি লাভ। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। বিষয়টি নিয়ে লক্ষ্মীপুরের এসপি আ স ম মাহাতাব উদ্দিনকে জানানো হলে তিনিও কোন ব্যবস্থা নেননি। এসপির কাছে হিমেলের রক্তাক্ত ছবিসহ অভিযোগের কপিও পাঠানো হয়েছে। এরপরও রামগঞ্জ থানার ওসির টনক নড়েনি। হিমেলের মা সালমা বেগম জানান, পুলিশ আসামি না ধরে শুধু আপোস করতে বলেন। আমি আপোস করতে চাই না। আমার শিশু ছেলেকে চোখের সামনে এমনভাবে নির্যাতন করেছে যা সহ্য করার মতো না। তাই থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে। কিন্তু থানা পুলিশ চালাকি করে মামলা না নিয়ে অভিযোগ নিয়েছে। আমার ছেলেকে যারা নির্যাতন করেছে আমি তাদের বিচার চাই। আমি কোন আপোস চাই না। হিমেল রামগঞ্জ উপজেলার জয়পুরা এসআরএমএস ভোকেশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। সে চলতি বছর জেএসসি পরীক্ষার্থী। দুই ভাই এর মধ্যে ছোট ভাই রুবায়েত মাহমুদ ৩য় শ্রেণীর ছাত্র। মা সালমা দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে দুবাইপ্রবাসী। আত্মীয়স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই। যারা আছেন তাদের অনেকেই ঢাকায় থাকেন। ফলে তাকে দুই ছেলেকে আগলে ধরে বাড়িতেই বসবাস করেন। পুলিশ সালমার দেয়া মামলাকে এসডি নং-৫০২ হিসেবে নিয়েছে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় বিদেশ ফেরত পাশের বাড়ির ফারুক হোসেনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। ওই দিন হিমেলের একটি কবুতর গাছের ডালে বসে ছিল কিছুতেই ‘খোপে‘ না ঢোকায় কবুতরের দিকে ঢিল ছোড়ে। মাটির ঢিলটি কবুতরের গায়ে না লেগে ঢিলটি ছিটকে গিয়ে ফারুকের গায়ে হলুদের প্যান্ডেলের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাশর্^বর্তী বাড়ির এসকান্দার মিয়ার দুই পুত্র ফারুক হোসেন ও তার ছোট ভাই জাকির হোসেন তেড়ে হিমেলকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে পিটায়। পরে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এ সময় ফারুক লাঠি দিয়ে হিমেলের মাথায় জোরে বাড়ি মারে। এতে হিমেলের মাথা ফেটে যায়। এরপর হিমেল অজ্ঞান হয়ে পড়লে ফারুক ও জাকির চলে যায়। পরে হিমেলকে স্থানীয় রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে হিমেলকে রবিবার বাড়িতে আনা হয়। এখন ফারুক ও জাকির পুলিশের কাছে করা অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। পুলিশও ফারুক-জাকিরের পক্ষেই কথা বলছে। তারা সদ্য বিদেশ থেকে আসার কারণে টাকার গরম রয়েছে। টাকার গরমের কাছে বিচারের বাণী নীরবে কাঁদছে। লক্ষ্মীপুরের এসপির কাছে হিমেলের রক্তাক্ত ছবি ও এসডির কপি পাঠানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে রামগঞ্জ থানার ওসি মোঃ তোতা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তনাধীন রয়েছে।যদি বাদী-বিবাদীকে আপোস করে দেয়া না যায় তবে মামলা হিসেবে নেয়া হবে।
×