ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত ভার্জিনিয়া

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৬ আগস্ট ২০১৭

রক্তাক্ত ভার্জিনিয়া

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এ ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্বাচনের পর কমপক্ষে ২০০ বর্ণবাদী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। বর্ণবাদী সংঘর্ষের তালিকায় শনিবার যুক্ত হলো আরেকটি ঘটনা। এর ভেতর দিয়ে নতুন করে আগ্রাসী বর্ণবাদী সহিংসতার দর্প প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের মনোজগতের পক্ষপাতমূলক অবস্থান সম্পর্কেও ইঙ্গিত মিলেছে। বর্ণবাদীরা ভাবতে শুরু করেছে যে, তারা বিরোধীদের ওপর হামলা চালাবে; কিন্তু রাষ্ট্র তাদের বাধা দেবে নাÑ এ দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশই বর্তমানে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের শার্লোটসভিলে গত শনিবার ক্লু ক্লাস্ক ক্লান (কেকেকে) ও অন্যান্য বর্ণবাদী গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রক্তপাতের ঘটনার নিন্দা করলেও শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের কোন সমালোচনা না করায় এখন নিজেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। শার্লোটসভিল শহরে জরুরী অবস্থা জারির পর বর্ণবাদীদের সক্রিয়তার কৌশল বদলে গিয়ে মার্কিন সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সাধারণ নাগরিকের ওপর কী ধরনের হুমকি নেমে আসে সেটির পর্যবেক্ষণই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাস প্রথার কঠোর সমর্থক ও মার্কিন গৃহযুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি জেনারেল রবার্ট লির একটি মূর্তি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ বর্ণবাদী সমাবেশের আয়োজনে সক্ষম হয় শ্বেতাঙ্গবাদী সংগঠনটি। বর্ণবাদের এই আস্ফালনের প্রতিবাদে মানুষ জড়ো হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। শ্বেতাঙ্গ মার্কিন বর্ণবাদী সংগঠন ক্লু ক্লাস্ক ক্লান। এই সংগঠনের কাজ হলো শুধু কালো মানুষকে হত্যা করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস প্রথা থাকবে কি থাকবে না মূলত তা নিয়েই ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি মার্কিন ফেডারেল সরকারের সঙ্গে দক্ষিণের ১১টি অঙ্গরাজ্যের তীব্র সংঘাত চলে। এই অধ্যায়টি মার্কিন ইতিহাসে ‘আমেরিকান সিভিল ওয়ার’ নামে পরিচিত। গৃহযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার দেয়া হয়, যে অধিকার থেকে আগে তারা বঞ্চিত ছিল। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার দক্ষিণে ক্লু ক্লাস্ক ক্লান নামে একটি গুপ্ত সংগঠন গড়ে ওঠে, যে সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীদের আধিপত্য বজায় রাখা। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটলেও আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের অবসান ঘটেনি। কথিত পশ্চিমা সভ্যতা সাম্য, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের বুলি আওড়াতে অভ্যস্ত হলেও সেখানেও বর্ণবাদ ও বর্ণবিদ্বেষ ক্রমেই বাড়ছে। আর সব ধরনের লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে এই কথিত পশ্চিমা সভ্যতার ধ্বজাধারীরাই মধ্যপ্রাচ্যে জাতিগত বিদ্বেষের বিষবৃক্ষ হিসেবে গড়ে তুলেছে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলকে। পাশ্চাত্যে মুসলমান ও কালো বর্ণের বা অশ্বেতাঙ্গ নাগরিকরা প্রায়ই নিহত বা নাজেহাল হচ্ছে বর্ণবাদী শাসকগোষ্ঠী, শ্বেতাঙ্গ পুলিশ বা ইসলাম-বিদ্বেষী উগ্র ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর সমর্থকদের হাতে। এমন বাস্তবতায় ভার্জিনিয়ায় সংঘটিত সংঘর্ষ বিশ্ববাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। ওই ঘটনার নিন্দা প্রকাশই তাই যথেষ্ট নয়, আধুনিক বিশ্বে মানবজাতির ক্রমাগ্রসরতার কালে এ ধরনের বর্বর কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা এবং তাদের প্রতিহত করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই।
×