ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতির জনককে জানুন

দেড় হাজার বইয়ে বঙ্গবন্ধু, স্বতন্ত্র উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ আগস্ট ২০১৭

দেড় হাজার বইয়ে বঙ্গবন্ধু, স্বতন্ত্র উপস্থাপনা

মোরসালিন মিজান ॥ এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান...। শেখ মুজিবকে ভোলেনি বাঙালী। হায়েনার দল পিতাকে, হ্যাঁ, হত্যা করেছিল। জাগ্রত জনতার হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। বরং যত দিন যাচ্ছে আরও উজ্জ্বল, আরও প্রাসঙ্গিক এবং আরও আরও উদ্ভাসিত হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর জীবন ও কর্ম নিয়ে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। দুর্লভ তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে লেখা হচ্ছে নতুন নতুন বই। স্মৃতিকথা ছড়া কবিতা গল্প উপন্যাস প্রকাশিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে মুজিবকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা অনেক। এসব বই থেকেই দেড় হাজার বই খুঁজে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। ‘জাতির জনককে জানুন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালা চলবে শোকের মাসের পুরোটাজুড়ে। বই বিক্রি এবং প্রদর্শনী ছাড়াও কথা কবিতাসহ নানা আয়োজনে তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধুকে। আজিজ সুপার মার্কেটের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। বিশাল জায়গা এখানে। বই আর বই দিয়ে সুন্দর সাজানো। দেশী বিদেশী প্রকাশনা। বিপুল সংগ্রহ। জাতির জনককে নিয়ে লেখা বই সারাবছরই থাকে বটে। এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পাওয়া যাচ্ছে। যেসব বই ছিল না, প্রদর্শনী উপলক্ষে সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলোও। তার পর স্বতন্ত্র উপস্থাপনা দেয়া হয়েছে। বুকশপটির ভেতরে প্রবেশ করে বাম দিকে চলে গেলে যে দেয়াল, তার প্রায় পুরোটাজুড়ে বঙ্গবন্ধু ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর লেখা বই। দেয়ালসংলগ্ন অঙ্গনটিকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিয়ে চমৎকার সাজানো হয়েছে। একাধিক শোকেস ও ছোট ছোট টেবিলে বই ছড়ানো। অধিকাংশ প্রচ্ছদে মুজিবের প্রতিকৃতি। তবে বিষয় বৈচিত্র্য দেখে অবাক হয়ে যেতে হয়। মুজিবের পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম, কারাভোগ, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ গঠন ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিচারের নানা দিক তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। অনেক বইয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য। তার রাজনীতির স্বরূপ সন্ধানের চেষ্টা। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে আশরাফ হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনীতি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট’ বইটি। শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার যাচ্ছে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা ও বঙ্গবন্ধু’ বইটিতে। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের ওপর লেখা বইগুলোর রক্ত লাল প্রচ্ছদ। মৌলিক ও সম্পানা গ্রন্থে কালো রাতের কথা বলার চেষ্টা হয়েছে। এসব বইয়ের কয়েকটি হাতের কাছেই ছিল। এই যেমনÑ ১৫ আগস্টের ১০০ মিনিট, শোকগাঁথা ১৫ আগস্ট এবং ফিরে দেখা ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও রায়ের ওপর আছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। একটির শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়।’ ৭ মার্চের ভাষণের ওপর লেখা বইগুলোর মধ্যে আলাদা করে বলা যায় ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ॥ ইতিহাস ও তত্ত্ব’ বইটির কথা। আবদুল ওয়াহাব সম্পাদিত বইটি প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। এতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ। ছড়া কবিতা গল্প উপন্যাসের ভাষায়ও প্রকাশ করা হয়েছে শেখ মুজিবকে। সব বই একত্র করলে জাতির জনকের অনেকটাই জানা হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের ওপর বই খুঁজছেন? প্রদর্শনীতে, আশা করা যায়, পেয়ে যাবেন। তবে মাঝে মাঝে না পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আমিনুর রহমান নামের এক পাঠক বললেন, বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজ নামচা’ এখানে পাননি তিনি। ‘অসমাপ্ত আত্ম জীবনি’র কপিও প্রদর্শনী ঘুরে না পাওয়ার কথা জানান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল। প্রশ্ন তুলে বলেন, এমন মৌলিক একটি বই ছাড়া প্রদর্শনী হয়? পাঠকের প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় বুকশপের কর্মকর্তা সঞ্জিব রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের লেখা দুটি গ্রন্থ নিয়েই পাঠকের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা।’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনেক হলেও, সে অনুযায়ী সাপ্লাই দিতে পারছে না বাংলা একাডেমি। কিছুদিন আগে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র ১০০ কপি করে বই পেয়েছে। পরে একাডেমি সংখ্যাটি কমিয়ে ৫০ করে দেয়। বর্তমানে দিচ্ছে মাত্র ৩০ কপি। সংগ্রহে না থাকায় গত দুই দিন ‘কারাগারের রোজনামচা’ চেয়ে পাঠক ফিরে গেছেন বলে জানান তিনি। প্রায় একই অবস্থা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউপিএলের। প্রতিষ্ঠানটি থেকে আসা ‘অসমাপ্ত আত্ম জীবনী’র চাহিদা আছে আগের মতোই। কিন্তু সাপ্লাই সে তুলনায় অনেক কম। বইগুলো বেশি পরিমাণে ছাপার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে, বইয়ের প্রদর্শনী ছাড়াও এখানে চলছে শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা। মাসের প্রথম দিন কবিতার ভাষায় জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। খ্যাতিমান বাচিক শিল্পীরা পছন্দের কবিতা থেকে তুলে আনেন বঙ্গবন্ধুকে। আগামী দিনগুলোতেও থাকছে বই নিয়ে আলোচনাসহ নানা আয়োজন। এভাবে চলবে আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত।
×