ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট বিনিয়োগ ৫২ হাজার কোটি টাকা

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৭৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২ আগস্ট ২০১৭

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৭৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম থাকায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৭৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বা ৪০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্তির কারণে আসল পরিশোধ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর সুদ বা মুনাফা শোধ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৮১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিট বিনিয়োগ এসেছিল গত জানুয়ারিতে। ওই মাসে নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। তুলনামূলক বেশি মুনাফা পাওয়াই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের এই উল্লম্ফনের প্রধান কারণ মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। তা ছাড়া নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাওয়াটাও একটি বড় কারণ বলে তাঁরা মনে করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, মূলত ব্যাংকের আমানতের সুদহার কমে যাওয়ার কারণেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে। পুঁজিবাজার যদি স্থিতিশীল হয় তবে হয়তো সেখানে কিছু বিনিয়োগ যাবে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ায় সামাজিক কিছু সুবিধা থাকলেও সরকারের সুদ পরিশোধজনিত ব্যয় চাপ বাড়ে বলেও উল্লেখ করেন অর্থনীতির এই গবেষক। তা ছাড়া ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট ১৭ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয় ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৭ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে বিক্রি হয় ১৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। সুদ-আসল শোধ করা হয় ১৮ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। নিট বিক্রি ছিল ৪৭৯ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট বিক্রি হয় ২৩ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। শোধ করা হয় ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিক্রি হয় ২৪ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয় ১২ হাজার ৬০২ টাকা। নিট বিক্রি ছিল ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়। গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয় ১৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। নিট বিক্রি দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট বিক্রি আরও বেড়ে ৫৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। শোধ করা হয় ২০ হাজার ২৩ কোটি টাকা। নিট বিক্রি ছিল ৩৩ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। দেশে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্থায়ী আমানত রাখলে ব্যাংকভেদে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা সঞ্চয়পত্রের সুদের তুলনায় অনেক কম। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফা গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর পরও এর প্রতিটি স্কিমের মুনাফার হার প্রায় ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১.৭৬ শতাংশ এবং ৩ মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে সর্বনিম্ন ১১.০৪ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বেশি থাকায় স্বল্প আয়ের লোকজন ও অবসরে যাওয়া বৃদ্ধরা এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছে। সেই দিক থেকে সুদব্যয় বাড়লেও এটা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখানে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সীমা সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশী-বিদেশী উভয় উৎস থেকেই ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটায় সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে আগে বেশি ঋণ আসত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। এখন বেশি ঋণ আসছে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের মধ্যে রয়েছে এই সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য কিছু বন্ড। ২০১২-১৩ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ৭৭৩ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ আসায় পরবর্তী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু পরের অর্থবছর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উল্লম্ফন দেখা দেয়।
×