ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদন এখন ঘরবন্দী

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২২ জুলাই ২০১৭

বিনোদন এখন ঘরবন্দী

এই তো সেদিনের কথা। সেদিনের কথা মনে হলেও তা প্রায় এক যুগ তো হবেই। যখন সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল সিনেমা। ভাল সিনেমা হলে আসলে ৬০-৭০ মাইল দূরে গ্রাম থেকে বিছানাপত্র, ভাত রাঁধার হাঁড়ি-পাতিল বেঁধে নিয়ে গরু গাড়িতে চড়ে এসে সিনেমা দেখত দর্শকরা। জেলায় উপজেলায় সিনেমা হলেরও অভাব ছিল না। বিকেল ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মানুষের হৈ-হুল্লোড় আনন্দ-উৎসব ছিল এসব সিনেমা হলকেন্দ্রিক। সিনেমা হলসহ শহর-বন্দরে সিনেমা নিয়ে মানুষের আনন্দের সীমা ছিল না। কোন্ হলে কোন্ সিনেমা চলছে, নায়ক-নায়িকা কে? ভিলেন জাম্বু , আহমেদ শরীফ, খলিল আছে কিনা? হাসমত, সাইফুদ্দিন, টেলি সামাদ আছে কিনা, দর্শকদের এসব পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রী নাম যেন মুখস্থ। দর্শকদের একেক জনের একেকজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী পছন্দের। আজিম- সুজাতা, রাজ্জাক-কবরী, শাবানা, ববিতা এ ধরনের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনীত ছবিগুলোর কদর রয়েছে এখনও। পরবর্তীতে আরও জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী নানা ধরনের ছবিতে অভিনয় করে সোনালি পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছেন। দর্শকের ভিড়ে দিনে-রাতে সিনেমা হল সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়ত। এখন আর সিনেমা হলে দর্শকরা যায় না বললেই চলে। ডিজিটাল যুগে এসে ঘরে ঘরে টিভি হওয়ার কারণে সিনেমা হলগুলো দর্শকবিমুখ হয়ে পড়েছে। মানুষ আর হলে গিয়ে ভিড় করে না। ঘরে বসে দেশী-বিদেশী সিনেমা, নাটক, সিরিয়াল দেখেই চিত্ত বিনোদন করে। এ ছাড়া আগে যেসব সামাজিক ছবি তৈরি হতো, ছেলেমেয়েসহ সপরিবারে হলে বসে উপভোগ করত সিনেমা। পরবর্তীতে সে ধরনের ছবি আর তেমনটা তৈরি হতো না। এসব কারণে পারিবারিকভাবে আর দর্শকরা সিনেমা হলে ভিড় কমে যেতে থাকে। ঘরে ঘরে টিভি হওয়ার কারণে মানুষের বিনোদনও ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। নওগাঁ জেলায় এক যুগ আগেও সিনেমা হল ছিল ২২টি। দর্শক চাপে হলগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকত না। এখন গোটা জেলায় ৫টি হল চালু আছে। বাকিগুলো ভেঙ্গে মার্কেট, প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বয়লার চাতাল, গোডাউন, আবার কোন কোনটা অব্যহৃত অবস্থায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। নওগাঁ জেলা সদরে সিনেমা হল ছিল ৩টি। তাজ সিনেমা হল, মুক্তি সিনেমা হল এবং রুবি সিনেমা হল। বর্তমানে চালু রয়েছে শুধু তাজ সিনেমা হল। এই হলে চলছে এখন ‘বস-২’ সিনেমা। দর্শকদের সেই আগের মতো ভিড় নেই। ৭২/৭৩ এ এই হলে টিকেটের সর্ব নিম্ন মূল্য ছিল ৯ আনা। এখন সর্বনি¤œ মূল্য হলো ৪০ টাকা। মুক্তি সিনেমা চলত করোনেশন হল সোসাইটি ভাড়া নিয়ে। বর্তমানে সেই হলটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। রুবি সিনেমা হলের জায়গা-জমি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ইত্যাদি। এ ছাড়া গত এক যুগ আগে জেলার আত্রাইয়ে ছিল, শাপলা সিনেমা হল, বদলগাছীতে ছিল, শাহীন সিনেমা হল, মহাদেবপুরে ছিল বুলবুল টকিজ ও আত্রাই সিনেমা হল, সাপাহারে ছিল নসিব সিনেমা হল, উল্লাস সিনেমা হল ও আশা সিনেমা হল, ধামইরহাটে ছিল, মল্লিকা সিনেমা হল, ¯িœগ্ধা সিনেমা হল ও পারভীন সিনেমা হল, পতœীতলায় ছিল, বিনোদন সিনেমা হল, রংধনু সিনেমা হল ও রাজমনি সিনেমা হল, পোরশা উপজেলায় মিতালী সিনেমা হল, রজনীগন্ধা সিনেমা হল ও তকদির সিনেমা হল, মান্দায় চলন্তিকা সিনেমা হল, ফাইভ স্টার সিনেমা হল ও আশা সিনেমা হল এবং নিয়ামতপুরে পালকি সিনেমা হল। কিন্তু এর মধ্যে বর্তমানে গোটা জেলায় চালু রয়েছে, নওগাঁ সদরে তাজ সিনেমা হল, মহাদেবপুরে বুলবুল টকিজ সিনেমা হল, পতœীতলায় রংধনু সিনেমা হল ও বিনোদন সিনেমা হল এবং সাপাহারে নসিব সিনেমা হল। জেলায় এই ৫টি সিনেমা হলা চালু থাকলেও এগুলোর প্রান যেন নিভু নিভু অবস্থা। ভাল মানের সিনেমা তৈরি না হওয়ায় এবং ঘরে ঘরে টিভিতে সিনেমা, নাটকসহ নানা বিনোদন ব্যবস্থার কারণে সিনেমা হলগুলো আজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×