ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ জুলাই ২০১৭

সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি

বিদেশী কোন ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখা মানেই মানি লন্ডারিং বা টাকা পাচার নয়। তবে বিধিবহির্ভূতভাবে অর্জিত কালো টাকা রাখার জন্য বিশ্বের বহু দেশের নাগরিককে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক বেছে নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সুইজারল্যান্ডের সংবিধান এবং ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। সুইস ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা আছে, গোপনীয়তার অধিকার সুইস আইন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং ফেডারেল সংবিধান দ্বারা তা সুরক্ষিত। অবশ্য কোন অপরাধের ক্ষেত্রে এই সুরক্ষা কাজ করবে না। অর্থাৎ সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোন অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় তাহলে সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশে কোন বাধা নেই। অর্থ পাচার রোধে সরকারের যথেষ্ট পদক্ষেপ না থাকার ফলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুইস ব্যাংকগুলোতে যেসব বাংলাদেশী অর্থ জমা রেখেছেন বাংলাদেশ সরকার চাইলেও তাদের পরিচয় জানতে পারছে না। বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমেই সাধারণত অর্থ পাচার হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে কিভাবে অর্থ পাচার হয়ে থাকে তা জানতে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এরপরই অর্থ পাচার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তার নীতিমালা করা হবে। এটা একটা জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। আশা করা যায় নীতিমালা হলেই সরকার পুরো উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারবে। তবে নীতিমালা হওয়ার আগেই সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তথ্য বিনিময় চুক্তি করা হলে অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার এক ধাপ এগিয়ে থাকবে। বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেশ থেকে অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তথ্য বিনিময় চুক্তি করা হতে পারে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা বাড়া না বাড়া নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে তুমুল বিতর্কের পর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ৩৮টি দেশের তথ্য বিনিময় চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় আগামী বছর থেকে ওই দেশগুলো সুইস ব্যাংকগুলোতে তাদের নাগরিকদের লেনদেনের যাবতীয় তথ্য পাবে। আশা করা যায় বাংলাদেশও একই সময় থেকে তথ্য সংগ্রহে সমর্থ হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের টাকা রাখার তথ্য চেয়ে গত কয়েক বছরে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে এ ধরনের কোন চুক্তি না থাকায় সংস্থাটি কোন তথ্য দিতে অপারগ থাকে। সুইজারল্যান্ডের ফিন্যান্সসিয়াল মার্কেট সুপারভাইজার অথরিটি এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে কোন ধরনের চুক্তি ছাড়া দেশটি থেকে কোন ধরনের তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। চুক্তির আওতায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে পাচার হওয়া অর্থের তথ্য দিতে সম্মত হয়েছে সুইস ব্যাংক। এ বিষয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারের সঙ্গে চার বছরের একটি চুক্তি করেছে ভারত। বাংলাদেশ ফিন্যান্সসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং সুইজারল্যান্ডের ফিন্যান্সসিয়াল ইউনিট এগমন গ্রুপের সদস্য। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন (ইএনসিএসি) স্বাক্ষরকারী দেশ। ফলে এই দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা ও মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি স্বাক্ষর হলে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমরা আশা করতে পারি। একই সঙ্গে তথ্য বিনিময় চুক্তিও গুরুত্বপূর্ণ। এখন যত দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন হয় ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
×