ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৪ জুলাই ২০১৭

দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা

তেইশ চব্বিশ বছর ধরে সযতেœ রেখে দেয়া রুমানার লেখা সবগুলো চিঠি পড়া কখন শেষ হয়ে গেছে টের পায় না হাসান। অনেকটা ঘোরের মধ্যে রয়ে যায় সে। রুমানা দেখতে কেমন, এখনও সে জানে না। আজও তার মুখোমুখি হয়নি সে। রুমানার কোনো ছবিও দেখেনি সে। কল্পনায় মনের পর্দায় শুধু এঁকেছে সেই মেয়েটির ছবি। এখন রুমানারও বয়স বেড়েছে। এই মাঝ বয়সে পৌঁছে তার মনে অনেক পরিবর্তন হলেও এখনও সে হাসানকে ঠিক মনে রেখেছে। এখনও তাকে খুব কাছের একজন মানুষ মনে করে। এতোদিন পর টেলিফোন নম্বর যোগাড় করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রুমানা তার জীবনে ঘটে যাওয়া আরও অনেক কথা তাকে জানাতে চায়। তার সঙ্গে পত্র যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রুমানার জীবনের আর কোনো কথাই জানে না হাসান। তখন যদি সে নিজে তৎপর হতো, ঢাকায় এসে রুমানার কথামতো দেখা করতো তার না বলা মনের সব কথা জানার চেষ্টা করতো তাহলে তাদের জীবনের ছকটা হয়তো অন্যরকম হতো। দুই ভুবনের বাসিন্দা না হয়ে এক ভুবনে হয়তো তাদের বসবাস হতো আজ। আজকের এই পরিণতির জন্য নিজেকে দায়ী ভেবে অনুশোচনায় ভরে যায় হাসানের মন। নিজেকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায় আর ধিক্কার দিতে থাকে। সারাটা রাত অস্থিরতা তাড়া করে ফেরে। হাসান ঘুমুতে চেষ্টা করে অনেক। কিন্তু দু’চোখে ঘুম আসতে চায় না। রুমানার শেষের দিককার চিঠিগুলোর কথা বারবার মনের মধ্যে তোলপাড় করতে থাকে। রুমানা তাকে একান্ত কিছু কথা বলার জন্য শুধু ছটফট করছিল শেষ চিঠিটিতে। কিন্তু কীভাবে বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। চিঠিতেতো সবকিছু খুলে বলা যায় না। তখন যদি হাসান ঢাকায় রুমানার কাছে এসে সরাসরি তার সঙ্গে দেখা করতো, তার মনের একান্ত কথাগুলো জানার চেষ্টা করতো তাহলে দু’জনের জীবনের গল্প হয়তো অন্যরকম হয়ে যেতো। রুমানা এখন কী করছে কে জানে। খুব কী ব্যস্ত? হাসান ভাবতে থাকে। এখন যদি বাসায় ওর হাসব্যান্ড থাকে, তাহলে ফোন করলে মন খুলে কথা বলতে পারবে না সে। রুমানার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেকক্ষণ ধরে মনটা উশখুশ করছে। অনেকক্ষণ জোর করে নিজেকে দমিয়ে রাখলেও শেষ পর্যন্ত আর পারে না। ফোন করে হাসান। ‘তোমার কথা জানতে মনটা উদগ্রীব হয়ে আছে, সেদিন তো কিছুই খুলে বললে না তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রেখে দিলে-’ ‘তোমার কথা বলো হাসান, তোমার বউ বাচ্চার কথা বলো, তোমার বউ দেখতে নিশ্চয়ই বেশ সুন্দরী’? ‘আমার চোখে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী এক কাক্সিক্ষত নারী মনে হয়, আমি খুব বড় লোক নই তবে চমৎকার বউ পেয়েছি, ছেলেমেয়ে দুটোই বেশ, চাকরিটাও মোটামুটি’। মনের চাহিদা মেটাতে টুকটাক লেখালেখি করছি। সব মিলিয়ে আছি একরকম। ‘ওহ ইউ আর এ হ্যাপি ম্যান উইথ হ্যাপি লাইফ এন্ড ফ্যামিলি’। ‘তুমি কী সুখী নও, স্বামী সন্তান নিয়ে’? প্রশ্ন করে হাসান। ‘ইয়েস, আই এ্যাম অলসো হ্যাপি বাট মাই পোস্ট লাইফ ওয়াজ নট হ্যাপি। ‘আমাকে অনেক দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে, প্রতারণা আর বঞ্চনার শিকার হয়েছি আমি। তোমার চাকরি হয়ে যাবার পর তোমাকে কতো লিখলাম ঢাকা আসতে, আমি ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েছিলাম তখন তাই তো তোমাকে পাশে পেতে চেয়েছিলাম, তুমি তো আমার ডাকে তখন সাড়া দিলে না, তুমি কি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলে তখন, আমার এতো চিঠি লেখার পরেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিলে তুমি, আচ্ছা, তুমি তুমি তো একটিবার ঢাকায় এসে, আমার সঙ্গে দেখা করতে পারতে, আমার মনের গভীরে জমে থাকা কথাগুলো শুনতে পারতে, বলতে বলতে কেমন যেন হয়ে যায় রুমানার। হাসান তার কথার জবাবে কিছু বলতে পারে না । তেইশ-চব্বিশ বছর আগে তার অদ্ভুত নীরবতার কারণে রুমানার জীবনের ছকটাই পাল্টে গেছে। এটা ভালোভাবে উপলব্ধি করে সে। অপরাধবোধের ছায়া তার মনটাকে হীনম্মন্যতায় ঢেকে দেয়। রুমানার কথায় কোনো জবাব দিতে পারে না সে। ও প্রান্ত রুমানা আবার বলতে শুরু করে, ‘এ জন্যে তোমাকে আমি দোষ দিই না। আমাদের ভাগ্যে তেমন লেখা ছিল, হয়ত তোমার কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল যা অতিক্রম করে আসা সম্ভব হয়নি সেদিন তোমার পক্ষে। কিন্তু জীবন তো কারো থেমে থাকেনি। আমার জীবন, তোমার জীবন স্বাভাবিক নিয়মে এগিয়ে গেছে। জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে আজ আমি পৌঁছেছি যেখানে সেটা আমি কল্পনা করিনি তখন। কিন্তু বাস্তবতাই আজ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, বাস্তবতাই মেনে না নিয়ে উপায় কী বলো- আমি এখন আমার জীবন নিয়ে সুখী। কয়েকদিন পর অনেক চেষ্টার পর একসময় মোবাইলে রুমানাকে পাওয়া যায়, হাসানের অস্থিরতা টের পায় সে। ‘অবশেষে তোমাকে পাওয়া গেল, কি করেছিলে এতোক্ষণ, কোন কাজে ব্যস্ত ছিলে যে মোবাইলে ফোনটা বন্ধ রেখেছ? ‘সাঁতার কাটছিলাম, পানিতে ডুবে ছিলাম ‘এতোক্ষণ, ‘তার মানে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে হাসান। ‘মানে আবার কী? সাঁতার কেটেছিলাম ঢাকা ক্লাবের সুইমিং পুলে। আমি এখানে সুইমিং ক্লাবের মেম্বার। সপ্তাহে দু‘দিন সাঁতার কাটতে আসি। সাঁতারটা খুব ভালো একটা এক্সারসাইজ। আমি বেশ উপকার পাচ্ছি। এই মাত্র সাঁতার শেষে ভেজা কাপড় বদলে গাড়িতে চড়ে বসেছি, স্টার্ট দেবো। এখনই মোবাইল অন করলাম, আর দেখি, তোমার কল কী ব্যাপার, আমার জন্য খুব অস্থির হয়ে উঠছে মনে হচ্ছে।’ ‘অস্থির নয়, তবে তোমার সঙ্গে কথা বলতে মন চাইছিলো অনেকবার ট্রাই করেছি, কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ থাকায় বারবার ট্রাই করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম। তুমি অনেক বদলে গেছ বুঝতে পারছি, নিজে গাড়ি ড্রাইভ কর, সাঁতার কাটতে ঢাকা ক্লাবে প্রায় আসা হয় তোমার। এখন তুমি ঢাকা ক্লাব থেকে নিশ্চয়ই বাসায় ফিরছো, খুব কী তাড়া আছে, আজ আমরা কী দেখা করতে পারি না? ‘ওহ, তুমি ঠিক ছেলেমানুষ রয়ে গেছ আগের মতোই, আমি সেই কখন বাসা থেকে বেরিয়েছি। ছেলেটা একা রয়েছে বাসায়, ওর বাবার মানে আমার হাসব্যান্ডেরও ঘরে ফেরার সময় হয়ে গেছে। এখন আমার ঘরে ফেরাটা জরুরী, তুমি কেন বুঝছো না। আমরা দু‘জন এর মধ্যে একটা সময় ঠিক করে দেখা করবো, কথা বলবো অনেকটা সময় ধরে। তোমাকে এ জন্য আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে, ডোন্ট ওরি, মিস্টার হাসান, এবার তুমি অফিসের কাজে মন দাও। আমি এবার বাসার দিকে রওনা দিই তাহলে। রুমানা অনেক বদলে গেছে, আগের রুমানার সঙ্গে এখনকার রুমানাকে মেলাতে গিয়ে বারবার হোঁচট খায় হাসান। রুমানা নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ঢাকা ক্লাবে রেগুলার সাঁতার কাটতে আসে। বডি ফিট রাখতে নানা কসরত করে। ফোনটা রেখে ভাবতে ভাবতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায় হাসান। সন্ধেয় রিকশায় বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ মোবাইলটা বেজে ওঠে। নাহ, কারও কল নয়। এসএমএস এসেছে। রুমানার এসএমএস দেখে হাসানের মনটা পুলকিত হয়। ‘আমার বর্তমান অবস্থা দেখে নিশ্চই খুব অবাক হচ্ছো। হ্যাঁ, আমি প্রায়ই ঢাকা ক্লাবে যাই। ওখানে সাঁতার কাটতে যাই। এছাড়া নানা পার্টি থাকে, ওখানে আমাকে হাসব্যান্ডের সাথে যেতে হয়। আমি সেই রুমানা যাকে তুমি চিনতে, সে কতোটা বদলে গেছে গত তেইশ চব্বিশ বছরে ভেবে দেখেছ’। রিকশাটা মৌচাকের কাছে এসে লম্বা জ্যামে পড়ে যায়। রিকশায় বসে রুমানার কথা ভাবতে থাকে হাসান। গত কয়েকদিনে মোবাইলে ওর পাঠানো এসএমএস গুলো বের করে পড়তে থাকে সে। একটি এসএমএস এ রুমানা লিখেছে। ‘অতীতের দিকে ফিরে তাকালেই কেবলই তোমার কথা মনে পড়ে। সত্যি, আমার অতীত জীবনের চমৎকার কিছু ব্যাপার তোমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সেটা আমি ভুলতে পারবো না কোনোভাবেই। আমার তরুণী বেলার সেই সময়গুলো তুমি রাঙ্গিয়ে দিয়েছিলে-নানা রঙ্গে তোমার লেখা চিঠিগুলোর মাধ্যমে। আমি আমার মনের সব আবেগ অনুভূতি অকপটে জানিয়েছি তোমাকে খুব কাছের একজন ভেবে। এখন অতীতের সেই সব মুহূর্তগুলোর কথা মনে হলেই বারবার তুমি চলে আস আমার মধুরতম স্মৃতিতে।’ আরেকটি এসএমএস-এ রুমানা তার নিজের একান্ত কথা জানিয়েছে এভাবে। ‘তুমি আমার অনেক কথাই জান, তবে সব কথা জানো না। আমার জীবনে এমন অনেক কিছু ঘটেছে যা জীবনের ছকটাই পাল্টে দিয়েছে, আমি বদলে গেছি, অন্য আরেক রুমানায় রূপান্তর ঘটেছে আমার। গত কয়েকদিনে আসলেই সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে রুমানা। ঘর-সংসার অফিসের কাজকর্মে ছন্দ পতন না ঘটলেও ভেতরে ভেতরে দারুণ এক অস্থিরতা আর উত্তেজনা বয়ে বেড়াচ্ছে হাসান। মিলাকে এসব কিছুই বুঝতে দেয়নি সে। স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। এখন যদি সকালের দেয়া ফরমায়েশ মতো জিনিসগুলো না নিয়ে খালি হাতে বাসায় ফিরে যায় তাহলে মিলা নিশ্চয়ই রাগ করবে। কারণ ওর প্রয়োজন আছে বলেই জিনিসগুলো আনতে বলেছে। কিন্তু কী কী জিনিস আনতে বলেছিলো সবই ভুলে গেছে হাসান। মিলাকে ফোন করে জেনে নেয়া যায় মনে হতেই পকেট থেকে হাতে নেয় মোবাইলটা। তখনই বেজে ওঠে ওটা। মোবাইলের স্কিন রুমানার নাম ভেসে উঠতেই অবাক হয় হাসান। এই তো কিছুক্ষণ আগেই তো এসএমএস করেছিল ও। এখন আবার ফোন করেছে। কী ব্যাপার? এখন আবার কী বলবে সে? ‘হ্যালো, কিছুক্ষণ আগেই তো এসএমএস করে বললে অনেক বদলে গেছ, আগে আমি যে রুমানাকে চিনতাম তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের সেই রুমানার সাথে এখনকার রুমানার কোনো মিল নেই, এখন আবার কী বলবে?’ হাসান কিছুটা অভিমানী হয়ে কথাগুলো বলে। ‘ওহ্ তুমি বেশ রেগে আছো মনে হচ্ছে, ওরে বাবা, আগের মতো রেগে যাওয়ার আর অভিমান করার স্বভাবটা যায়নি তাহলে’। এই যে অভিমানী মানুষ, এবার তোমাকে একটা গুড নিউজ জানাই। আমাকে দেখার জন্য, আমার সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে আমার জীবনের অজানা কথাগুলো জানার জন্যে তোমার যে অস্থিরতা তা আমি টের পাচ্ছি। তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। আমার হাজব্যান্ড কয়েকদিনের জন্য বগুড়া যাচ্ছে আগামীকাল। এ সময়টাতে তোমার সঙ্গে আমি দেখা করতে চাই, তোমার সময় হবে তো, তুমি তো আবার ব্যাংকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকো সারাদিন, আমাকে কিন্তু দিনের বেলায় দেখা করতে হবে, আমার জন্য দিনের বেলাতেই সময় দিতে হবে তোমাকে’। রুমানার কথাগুলো একটানা শোনার পর হাসান জবাবে কী বলবে হঠাৎ ঠিক করতে পারে না। হঠাৎ কিছু না বুঝে চিন্তা ভাবনা না করেই বলে উঠে, ‘চলো না আগামীকালই আমরা দেখা করি’। ‘ধীরে বন্ধু ধীরে। কাল দুপুরে আমার ছেলের স্কুলে একটা প্রোগ্রাম আছে, আমাকে ওখানে এ্যাটেন্ড করতে হবে। এর পরদিন বৃহস্পতিবার আমি ফ্রি। সেদিনই দুপুর বেলা দেখা করা যায়। তোমাকেও তো অফিস থেকে আগেভাগে ছুটি নিয়ে বেরোতে হবে, তুমি সেভাবে সব ম্যানেজ করে ধানম-ি রাইফেল স্কোয়ারের পাশে ‘ভূত’-এ এসো। ‘তার মানে’? ‘তার মানে, ভূত রেস্টুরেন্টের কথা বলছি, ওখানে আমরা দু’জন লাঞ্চ করবো এবং অনেকক্ষণ গল্প করবো। তোমার সমস্যা হবে না তো ? ‘এতো জায়গা থাকতে ভূতের আড্ডায় কেন’? প্রশ্ন করে হাসান। ‘রেস্টুরেন্টটা আমার বাসার খুব কাছেই, পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়।’ ‘ওহ তাই বুঝি, ধানম-ি ওই রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় অদ্ভুত নামের ঐ রেস্টুরেন্টটা অনেকবার চোখে পড়েছে। আমার কাছে ভারি ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে নামটা, শেষ পর্যন্ত এটাকেই যখন তুমি আমাদের দেখা হওয়ার ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছ ভালোই হলো, অদ্ভুত নামের এই রেস্টুরেন্টটায় আমাদের দু’জনার প্রথম দেখা হবে। ব্যাপারটা বেশ, হাসান বললো। ‘তাহলে প্রোগ্রাম তো ফিক্সড হলো। বৃহস্পতিবার ঠিক দুপুর দু‘টায় তুমি থাকবে ভূত রেস্টুরেন্টে। আমিও ঠিকঠাক মতো এ সময়ে চলে আসব। ‘তোমাকে চিনব কিভাবে, তুমি কী পরে আসবে’? ‘তুমিই বলো- কী পরে আসবো, কোন পোশাকে তুমি আমাকে দেখলে খুশি হবে’? ‘বারে, আমি কী বলবো, তোমার যা খুশি পরে এসো;’ অনেকটা বিব্রত হয়ে যায় হাসান। এই বয়সে রুমানাকে সেজে-গুজে আসতে বলা যায় কি। ‘ঠিক আছে অমি সালোয়ার কামিজ পরে আসবো, আমার চুলগুলো থাকবে খোলা আর কপালে থাকবে একটা টিপ, আচ্ছা, আমাকে দেখে চিনতে পারবে তো তুমি? ‘হ্যাঁ, ঠিক চিনতো পারবো, জবাব দেয় হাসান। ‘তাহলে আজ এটুকুই থাক, বাকি কথা হবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভূত রেস্টুরেন্টে, আই এম সিওর, তুমি আমাকে দেখে হতাশ হবে। তুমি মনে মনে আমাকে যেমন ভাবে ভেবে এসেছিলে আমি তেমনটি নই। এমনিতেই আমি একটা পেতœী বুঝলে, আর এর জন্যই ভূত রেস্টুরেন্টটাকে বেছে নিয়েছি তোমার-আমার দেখা হওয়ার জায়গা হিসেবে’, কথাগুলো বলে হাসতে থাকে রুমানা। তখনই লাইনটা কেটে যায়। ধানম-ি লেকের দক্ষিণ পাশে দুই নম্বর রোডে ভূত রেস্টুরেন্ট। আর একটু এগিয়ে গেলেই রাইফেল স্কোয়ার মার্কেট। সিএনজি ট্যাক্সি থেকে নেমে কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখে হাসান। নাহ্ এখনও দুটো বাজেনি। আরও দশ মিনিট বাকি রয়েছে। রুমানা বলেছে ঠিক ২টায় আসবে। তাহলে এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে, নাকি রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে বসবে ভাবতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। এই ভর দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটা শোভন মনে হলো না হাসানের কাছে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে বসে অপেক্ষা করাটাই বরঞ্চ ভালো। হাসান রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতেই অবাক হলো। কেমন যেন গা ছম ছম করা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে রেস্টুরেন্টের ভেতরটাতে। ইন্টেরিয়র ডোকোরেশনটাতেই ভৌতিক আমেজ রয়েছে। এরকম পরিবেশে খানাপিনার আয়োজন বৈচিত্র্যের জন্য মানুষের কতো রকম চেষ্টা। এটা তারই নমুনা। ভেতরে ভেতরে অনেক উত্তেজনার মধ্যে থাকলেও ভূত রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গিয়ে ওর হাসি পেল এই মুহূর্তে। (চলবে)
×