ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই দেশের মধ্যে তিক্ততার শিকড় গভীরে, সমাধানও জটিল

চীন-ভারত দ্বন্দ্বের মূলে সীমান্ত বিরোধ

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৮ জুলাই ২০১৭

চীন-ভারত দ্বন্দ্বের মূলে সীমান্ত বিরোধ

ভারত ও চীনের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি অভিন্ন সীমান্তজুড়ে চার সপ্তাহ ধরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেশ দুটি ১৯৬২ সালে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বেশ কয়েকটি এলাকায় সীমান্ত রেখা অমীমাংসিত থাকায় এখনও মাঝে মাঝেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ সালের তিন বছর পর ১৯৬৫ সালে ভারত প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে আরেকটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাই ভারতকে গত শতাব্দীর ষাট দশক থেকেই নিকটতম দুটি বড় দেশের মোকাবেলায় নিজের শক্তি সামর্থ্য বৃদ্ধি ও কূটনৈতিক বলয় গড়ে তোলার কাজে সচেষ্ট থাকতে হয়। ভারত কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গোপনে গোপনে তার বিশাল সমরাস্ত্র ভা-ার গড়ে তোলে এবং পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়। বেশ কয়েকটি পারমাণবিক সাবমেরিন থাকায় তার নৌশক্তিও এখন আর উপেক্ষা করার মতো অব¯’ায় নেই। যদিও ভারতের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং মাঝে মাঝেই ঋণে জর্জরিত কৃষকদের সপরিবারে আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়Ñ তবুও দেশটির ভূরাজনৈতিক সম্মানজনক অবস্থানের জন্য দেশের মানুষের মধ্যে বড় ধরনের কোন ক্ষোভ নেই। দেশটি এখন বিশ্বে ষষ্ঠ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী। কিন্তুু এতে চীন ও তার মিত্রদেশ পাকিস্তানের বৈরী তৎপরতায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তৎসত্ত্বে¡ও ভারতের মহাকাশ গবেষণা ও নভোযান উৎক্ষেপণ শিল্প এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটির বাণিজ্যিক ব্যবহার ভারতকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয়ের পথ সুগম করে দেবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক জঙ্গীবিমান এফ-১৬ ভারতের মাটিতে তৈরির এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ভারত এমন এক অবস্থানে এসে পৌঁছেছে, তার আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা অস্বাভাবিক কিছু নাÑ বরং তার জন্য মানানসই বলা যায়। এরই প্রেক্ষিতে হয়ত ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান বিপিন রাওয়াত কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন যে, ভারত এখন অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা দমনের পাশাপাশি দুটি ফ্রন্টে (চীন-পাকিস্তান) যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম। তার এই বক্তব্যে চীনা কর্তৃপক্ষের কান খাড়া হয়ে যায়। তাদের এক মুখপাত্র এ ব্যাপারে তির্যক মন্তব্য করে ভারতকে ইতিহাস (১৯৬২ সালের যুদ্ধ) থেকে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন। এর পরপরই ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি চীনকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, এই ভারত সেই ভারত নয়Ñ যে ১৯৬২ সালে চীনের অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলÑ বরং ৫৫ বছরের ব্যবধানে সে এক অন্য রকম উচ্চতায় পৌঁছেছে। এভাবে দুই দেশের বাগাড়ম্বরের মধ্যেই হঠাৎ খবর পাওয়া গেল যে, ভারতের সিকিম সীমান্তে (ভুটানের লাগোয়া ভূখ-) চীনা বাহিনী তাদের ভারি সাঁজোয়া যান ও অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক চলাচলের উপযোগী করে মজবুত সড়ক নির্মাণ করছেÑ এবং এক পর্যায়ে তারা সিকিম সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের কয়েকটি বাঙ্কারও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে কয়েক ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সৈন্য সমবেত হয়। উভয় পক্ষের টান টান উত্তেজনার মধ্যেই চীনারা দাবি করে যে, তাদের রাস্তা নির্মাণের মতো স্বাভাবিক কর্মকা-ে ভারতীয় সৈন্যরা গায়ে পরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের একজন ব্রিগেডিয়ার বলেন, মাত্রাবহির্ভূত উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও আমরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করেÑ মানব প্রাচীর তুলে চীনাদের অযাচিত উপদ্রব প্রতিহত করেছি। যে এলাকায় এসব ঘটছে তা ভুটান, সিকিম ও তিব্বতের ত্রিদেশীয় সীমান্তের ত্রিকোণ ভূমি বলা যেতে পারে। চীন, তিব্বতের দংল্যাং এলাকা থেকে ভুটানের দোকলাম এলাকা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। দোকলাম একটি মালভূমিÑ যার মালিকানা নিয়ে ভুটান ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ আছে। তাই মালিকানা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত এ এলাকায় সড়ক নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য চীনের প্রতি ভুটান আহ্বান জানিয়েছে এবং ভুটানের এই দাবির প্রতি ভারতও সমর্থন জানিয়েছে। কেননা, ভারতে দুশ্চিন্তা যে, ভুটান ও সিকিম সীমান্ত পর্যন্ত চীনের সড়ক নির্মাণ প্রকল্প সমাপ্ত হলেÑ তা শেষ পর্যন্ত ভারতের মূল ভূখ-ের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠবে। এদিকে চীন, ১৮৯০ সালে ব্রিটেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী সিকিম সংলগ্নসীমান্ত এলাকা তাদের নিজেদের বলে দাবি করে বলেছে, সেখানে ভারতের উপস্থিতি এই চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন। তারা ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সিকিমের নাথু-লা-পাস দিয়ে তিব্বতের মানস সরোবর অভিমুখে ৫৭ জন তীর্থযাত্রীর চলার পথ আটকে দিয়েছে। -বিবিসি
×