ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে আজ থেকে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া শুরু

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে বেসরকারী খাত

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৬ জুলাই ২০১৭

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে বেসরকারী খাত

রহিম শেখ ॥ বেসরকারী খাত চাঙ্গা করতে উৎপাদনমুখী ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রতি বিশেষ গরুত্ব দেয়া হবে নয়া মুদ্রানীতিতে। সে লক্ষ্যে মুদ্রানীতির কৌশল প্রণয়নের জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া শুরু করা হবে। আগামী ৯ জুলাই মতামত নেয়া হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ও অর্থ উপদেষ্টাসহ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের। সবার মতামত সমন্বয় করে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রয়াস থেকে প্রতি ৬ মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে আগামী জুনে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর নাগাদ ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হলেও অর্জিত হয় ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতি মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। গত জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বেড়ে ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে। গত মার্চে ছিল ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে। এপ্রিলে তা আরও বেড়ে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে বেসরকারী খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সুদহার অনেক কমে আসায় ঋণের প্রতি অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গত মার্চে ঋণের গড় সুদহার কমে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমেছে। আগের বছরের একই সময়ে গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ছিল ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ঋণের সুদহার এভাবে ডিজিটে নামলেও এখনও ব্যাংকগুলোর কাছে এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো উদ্বৃত্ত রয়েছে। এর মধ্যে একেবারে অলস পড়ে আছে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। বিপুল এ অর্থ বিনিয়োগে নিতে ব্যাংকগুলো কৃষি, এসএমই ও ভোক্তা ঋণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে সম্প্রতি এসএমই ও কৃষি খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ঋণ বিতরণ হচ্ছে। তবে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেসরকারী বিনিয়োগ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাচ্ছে না। আবার যেটুকু বিনিয়োগ হচ্ছে তার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ কারণে আগামী ছয় মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে সে ক্ষেত্রে গুণগত বিনিয়োগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ব্যাংকে আমানতের সুদহার দেশের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন কম। ব্যাংকেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার উদ্যোগ নেয়া হবে আগামী ছয় মাসের মুদ্রানীতিতে। জানা যায়, মুদ্রানীতির আরেকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে মূল্যস্ফীতি। কারণ, গত তিন মাসে মূল্যস্ফীতি অল্প অল্প করে বাড়ছে। কিন্তু আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য এ নির্বাচন ঘিরে এ বছর থেকেই বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। আর টাকার প্রবাহ বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, সম্পদ সীমিত থাকলে আর মানুষের হাতে বেশি টাকা থাকলে তখন বেশি মূল্য দিয়ে হলেও কাক্সিক্ষত পণ্য ভোগ করার প্রতিযোগিতা থাকে ভোক্তার মাঝে। এ কারণে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন ঘিরে টাকার প্রবাহ বেড়ে গেলে উদীয়মান মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতিই এখন আগামী মুদ্রানীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন মুদ্রানীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা। গত তিন মাসের মূল্যস্ফীতির সূচকে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এপ্রিলের মূল্যস্ফীতির তথ্য এখনও সরকারীভাবে প্রকাশ হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি মার্চের তুলনায় বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
×