ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পমহল শঙ্কায়

ভারতে অভিন্ন কর ব্যবস্থা জিএসটি চালু

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২ জুলাই ২০১৭

ভারতে অভিন্ন কর ব্যবস্থা জিএসটি চালু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের বৃহত্তম কর সংস্কার ব্যবস্থা পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি (গুডস এ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টায় এ্যাপের মাধ্যমে জিএসটি চালু করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও সবগুলো রাজ্য সরকারকে নতুন এ কর ব্যবস্থা মেনেই কর আদায় করতে হবে। নতুন এ ব্যবস্থায় পণ্য ও পরিষেবায় ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ- এ চার ‘ভিত্তিহারে’ কর পরিশোধ করতে হবে। জিএসটি চালুর সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এক দেশ, এক কর- দেশকে ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শন করবে। গুডস এ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স নয়, আসলে গুড এ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স জিএসটি। মোদি বলেন, দীর্ঘ সময়ের ফসল এ জিএসটি। রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ প্রয়াসেই জিএসটি সম্ভব হয়েছে। টিম ইন্ডিয়ার সাফল্যের প্রমাণ এ জিএসটি। মোদি আশা করেন, জিএসটির ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর দরিদ্ররা করের অব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাবেন। বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যার মতো রাজ্যগুলো জিএসটির জেরে লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও অপপ্রচারে কান দেবেন না। জিএসটির মাধ্যমে কালো টাকা মোকাবেলা করা হবে। তবে কর ব্যবস্থায় আর কোন ধোঁয়াশা থাকবে না। এদিকে সংসদের ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠানের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, আমরা সবাই এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার জন্য একত্রিত হয়েছি। ভারতের বৃহত্তম কর সংস্কার ব্যবস্থা জিএসটি চালু হলো। নতুন ভারত তৈরি করবে এক কর, এক বাজার এবং এক দেশ। তিনি বলেন, ভারত এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে চলেছে। রাজনীতির উর্ধে উঠেও দেশের স্বার্থে এগিয়ে আসার উদাহরণ হলো জিএসটি। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আশা প্রকাশ করেন, কর আদায়ের নতুন এ ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর হলে দেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী জিএসটি চালু হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে খুশি হয়েছেন। তিনি জানান, জিএসটি চালু করার গত ১৪ বছরের এ প্রচেষ্টায় তিনি নিজেও জড়িত ছিলেন। ১৬ দফা বৈঠক হয়েছে এ নিয়ে। তবে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস আগেই অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেয়। দল দুটির কেউই সে সময় উপস্থিত ছিলেন না। তবে তাতে থেমে থাকেনি জিএসটি উদ্যাপন। সে সময় দেখানো হয় জিএসটির ওপর বিশেষ তথ্যচিত্র। অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, লোকসভা স্পীকার সুমিত্রা মহাজন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আদবানি, শারদ পাওয়ারসহ অনেকে। শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ॥ শুক্রবার মাঝরাত থেকে চালু পণ্য পরিষেবা করকে (জিএসটি) সার্বিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে শিল্পমহলের একাংশ। তবে তা রূপায়ণের পদ্ধতিগত সমস্যার কাঁটা যে ব্যবসাকে বিঁধবে, সেটাও বিলক্ষণ বুঝছে তারা। যে কারণে ছোট-মাঝারি শিল্পের আশঙ্কা, সে জটে জড়িয়ে শনিবার থেকেই হোঁচট খেতে পারে বহু সংস্থা। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কেন্দ্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব থেকেই জিএসটির ইন্সপেক্টরদের হাতে গ্রেফতারের বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের বিরোধিতা করলে যেভাবে ‘টার্গেট’ করা হয়, আমার আশঙ্কা শিল্পপতিরা কোন নীতির বিপক্ষে গেলেও গ্রেফতারের ওই ধারা ব্যবহার করা হবে।” জিএসটিকে এক রাষ্ট্র, এক কর, এক বাজারের তকমা দিয়েছে কেন্দ্র। আগের কর কাঠামো থেকে নতুন ব্যবস্থায় পা রাখতে নেটে ‘প্রভিশনাল আইডি’ নিতে হয়েছে সংস্থাগুলোকে। বলা হয়েছে, বছরে ১.৫ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করে যারা, তাদের সব লেনদেনের ‘ইনভয়েস’-এ প্রতিটি পণ্যের ‘এইচএস কোড’ থাকতে হবে। কিন্তু এমসিসি চেম্বারের অন্যতম কর্তা সঞ্জীব কোঠারির অভিযোগ, একে তো পদ্ধতিগত সমস্যায় অনেকেই নথিবদ্ধ হওয়ার ওই আইডি পায়নি, ফলে শনিবার থেকে তারা কিভাবে কেনাবেচা করবে তা স্পষ্ট নয়। তার ওপর অনেক পণ্যেরই এইচএস কোড জিএসটি তালিকায় নেই। তিনি বলেন, এমনকি সংস্থাগুলোর পুরনো পণ্যের (স্টক) ভ্যাট বা কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্কের হিসাব দিতে প্রয়োজনীয় ‘ট্রান্স১ ফর্ম’-ও এদিন পর্যন্ত মেলেনি। নেটভিত্তিক হওয়াও জিএসটি রূপায়ণের পথে বড় বাধা বলে মনে করছেন একাংশ। ছোট শিল্পের সংগঠন ফসমি’র প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য এবং ফ্যাকসি’র প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহর বক্তব্য, ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলো অনলাইনে হিসাব রাখায় সড়গড় নয়। ফলে সমস্যা হবে তাদের। হিতাংশু বাবু বলেন, ‘কিছুদিন আগে জানতে পারি রোজকার হিসাব রোজই নথিভুক্ত করতে হবে। অথচ আমাদের ধারণা ছিল, রিটার্নের সময় একসঙ্গে তা দিলেই চলবে।’
×