ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ফিন্সবেরি পার্ক হামলার প্রতিক্রিয়ায় টেরেসা মে, ইসলামভীতি না ছড়ানোর আহ্বান করবিনের

অশুভ শক্তি জয়ী হবে না

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২১ জুন ২০১৭

অশুভ শক্তি জয়ী হবে না

ঘৃণা ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। লন্ডনের ফিন্সবেরি পার্ক মসজিদের নামাজ ফেরত লোকজনের গাড়ি ওঠানো ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। বিরোধী লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন এ ঘটনাকে দেখছেন সমাজে ‘ইসলামভীতি’ ছড়িয়ে যাওয়ার একটি নজির হিসেবে। এএফপি ও টেলিগ্রাফ। সোমবার মধ্য রাতে সংঘটিত ওই হামলায় একজন নিহত ও ১০ জন আহত হন। নিহত ব্যক্তির পরিচয় বাংলাদেশী বলে জানা গেছে। মন্ত্রিসভা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর টেরেসা মে এটি নিশ্চিত করেছেন হামলাকারী ড্যারেন অসবোর্ন (৪৭) একাই এ কাজ করেছে। যেসব লোক নিজেরা উদ্যোগী হয়ে হামলাকারী ভ্যানচালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে মে তাদের সাহসিকতার পুরস্কার করেছেন। নিহত-আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়ে লন্ডনবাসী ঘটনাস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট অল টেরর’ ব্যানার সামনে রেখে প্রায় ১শ’ জন লোক সেখানে রাত্রী জাগরণ করে। লন্ডনের মেয়র সাদেক খান বলেন, ‘সব সন্ত্রাসী কমিউনিটির মধ্যে বিভেদ ও উস্কানি সৃষ্টির মতো বিকৃত মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে। আমরা তাদের ছেড়ে দেব না।’ পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কাজের পরিকল্পনা ও সংঘটন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার নাম ড্যারেন অসবোর্ন বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বাড়ি কার্ডিফে এবং তিনি চার সন্তানের জনক। হামলাকারীর বিষয়ে পুলিশের কাছে আগে কোন তথ্য ছিল না নিরাপত্তামন্ত্রী বেন ওয়ালেস জানিয়েছেন। অন্যদিকে লন্ডন পুলিশের প্রধান ক্রেসিডা ডিক বলেছেন, হামলাটি মুসলিমদের টার্গেট করেই করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী ভ্যানচালক প্রথমে ধাক্কা দিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ফেলে দিয়ে কয়েক মিটার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করব বলে তিনি এ সময়ে চিৎকার করছিলেন। এ ঘটনায় ফ্রান্স ও জার্মানি নিন্দা জানিয়েছে। মিসরের শীর্ষ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল আযহার হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে তারা যে কোন প্রকারে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের নিন্দা জানায়। মিসরের শীর্ষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি জনমন থেকে ইসলামভীতি দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে টুইট করলেও তার পিতা এ বিষয়ে নীরব থাকেন। এদিকে হামলাকারী ভ্যানচালককে গণপিটুনি থেকে বাঁচিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার দুঃসাহসিক কাজ করেছেন এক ইমাম। তার নাম মোহাম্মদ মাহমুদ। জনগণকে উত্তেজিত হতে না দিয়ে ভ্যানচালককে পুলিশে ধরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি ‘হিরো অফ দ্য ডে’ খেতাব পেয়েছেন। তিনি বলেন, উত্তর লন্ডনে মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের বাইরে ভ্যান হামলার পরক্ষণেই ক্ষুব্ধ লোকজন হামলাকারীকে মারতে উদ্যত হয়েছিল। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান মাহমুদ। উত্তেজিত জনতাকে তিনি বার বার বলতে থাকেন, তাকে মের না, মের না, পুলিশের হাতে তুলে দাও। ভ্যানচালক যখন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি সব মুসলিমকে মেরে ফেলতে চাই’, ঠিক তখনই তাকে পাল্টা আঘত না করে মানুষজনকে বার বার শান্ত থাকতে বলেন মাহমুদ। লন্ডন পুলিশের সদর দফতর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড স্থানীয় লোকদের এই সংযমের প্রসংশা করেছে। জনগণকে শান্ত রাখার চেষ্টার জন্য মাহমুদকে হিরো অব দ্য ডে খেতাব দিয়েছে মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউস। ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে হামলাকারীকে রক্ষার জন্য ওই ইমামের সাহস ও দৃঢ়তা প্রশংসিত হচ্ছে। প্রশংসাকারীদের মধ্যে রয়েছে লন্ডনের পুলিশ বিভাগ এবং মেয়র সাদিক খান।
×