ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অতিথি আপ্যায়নে তালিকার প্রথমে পিঠা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৭ জুন ২০১৭

অতিথি আপ্যায়নে তালিকার প্রথমে পিঠা

ঈদকে সামনে রেখে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে বরিশালের নারী-তরুণী। ঈদ এলে পিঠা তৈরি করতে হবে বরিশালের নারীদের কাছে বিষয়টি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটা বরিশালের হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। পিঠা ছাড়া ঈদের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়। সে জন্যই ঈদের ১০ থেকে ১৫ দিন আগ থেকে শুরু হয় পিঠা তৈরির ব্যস্ততা। বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত নকশি পিঠা তুলে ধরে বাংলার লোকশিল্প। জেলা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে তৈরি নানা ধরণের পিঠা স্থানীয় ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-চিরুনি, টাকা, মাছ, কামরাঙ্গা, পয়সা, পাতা, ঝিলমিল, সেমাই ইত্যাদি। পাক্কন পিঠা (নকশি পিঠা) তার মধ্যে অন্যতম। পিঠার গায়ে যখন বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয় অথবা ছাঁচে ফেলে পিঠাকে চিত্রিত করা হয় তখন তাকে বলে নকশি পিঠা। নকশি পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে আতপ চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে কাই করা হয়। এই কাই বেলে রুটি করে তার ওপর গাছ, লতা-পাতা ইত্যাদি নকশা তোলা হয়। খেজুর কাঁটা, খোঁপার কাঁটা, সুচ, পাটকাঠি, খড়কার সাহায্যে হাতে দাগ কেটে নকশা তোলা হয়। হাতের পরিবর্তে সেটের সাহায্যেও পিঠাকে নকশাযুক্ত করা যায়। ছাঁচ সাধারণত মাটি, পাথর, কাঠ বা ধাতপ পদার্থ দিয়ে তৈরি। ছাঁচের ভেতরের দিকে গাছ, ফুল, লতা, পাতা, মাছ, পাখি ইত্যাদি নকশা অঙ্কিত থাকে। নকশি পিঠায় বাঙালী নারীদের শিল্পী সত্তা ফুটে ওঠে। নানি, দাদি, মা ও বোনেরা তাদের মন থেকে পাখি, ময়ূর, মাছ, ফুল, লতাপাতা, পুতুল, বর-বউ নকশি পিঠায় ফুটিয়ে তোলে। সুন্দর ও মজাদার নকশি পিঠা তৈরির প্রণালী সম্পর্কে গৃহবধূ মিনা আফরোজ বলেন, পিঠা ছোট-বড় সকলেরই পছন্দের খাবার। সুস্বাদু নকশি পিঠা তৈরি করতে উপকরণ হিসেবে চালের গুঁড়া দুই কাপ, বেকিং পাউডার এক চা চামচ, চিনি আড়াই কাপ, পানি দুই কাপ, লবণ সামান্য, তেল পরিমাণ মতো এবং টুথপিক প্রয়োজন। পরবর্তীতে প্রস্তুত প্রণালীর কথা বলতে গিয়ে মিনা আফরোজ বলেন, একটি প্যানে পানি গরম করে তাতে চালের গুঁড়া, বেকিং পাউডার ও লবণ দিয়ে খামির তৈরি করা হয়। এরপর রুটি তৈরি করে নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইন করে কেটে টুথপিক দিয়ে নকশা করা হয়। পরে পিঠাগুলো গরম তেলে বাদামি করে ভেজে অন্য প্যানে চিনি ও পানি একসঙ্গে জাল দিয়ে শিরা তৈরি করে ভাজা পিঠা কিছুক্ষণ শিরায় ভিজিয়ে প্লেটে তুলে নিলেই তৈরি হয়ে যায় মজাদার নকশি পিঠা। সূত্রমতে, বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত নকশি পিঠা। যে কারণে নকশি পিঠা হচ্ছে প্রকৃত বাঙালী রমণীর শিল্পকর্মের ক্যানভাস। পিঠা ঈদের আগের দিন রাতে অথবা ঈদের দিন সকালে ডুবো বা হালকা তেলে মিষ্টি সহকারে ভেজে গরম গরম পরিবেশন করা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতে আগত অতিথিদের প্রথমে বাহারী রঙের পিঠার মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়। -খোকন আহম্মেদ হীরা বরিশাল থেকে
×