হে নিমগ্ন কবি
(কবি সাযযাদ কাদিরের মৃত্যুতে)
রবীন্দ্রনাথ অধিকারী
ভর দিয়ে রোদের ক্রাবে
জীবন ও মৃত্যু এক সাথে নাচে
অনন্ত-কাল ধরে সমুদ্রের ধারা
মাঝ পথে দু’একটি নক্ষত্র তারা
দুর্লভ জীবন নিয়ে ঘরে অন্তরীণ
মহাকালের গুটি সুতোয় দু’একটা দিন
বাঁধা পড়ে মায়াময় পান্থশালা রাত
অন্ধগলি আত্মহারা রোধের করাত
সময়ে বুক চিরে উৎস-মুকুল
আনন্দ-বাগান থেকে সুগন্ধি ফুল
ঝরে পড়ে ঝরে যায় পাথরের কাচে
জল ও ঢেউ আগুলে নাচে।
ধীরে অপসৃত সূর্যাস্তের কোলাজ
চারদিকে গাঢ় অন্ধকার, মৃত্যু-স্বরাজ
বর্ণহীন অন্ধহীন গহীন নৈঃশব্দ
শেষ রাতে চুমু খায় তারার স্তব্ধ।
নির্মল ছায়া ভেতরে-বাইরে পরিপাটি
পায়ের তলার নিজস্ব মাটি
সূর্যকে পেছনে ফেলে হেঁটে গেলে অন্তহীন
অনন্তের দিকে অমলিন
নৈঃশব্দের পারাপার
হে নিমগ্ন কবি, হে চির সখা তোমাকে নমস্কার।
** তুমি
শেখ আতাউর রহমান
আমার সব কবিতা যে ঘুরেফিরে প্রেমের কবিতা হয়ে যায় তা তোমার জন্য
এবং মাঝে মধ্যে যে অপ্রেমের কবিতা লিখি সেটাও তোমার জন্য।
বন্ধুরা বলে, হারে আতাউর, সব যে ছেড়েছুড়ে দিলি, গান গাসনা,
কবিতা লিখিস না, ব্যাপার কি?-ব্যাপার?-সব তোমার জন্য।
এই যে আমি বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি কাজ করি, অখাদ্য খাই,
অসিদ্ধ মাংস কামড়াই,
সারাদিন রাস্তায় ঘুরি, বে-ঠিকানায় যাই, হাতে
নেই এক পয়সা, বই কিনি-সব তোমার জন্য।
জীবনটাকেই অন্য চোখে দেখেছি তোমার জন্য
যে ভাবনা কেউ ভাবে না, ভেবেছি তোমার জন্য
সারাক্ষণ একটা অঙ্গারের মতো জ্বলছি তোমার জন্য
যে কষ্ট কেউ পায় না পাচ্ছি তোমার জন্য
এবং এত কষ্টেও যে হাসছি সেটাও তোমার জন্য।
কখনো সাহসে এগিয়ে যাই তোমার জন্য
কখনো ভয়ে পিছিয়ে আসি তোমার জন্য।
এবং এতক্ষণ ধরে যে কবিতাটা লিখলাম সেটাও তোমার জন্য।
সিনেমা আর আজকাল ভালো লাগে না তোমার জন্য
যে দু’-একটা লাগে সেটাও তোমার জন্য
অনেক রাতে দুঃস্বপ্নে চমকে উঠি তোমার জন্য
আবার কোনো রাতে সুচির সুনিদ্রা হয় তোমার জন্য
জীবনে হঠাৎ হিরো হতে ইচ্ছে করে তোমার জন্য
আবার ক্লান্তিতে বসে পড়ে ধুঁকি তোমার জন্য
ভাবি পৃথিবীর অপর প্রান্তে চলে যাবো তোমার জন্য
পারি না, ষ্টেশন থেকে ফিরে আসি তোমার জন্য।
আমার জন্য আমি মোটেই ভাবি না তোমার জন্য
এবং তোমার জন্যই আমি বেঁচে আছি শুধু তোমার জন্য।
** অনুকবিতা
সায়মন স্বপন
১.
কবিতার জন্য জীবন অথবা জীবনের জন্য কবিতা
কখনও-বা হয়ে ওঠে একে অন্যের পরিপূরক।
তাই বলে, জীবন কখনও কবিতার ওপর কিংবা
কবিতা কখনও জীবনের ওপর নির্ভর করে না।
২.
পাগলের কান্না শোনার জন্য
ঈশ্বরের কাছে আরও একটি কানের প্রার্থনা জরুরী।
৩.
রাতের বিপরীত বাহু আর বোতামখোলা শরীরে
মিশে থাকে ভেজা নুনের সুরভি।
৪.
কুড়িয়ে পাওয়া জোসনা হাতে নিয়ে
পথ চলছি ভীষণ একা।
অথচ মাতালের দেখা মিলতেও পারে।
৫.
দুঃখবতী রাতের বুকে কান পেতে শোনোÑ
সমুদ্র-সঙ্গমের জন্য ছুটছে নদী ও নারীরা।
কেবল, আমরা রতিহীন শুয়ে আছি
মেঘেদের শাড়িতে মুখ গুঁজে।
৬.
দুচোখ ভরে বৃষ্টি দেখছি
অথচ
জানলার কাঁচ বেয়ে তোমার মৃত কথাগুলো গড়িয়ে পড়ছে।
শীর্ষ সংবাদ: