ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাংবাদিকদের সঙ্গে মঈন খান

ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায় জনগণ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ৪ মে ২০২৪

ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায় জনগণ

মঈন খান

দেশের জনগণ গণতন্ত্র চায় বলেই তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। শনিবার সকালে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। দলীয় অপর এক কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, উপজেলা নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ।   
মঈন খান বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন তা ঠিক নয়। ক্ষমতাসীনদের পতনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্র নয় বরং আন্দোলনে একাত্ম হয়েছে। দেশের মানুষ কখনো একদলীয় বাকশাল শাসন মেনে নেবে না। একদলীয় শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার বিকল্প নেই।
মঈন খান বলেন, দেশের ডান-বাম সবাই প্রকাশ্যে বলছে এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়েছে। সেজন্যই সরকার জনগণকে ভয় পায়। কারণ জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য অতীতে অনেক আন্দোলন করেছে। আবারও তারা যে কোনো সময় সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াবে।
মঈন খান বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন প্রজন্মের মন থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তবে তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হবে না। কারণ, জিয়াউর রহমান এ দেশের সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেছিলেন।

তিনি স্বাধীনতাত্তোর তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে জনগণ দেশের নেতৃত্ব জিয়াউর রহমানের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি কখনো ক্ষমতার জন্য লড়াই করেননি। তাই আমরা শুধু নই গোটা দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন।
মঈন খান বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশে ফের নতুন বাকশাল কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, মানুষের বাকস্বাধীনতা ও নারীর নিরাপত্তা নেই। আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যাব, এটাই হোক আমাদের প্রত্যয়।
জিয়াউর রহমানের মাজারে ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজা, সদস্য সচিব মাওলানা কাজী আবুল হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। 
উপজেলা নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ- আব্বাস ॥ উপজেলা নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিবের মুক্তির দাবিতে ‘হাবিবুর রশিদ মুক্তি পরিষদ’ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ফাঁদ পেতেছিলেন বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে। কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। যেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না সেই নির্বাচনের প্রয়োজন বাংলাদেশে নেই। তাই নির্বাচনের কথা আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে মানায় না।

মির্জা আব্বাস বলেন, ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি লোকজন? এবারও উপজেলা নির্বাচনে তারা ভোট দিতে যাবে না। আর আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থীকেই নির্বাচনে দাঁড়াতে দেয় না, তবে বিএনপির প্রার্থী দাঁড়ালে কি হতো অবস্থাটা। তাই নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে, সঠিক থাকবে ইনশাল্লাহ।
বর্তমান সরকারের পতন হবেই বলে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, কি সরকার পতনের আন্দোলন করব। আরে ভাই আমি তো সরকারই দেখি না। এটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। সুতরাং এই সরকারকে উৎখাত করার দায়-দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। জনগণ যখন মনে করবে তখন সরকারকে ফেলে দেবে, তাই এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিচিত্র এই বাংলাদেশ। সেদিন দেখলাম ১০০ টাকা চুরির জন্য চোরের হাত বেঁধে রেখেছেন পুলিশ। আর যারা ১ হাজার কোটি টাকা চুরি করে তাদের স্যালুট দেয়- এই হলো বাংলাদেশ। আজকে দেশের কি করুণ অবস্থা, কি দূরাবস্থা তা আওয়ামী লীগ ছাড়া বিশ্বের সকলেই জানে। আর তার চেয়ে বেশি জানে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো না উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, তিনি এখন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে করতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আল্লাহ জানেন কখন যে তার কি হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কতবার বলেছি, তাকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। সরকার বলছে আইন নাই। আইন থাকবে না কেন? রাশেদ খান মেননকে বিদেশে পাঠানো হয় নাই, আসম আবদুর রবকে বিদেশে পাঠানো হয় নাই?
মির্জা আব্বাস বলেন, আন্দোলন হবে, মুক্ত হবে দেশ। এভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো সরকার আন্দোলন থামাতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। আন্দোলন হবে, মুক্ত হবে দেশ। আমি হয়ত দেখে যেতে পারব না। কিন্তু দেশে কেউ না কেউ আসবে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জয়দেব জয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।  
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য সর্বশেষ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই। তবে আমাদের গায়ে যদি লাঠির আঘাত পড়তে থাকে তাহলে কতদিন শান্তিপূর্ণ থাকব। তাই প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ একসঙ্গে চালাতে হবে।

×