ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বরিশালে ভাইয়ের প্রচারে এমপি

স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৪ মে ২০২৪

বরিশালে ভাইয়ের প্রচারে এমপি

নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে প্রথম ধাপে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিজ ভাইকে প্রার্থী করে বিজয় নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাফিজ মল্লিক।
উপজেলা নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্ক করা হলেও এখানে তার কোনো ছিটেফোঁটা লাগেনি।

শনিবার দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এমপি হাফিজ মল্লিকের ভাই আব্দুল সালাম মল্লিকের পক্ষে কাজ করার জন্য তিনি (এমপি) আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া কবাই ইউনিয়নের শিয়ালগুনি এলাকায় গত ৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত এমপি তার ভাইয়ের বিজয় নিশ্চিত করতে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর কু-ুকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। সংসদ সদস্যর এমন কর্মকা-ে অন্যান্য প্রার্থীসহ উপজেলায় সাধারণ নেতাকর্মীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হবে কি না তা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া অভিযোগ করে বলেন, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। এখানে আমি তালা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। কিন্তু নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্য হাফিজ মল্লিক অবস্থান করে তার আপন ছোট ভাই সালাম মল্লিকের উড়োজাহাজ মার্কার পক্ষে প্রচারে অংশগ্রহণ করে ভোটারদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও চাপ প্রয়োগ করছেন। সংসদ সদস্যর এমন কর্মকা-ে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না তা নিয়ে আমিসহ সাধারণ ভোটাররা চরম শঙ্কিত।
এ ব্যাপারে অভিযোগের বিষয়ে এমপি হাফিজ মল্লিকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এমপি এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনী প্রচার চালালে সেটা আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।
অন্যদিকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মধু ঘোড়া প্রতীক নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। একাধিকবারের নির্বাচিত ভাইস চোয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মধু করোনাকালীন দুর্যোগ মহামারিতে নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে সদর উপজেলার প্রতিটি অসহায় পরিবারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

নিজে ভাইস চেয়ারম্যান হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার গভীর সখ্য থাকায় ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজে তিনি অবদান রেখেছেন। সব মিলিয়ে আগামী ৮ মে’র নির্বাচনে সদর উপজেলাবাসী মাহবুবুর রহমান মধুর ঘোড়া মার্কাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন বলে তিনি শতভাগ বিশ্বাস করছেন। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ডিমলায় প্রার্থীকে শোকজ
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ডিমলা উপজেলায়  ভোট। অভিযোগ উঠেছে প্রচার শুরুতেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের আপন ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী ডিমলা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস পারভেজ (আনারস)। তার পোস্টারে তিনি বিধি অমান্য করে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও তার এমপি চাচার ছবি ছাপিয়ে প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে সাটিয়েছেন, যা আচরণ বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি ৮ এর (৫) অনুযায়ী নির্বাচনী আচরণবিধির সু¯পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা পত্র প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দাখিল করার জন্য বলা হয়।   জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন ওই প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী এমপির ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ  বলেন, সময় মতো জবাব দিয়ে আসব।
এদিকে  শোকজের এ ঘটনার রেশ না কাটতেই  এমপির ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস পারভেজ অপর তিন  প্রতিদ্বন্দ্বী  বীর মুক্তিযোদ্ধা  তবিবুল ইসলাম (কাপপিরিচ), মো. আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু ( ঘোড়া),ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানকে (মোটরসাইকেল) কটাক্ষ করে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, ভোটে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়াইছে। ওনারা তো ২৪ সালের মুক্তিযোদ্ধা। অপর প্রার্থী আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টুর বিরুদ্ধে  ফেরদৌস পারভেজ বলেন তিনি আমার চাচা হলেও তিনি নামকরা চিটার।

বক্তব্যে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, নরমালে (স্বাভাবিকভাবে) না হলে আমি সিজার করে (জোরপূর্বক সিল মেরে ভোট নেওয়াকে বুঝায়) জিতব। এমপি সাহেব  বড় আব্বা, আমার মাথার ওপর আছে। এতে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলাজুড়ে। এমপি আফতাব উদ্দিন  বলেন, এগুলো কতভাবে কত কথা লাগানো যায়। সে বলেছে উন্নয়ন সিজার করে নিয়ে আসবে। সেটাকে এডিট করে উল্টা দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ এ রকম কত নোংরামি করবে তার ঠিক আছে। 
জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,আমরা ভিডিও বক্তব্যের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। এ ছাড়া প্রার্থীদের  লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।

ঝালকাঠিতে কোমর বেঁধে নেমেছেন প্রার্থীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝালকাঠি থেকে জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর পরই মাঠে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ঝালকাঠি জেলার ২টি উপজেলা নলছিটি ও ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৬টি পদে ২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৩টি পদে ৯ জন ও নলছিটি উপজেলায় ৩টি পদে ১৪ প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই ২টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত প্রার্থী বা প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহনীয় অবস্থান বিরাজ করছে।

প্রার্থীদের গ্রাম ও শহর এলাকায় নির্বাচনী পোস্টার ঝোলানো হয়েছে। এই প্রার্থীদের মধ্যে সকলেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা রয়েছেন। এই দুটি উপজেলায়ই কাগজে কলমে কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। তবে দলের মধ্য থেকে দলগত সমর্থন রয়েছে।  কোনো প্রার্থী এককভাবে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের সমর্থন পায়নি এবং দলের সমর্থন খন্ডিত হয়েছে। 
ঝালকাঠি সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন সুরুজ কাপ-পিরিচ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান দোয়াত-কলম। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মহিনুদ্দিন তালুকদার (মঈন) তালা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাঈদুর রহমান টিয়া পাখি এবং সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লস্কর আশিকুর রহমান দিপু উড়োজাহাজ প্রতীক পেয়েছেন।

মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান সোনালি হাঁস, নতুন নারী নেত্রী পিনু আক্তার নদী ফুটবল ও মিসেস উম্মে সালমা কলস প্রতীক পেয়েছেন। 
নলছিটি উপজেলায় সাবেক চেয়ারম্যান জিকে মোস্তাফিজুর রহমান দোয়াত-কলম, সাবেক নলছিটি পৌর চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী আনারস ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালেহ উদ্দিন খান সেলিম মোটরসাইকেল। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে  জে এম হাতেম চশমা, মো. বদরুল আলম তালা, মো. মনিরুজ্জামান মনির বই, মো. মোফিজুর রহমান শাহিনক মাইক, মো. হানিফ হাওলাদার টিয়া পাখি, শরিফ মিজানুর রহমান (লালন) টিউবওয়েল।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদা বেগম প্রজাপতি, আয়শা আক্তার কলস, জাকিয়া খাতুন শিমা ফুটবল, দিলরুবা মাহমুদ হাস ও মোসা. নাছিমা আক্তারসহ পদ্মফুল প্রতীক পেয়েছেন।

কেশবপুরে প্রার্থীদের ঘুম নেই 
নিজস্ব সংবাদদাতা  কেশবপুর, যশোর থেকে জানান, প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে কেশবপুরের প্রার্থীদের রাতে ঘুম নেই। প্রার্থীর ছড়াছড়ির মধ্যে নিজের জয় ছিনিয়ে নিতে রাতদিন প্রচার ও গণসংযোগে যেন দম ফেলার সময় পাচ্ছেনা না কেউ। গ্রামে, পাড়ায়, মহল্লায় ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের ভোটটি পাকা করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। দুপুর দুইটার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রার্থীদের গুণকীর্তন করে প্রচার করা মাইকিংয়ের জন্য মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।

গোটা উপজেলা পোস্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই কেশবপুরে। তারা ভোট দিতেও কেন্দ্রে যাবেন না তেমনটি জানা গেছে। এদিকে চেয়ারম্যান পদে একই দলের সাত প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররাও যে যার মতো প্রার্থীকে বেছে নিচ্ছেন।  
কেশবপুর উপজেলা নির্বাচন প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। চেয়ারম্যান পদে আবদুল্লাহ আল আহসান বাচ্চু (দোয়াত কলম), এসএম মাহাবুর রহমান (মোটরসাইকেল), কাজী মুজাহীদুল ইসলাম পান্না (হেলিকপ্টার), নাসিমা আকতার সাদেক (শালিক পাখি), ইমদাদুল হক (আসনারস), ওবায়দুর রহমান (জোড়া ফুল), মফিজুর রহমান (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন আবদুল্লাহ আল মামুন (তালা), পলাশ কুমার মল্লিক (উড়ো জাহাজ), আব্দুল লতিফ রানা (মাইক), মনিরুল ইসলাম (টিউবওয়েল), সুমন সাহা (চশমা) প্রতীক নিয়ে। এ ছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনিরা খানম (কলস) ও রাবেয়া খাতুন (ফুটবল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তাহিরপুরে নবীন-প্রবীণে লড়াই
নিজস্ব সংবাদদাতা তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, প্রতীক বরাদ্দ  পেয়েই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি মিছিল-শোডাউনে নেমেছেন। প্রার্থীদের এমন সরব প্রচারে ভোটের উত্তাপ লেগেছে হাওর জনপদ তাহিরপুরে। এখানে ২১ মে  ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 
ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মূল লড়াইটা হবে নবীন-প্রবীণ প্রার্থীদের মধ্যে। তবে যে-ই নির্বাচিত হোকনা কেন লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। আবার প্রার্থীদের  বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রনজিৎ সরকারের বলয়ের  নেতা। তাই  কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে এলাকার উন্নয়নে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন সেদিকটাতেও নজর রাখছেন  ভোটারদের একটি অংশ।

আদমদীঘি এখন পোস্টার ব্যানারের জনপদ
নিজস্ব সংবাদদাতা আদমদীঘি, বগুড়া  থেকে জানান, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে আদমদীঘি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পরই জমে উঠেছে প্রচার। রঙিন ও সাদা-কালো পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে উপজেলার সান্তাহার পৌরসভা শহরসহ গ্রাম জনপদের সড়ক ও পাড়া-মহল্লার অলিগলি। প্রার্থী এবং তাদের কর্মীরা তীব্র দাপদাহ উপেক্ষা করে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু (আনারস), উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম রাজা (মোটরসাইকেল) এবং সান্তাহার কারিগরি কলেজের সিনিয়র প্রভাষক তোফায়েল হোসেন লিটন লড়ছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে।

পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পিন্টু (টিউবওয়েল) এবং অপরজন হলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান মন্টি (প্রতীক চশমা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সালমা বেগম চাঁপা (হাঁস) এবং যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রী ইসরাত জাহান কুইন লড়ছেন প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে। 

বগুড়ার চ্যালেঞ্জের মুখে প্রবীণ প্রার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে বগুড়ায় ৩টি উপজেলায় ভোট গ্রহণের মাঝে আর মাত্র ৩ দিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে প্রার্থীরা এখন চরম ব্যস্ত সময় প্রার করেছেন। এর সঙ্গে ভোটের মাঠের উত্তেজনাও বাড়ছে। বগুড়ার গাবতলি, সোনাতলা সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রথাম ধাপের এই নির্বাচনে নতুনদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন পুরাতনরা।

এই তিন উপজেলাতেই বর্তমান চেয়ারম্যানদের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পুরাতনদের  ভোটের মাঠে চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন নতুন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে শেষ মুহূর্তের প্রচারে প্রার্থীরা এখন প্রতিটি সময় ভোটারদের সঙ্গে কাটাতে চাচ্ছেন। ছুটছেন পাড়া-মহল্লা গ্রামে গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। এই ৩ উপজেলায় প্রার্থী ৩২ জন। এর মধ্যে শনিবার সারিয়াকান্দি উপজেলার ২ প্রার্থী ব্যক্তিগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রধম ধাপের ৩ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মধ্যে গাবতলিতে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লগাড়াইয়ে আভাস মিলছে। এখানে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ  নেতা ও  কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অরুণ কান্তি রায়ের চ্যালেঞ্জে বর্তমান চেয়ারম্যান বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিনেয়াজ খান রবিনের ব্যস্ততা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুই জনের দ্বৈরথ যে তুমল হবে তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ ভোটার এক কথায় বলে দিচ্ছেন।

এদিকে পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি জটিলতায় পৌঁছে যাওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে তার নাম না ব্যবহার করতে বিবৃতি দিতে হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে বগুড়া ৩ উপজেলা মধ্যে এখানেই ভোটে মাঠ সবচেয়ে বেশি সরব তা সহজেই অনুমেয়। তবে এখানে চেয়ারম্যান পদে  আরও ২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন-সাহানুর ইসলাম শাকিল ও আতাউর রহমান রানু। তারাও ভোট প্রার্থনায় পিছিয়ে নেই। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা বগুড়া- ১ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত। এই দুই উপজেলা দুই প্রার্থী আলোচনায় রয়েছেন অন্য কারণে।

এদের মধ্যে একজন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলে অন্যজন সংসদ সদস্যের ভাই। সারিয়াকান্দি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে লড়াই ত্রিমুখী হওয়ার সম্ভাবনা। বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রেজাউল করিম মন্টুর মূল চ্যালেঞ্জ নতুন প্রার্থী সংসদ সদস্যের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন। আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান আলীও রয়েছেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এখানে ভোটের হাওয়াও বেশি। অন্য ২ প্রার্থী হলেন- মো. আশিক আহম্মেদ ও আব্দুস সালাম।

কাপাসিয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
সংবাদদাতা কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে জানান, কাপাসিয়ায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য ও জনসাধারণের জরিপে ড়চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উদ্দিন সেলিমের (আনারস) দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। গোটা উপজেলায় দুই প্রার্থীর পৃথক নির্বাচনী উঠান বৈঠকে ভোটাররা সকলেই খুশি।

 ভোটাররা বলছেন এই অঞ্চলে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুই প্রার্থী। দুই প্রার্থীই উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেত্রী। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (কলসি) লড়ছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রওশন আরা সরকার। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (ফুটবল) শামীমা নাসরিন শিখা  সে উপজেলা মহিলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
পিরোজপুরে মিঠুর গণসংযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা পিরোজপুর থেকে জানান, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিউল হক মিঠু (আনারস) বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। শনিবার তিনি পিরোজপুর শহরের সদর রোড, ক্লাব রোড, কাপুড়িয়া পট্টি, কালীবাড়ি সড়ক, পোস্ট অফিস সড়কের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ ছাড়া শিকদার মল্লিক ইউনিয়নের পাঁচপাড়া বাজার ও কদমতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় প্রার্থী মিঠু বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সদর উপজেলাকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এবং এলাকার উন্নয়নে সম্ভাব্য সবকিছু করা হবে।

×