ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তুতির শেষ পর্বে ছিল মানত, শিরনি, দোয়া

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৩ জুন ২০১৭

প্রস্তুতির শেষ পর্বে ছিল মানত, শিরনি, দোয়া

ট্রলার মালিক, আড়ত মালিকদের রয়েছে শতভাগ প্রস্তুতি। মাঝি-জেলেরা এক দফা গভীর সাগরে মাছ শিকারে গেছে। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় মোরা তাদের ফেরত পাঠিয়েছে। তবে জেলেদের ইলিশ শিকারের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত রয়েছে। এখন চলছে অপেক্ষার পালা। কারণ আবহাওয়া এখন মাছ ধরার অনুকূলে নয়। মৌসুমের শুরুতেই প্রকৃতি বাগড়া দিয়েছে। এ বছরে সাগর যাত্রার এমন প্রস্তুতি রয়েছে কলাপাড়ার জেলেপল্লীতে। ভয়াল সাগরে জীবন বাজি রেখে এ যাত্রার প্রস্তুতির পাশাপাশি সরাসরি জেলে পরিবারে চলছে উৎকণ্ঠা। এসব শ্রমজীবী দৈনিক কিংবা ধরা মাছের ভাগিদার জেলেদের জীবনে মাছ শিকারের মৌসুম মৃত্যুর ট্র্যাজেডি হয়ে আসে। ফি-বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড় কিংবা জলদস্যুর হানায় প্রাণহানিসহ বিভিন্ন ধরনের বিপদশঙ্কুল পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। কিন্তু সাগরে নামার প্রস্তুতি ঠিকই চলছে। জীবন তো আর থেমে থাকে না- তাইতো ঠিকই সাগরযাত্রার প্রস্তুতি রয়েছে এসব জেলের। এমন জেলের সংখ্য অন্তত আট হাজার। শুধুমাত্র কলাপাড়া উপজেলার পরিসংখ্যান। পরিবার পরিজন স্ত্রী-সন্তান এদের মুখে দুবেলা-দুমুঠো ভাতের যোগানেই মরণের ঝুঁকি নিয়ে সাগরযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে এসব জেলে। পরিবার-পরিজন স্ত্রী-স্বজন সবাইকে নিয়ে একটু ভালমন্দ খাবার একত্রে বসে খেয়ে এখন কলাপাড়ায় ইলিশের সবচেয়ে বড় মোকাম আলীপুর-মহিপুরে অবস্থান করছে শত শত ট্রলার। হাজারো জেলে ঘাটে বসে করছে অপেক্ষা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একেক দলে ২০-২৫টি ট্রলার সাগরমুখী যাত্রা শুরু করবে। দলবদ্ধ হয়ে গভীর সাগরে অবস্থানের সুবিধা রয়েছে। মৎস্য ব্যবসায়ী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, দলবদ্ধ হয়ে সাগরে মাছ শিকারে অনেক সুবিধা। জলদস্যুরা আক্রমণ করতে সাহস পায় না। ঝড়ে কোন ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটলে একে অপরের সহায়তায় দ্রুত এগিয়ে আসতে পারে। আড়ত, ট্রলার মালিকরা ট্রলার মেরামত ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। সাগরে অবস্থানকালীন ৬/৭-১২/১৩ দিনের বাজারহাট করেছে। জ্বালানি তেল, বরফ মজুদ করেছে। তেমনি জেলেরাও কেউ মানতের কাজ সেরেছে। কেউ শিরনি বিলিয়েছে। বিশেষ দোয়া মোনাজাত ব্যক্তি থেকে আড়ত কিংবা ট্রলার মালিক সবাই আয়োজন করেছে। কেউ কেউ পীরের মুরীদান অনুসারীরা নিয়েছে অনুমতি কিংবা বিশেষ দোয়া। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, মোট জেলে ১৮ হাজার। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা অন্তত আট হাজার। এফবি মায়েদ দোয়া বোটের মাঝি শাহআলম, আল-আমিন ট্রলারের আবদুল জানান, তাদের বাজার-হাট সব রেডি। শুধু আবহাওয়া ঠিক হলেই সাগরে যাত্রা শুরু করবেন। মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মিয়া জানান, এই মুহূর্তে মহিপুর-আলীপুর ঘাটে অন্তত দুই শ’ ট্রলারের দুই হাজার জেলে গভীর সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আবহাওয়া ভাল হলেই সাগর যাত্রা শুরু হবে। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×