ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেলেপাড়ায় এখন উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৩ জুন ২০১৭

জেলেপাড়ায় এখন উৎসবের আমেজ

মাছে ভাতে বাঙালী, আর সেই মাছ যদি হয় ইলিশ, তা হলে তো ভোজন রসিকদের কথাই নেই। পদ্মার ইলিশ দিয়ে ভূরিভোজের আস্বাদ কি কখনও ভুলতে পারে বাঙালী? এ কারণে পদ্মার ইলিশ স্বাদে-গন্ধে আজও অতুলনীয়। তাইতো ইলিশের ভরা মৌসুমে জেলেপাড়ায় বইতে শুরু করেছে উৎসবের আমেজ। এই সুযোগে খোশ মেজাজে নিজেদের তৈরি করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আড়তদার, ব্যবসায়ী ও বরফকল মালিকরা। জেলেপল্লীতে মনের আনন্দে নতুন জাল বুনছে গৃহিণীরা। জেলে ও নিকারুরা খুশি মনে নৌকা-জালে আলকাতরা-গাব মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে ছুটছে নদীর দিকে। আড়িয়ালখাঁ, পদ্মা ও মেঘনা নদীর বুক জুড়ে দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা আর জাল নিয়ে ইলিশ শিকারীদের অপলক দৃষ্টি। নদীর স্রোতের বাঁকে বাঁকে আর ঢেউয়ের ফণায় দুলতে দুলতে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। এ দৃশ্য যেন আবহমান বাংলার চিরায়ত অবয়ব আর গৌরবগাঁথা বাঙালীর বুকের গভীরে পুষে রাখা স্বপ্ন। এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সরকার প্রতিবছর জাটকা শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় পদ্মা- মেঘনা ও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট-বড়-মাঝারি ইলিশ ধরা পড়ছে জেলে ও নিকারুদের জালে। গত বছর ইলিশ মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অসাধু মৎস্য শিকারী বিপুল জাটকা নিধন করে। রাতের আঁধারে এ সব জাটকা ধরা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জাটকা জব্দ করে অনেক বিক্রেতাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর জাটকা কম ধরা পড়েছে। এ কারণে বাজারে ছোট ও মাঝারি ইলিশের আমদানি একটু বেশি। পদ্মার ভাটিতে আড়িয়ালখাঁ নদের উৎস মুখে চর জেগে ওঠায় এবং পদ্মা-মেঘনা, আড়িয়ালখাঁর গভীরতা কমে যাওয়ায় এসব নদ-নদীতে ইলিশ খুব কম ধরা পড়ছে। তবুও জেলে ও নিকারুরা চষে বেড়াচ্ছে। মৌসুমের শুরুতেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা সাগরের ইলিশে মাদারীপুর অঞ্চলের হাট-বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ইলিশের পাশাপাশি স্থানীয় সকল প্রজাতির মাছও বাজার ভর্তি। ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দামও ক্রেতার নাগালের মধ্যে রয়েছে। এবার রমজান শুরু হওয়ায় এবং বাজারে পর্যাপ্ত মাছের আমদানি থাকায় রোজদারসহ সব ক্রেতা তুলনামূলক সস্তায় মাছ কিনতে পারছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ইলিশের আমদানি বেশি হওয়ায় রোজাদাররা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। মূলত ‘মাছে ভাতে বাঙালী’ এ প্রবাদের স্বাদ ভোগ করছে এ অঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলেপল্লীতে খুশির বন্যা বয়ে যায়। একই সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ী, আড়তদার ও বরফকল মালিকরাও কর্মচাঞ্চল্য হয়ে ওঠে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মাদারীপুর পুরান বাজার আড়তদার পট্টি মানুষের কলরবে মুখরিত থাকে। প্রতিদিন সকালে নদীর ঘাটে ও টোল ঘরে ঝুড়ি ভর্তি মাছের ডাক হয়। আড়তে ও মোকামে ওজনে বিক্রি করা হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা ডাকে মাছ কিনে নিয়ে যায় গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে। শুধু ইলিশ নয় সারা বছর অন্যান্য মাছও একইভাবে বেচাকেনা হয়। তবে ইলিশের মৌসুমে দৃশ্যপট পাল্টে যায়, যখন জেলে বা ইলিশ শিকারী নিকারুরা সারা রাত নদীতে মাছ ধরে ভোরে সূর্য ওঠার আগে মোকামের ঘাটে নৌকা ভেড়ায়। তখন পাইকার বা আড়তদারদের ভিড় জমে ঘাটে। অনেক শৌখিন ও ভোজন রসিক নৌকা ঘাট থেকে পছন্দসই বড় ইলিশ কিনে নিয়ে যায়। বিগত বছরগুলোর তুলনায় গত ইলিশ প্রজনন মৌসুমে এ অঞ্চলের ইলিশের উৎপাদন ছিল আশানুরূপ। দামও ছিল সাধারণ ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে। একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষও গতবার ইলিশের স্বাদ পেয়েছে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না, এমনটাই প্রত্যাশা আড়তদারদের। ইলিশ বিপণনের কারণে সারা বছরের চেয়ে ইলিশ মৌসুমে বরফকলগুলো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনিতেই মাদারীপুর অঞ্চলের বরফকল সারা বছরই ব্যস্ত থাকে এখানে উৎপাদিত মাছ হিমায়িত করার জন্য। ইলিশ মৌসুমে সে ব্যস্ততা দ্বিগুণ হয়। তখন রাতদিন বরফ উৎপাদন করতে হয় চাহিদা পূরণের জন্য। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×