ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে সামাজিক যোগাযোগ এবং কমিউনিটি ব্যাংকিং প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৩১ মে ২০১৭

ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে সামাজিক যোগাযোগ এবং কমিউনিটি ব্যাংকিং প্রয়োজন

(গতকালের পর) এদিকে অর্থমন্ত্রী গত ১১ মার্চ, ২০১৭ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে জানিয়েছেন, দৈনিক ৮৯০ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়। এ বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগে আনা দরকার, নচেত অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জোরদার হবে না। দেশে বিদ্যুত ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করতে হয়। ১,১৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এ প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। তবে সস্তায় বিদ্যুত উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া দরকার। বেসরকারী খাতকে সুশৃঙ্খলভাবে কর্পোরেট গবার্নেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিটিজাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। প্রশাসনযন্ত্র পরিচালনায়ই গবার্নেসের ব্যাপ্তি ঘটছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২শ’ ৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে এর ভাল দিকগুলো ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকা-। সাইবার ক্রাইম ঠেকানোর জন্য সাইবার পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সার্বিক কর্মকা- ঢেলে সাজানো দরকার। আশা করা যাচ্ছে, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবেÑ যা ২০২১ সাল নাগাদ কাজ শুরু করতে সক্ষম হবে। তবে এ সমস্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটু দ্বিধা থেকে যায়। যেহেতু অফশোর কাজ করার, সেহেতু এটিকে বলা যায় ‘রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আরেকটি রাষ্ট্র।’ এ ধরনের ব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্রের খুব বেশি লাভ হয় না। দেশে আমদানি বিকল্পনায় শিল্প ও রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা বিদেশ থেকে অর্থ দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠায় বিশেষত সংসার খরচ চালানোর জন্য, মাসিক ন্যূনতম ১৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত তাদের উৎস কর কর্তন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তত্ত্ব পর্যালোচনা ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ (২০১৪) মন্তব্য করেছেন যে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলো আসলে এক সুতায় গাঁথা। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে সমন্বিত কার্যক্রম জরুরী এবং সেই আঙ্গিকে নীতি ও কর্মসূচী প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত (২০১৫) লিখেছেন যে, বাংলাদেশে মূলধারার অর্থনীতিতে রেন্ট শিকারদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে সশস্ত্র মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২০১৬) বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের উচ্চাভিলাষী ২০৩০ (এসডিজি ২০১৬-২০৩০) এজেন্ডা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ এমডিজি বাস্তবায়নের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এমডিজির সাফল্যের ওপর ভর করে এসডিজি বাস্তবায়নে প্রস্তুত হচ্ছে। এ জন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। এমডিজি পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে অতি দরিদ্রের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। শহর ও গ্রামীণ দুই ক্ষেত্রেই শিক্ষা, বাসস্থান, অন্নœ, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মতো মৌলিক বিষয়ে অনেক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০৩০ এজেন্ডা হচ্ছে একটি সম্মিলিত পথপরিক্রমা। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারী-বেসরকারী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব উৎসব থেকে বেশি পরিমাণে সম্পদের সরবরাহ প্রয়োজন। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার যেমন- নারী-পুরুষ, নাগরিক সমাজ, কমিউনিটি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, যুব সমাজ ইত্যাদির সঙ্গে অংশীদারিত্ব, আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। বস্তুত দুই রকম টার্গেট আছে। প্রাইমারি টার্গেট হচ্ছে : যারা ক্ষমতায় আছেন তারা কিভাবে অন্যের উন্নয়ন সম্পাদন করেন। সেকেন্ডারি টার্গেট বাস্তবায়নে একাধিক লোকের ওপর দায়িত্ব দিতে হবে, যারা ক্ষমতায় অধীনস্থদের সঠিকভাবে বুঝতে পারে। বাংলাদেশ অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৭.৫ বছর ধরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপর ছিল। গত একদশকে রফতানি আয় ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণের কাছাকাছি। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশকে ২০১২ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে পরিণত করা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এভাবেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বকে যেমন তাক লাগিয়ে দিয়েছি, তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে সরকারপ্রধান অভিমত ব্যক্ত করেন। চেম্বার নিউজ (২০১৭)-এর সম্পাদকীয়তে উল্লেখ রয়েছে যে, ২০১৬ এর ডিসেম্বরে ১১ থেকে ১৩ তিন দিনব্যাপী আলোচনায় এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে, ঢাকা সামিটের মাধ্যমে বিবিডিএ গঠিত হয়। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নে দারিদ্র্য, ক্ষুধা থেকে মুক্তি, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ এবং কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও ভোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করবে। আসলে এটি একটি সমন্বিত প্রয়াস, যেখানে ঞড়ঢ় উড়হি ঢ়ষধহ এবং ইড়ঃঃড়স ঁঢ় ঢ়ষধহ দুটো এক সঙ্গে কাজ করবে অনুভূমিকে এবং উলম্ব অক্ষ-উভয়েই একযোগে কাজ করে স্বীয় সক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করবে। লুইস (২০১১) বলেন যে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ জনবিচ্ছিন্ন তাত্ত্বিক তত্ত্ব কেবল উপস্থাপন করে এবং রাষ্ট্র ও বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে অক্ষম হয়। তবে তারা কোন উপকারে আসে না। বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ বস্তুত লুইসের বক্তব্যের যথার্থতা ২০১৩ থেকে অদ্যাবধি প্রমাণ করে চলেছেন। লেইক এবং হাকফেলট (১৯৯৮) মন্তব্য করেছেন যে, সামাজিক পুঁজি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, যা নাগরিকদের মধ্যে একটি সম্পর্ক উন্নয়ন করে থাকে, সামাজিক পুঁজি বৃদ্ধি করে এবং কৌশল হিসেবে রাজনৈতিক উপায় ও প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে সাফল্য এনে দিতে সক্ষম হয়। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ
×