ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিজস্ব উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে সঠিক সময়ে সার সরবরাহ য় মুনাফার বাইরে দেড় শ’ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা

গত বছর শত কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিসিআইসি

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২১ মে ২০১৭

গত বছর শত কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিসিআইসি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সার সরবরাহ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বরাবরই সাফল্যের সঙ্গে কাজটি করে আসছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। গত (ডিসেম্বর-মার্চ) প্রান্তিকে নিজস্ব উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সার সরবরাহ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া গ্যাসের অভাবে বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) সার কারখানাগুলো। এরপরও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় শত কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মুনাফার বাইরে একই অর্থ বছরে দেড়শ’ কোটি টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর কোষাগারে জমা দিয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৫ লাখ মে.টন। দেশের চাহিদার প্রায় অর্ধেক ইউরিয়া সার (ডিসেম্বর-মার্চ) প্রান্তিক মৌসুমে সরবরাহ করা হয়। বিসিআইসির নিজস্ব কারখানাগুলোর উৎপাদন ৯ লাখ ২৮ হাজার মে.টন। আমদানি করা হয় ১১ লাখ ৩০ হাজার মে.টন। অবশিষ্ট মজুদ থেকে এই চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে এই পর্যন্ত ২৩ লাখ মে.টন ইউরিয়া সার সরবরাহ করেছে বিসিআইসি। বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সার পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিসিআইসির নিযুক্ত পাঁচ হাজার তিনশ’ ডিলার ও ৪৫ হাজার খুচরা বিক্রেতাও সাফল্যের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া দেশের ইউরিয়া সার কারখানাগুলোর কারিগরি মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির দক্ষ জনশক্তি নিরলস প্রচেষ্টার কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন এখনও অব্যাহত রয়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ষাটের দশকের পুরনো কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের প্রাকৃতিক গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (এনজিএফএফএল) পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই জমিতে বিসিআইসির উদ্যোগে আধুনিক মানের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল) চলতি বছরে সম্পূর্ণ নতুনভাবে চালু করা হয়। নতুন এ কারখানা বছরে পাঁচ লাখা ৮১ হাজার টনের বেশি সার উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। আধুনিক এ কারখানা শক্তি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। ৪১৭ একর জমিতে চার হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও পলাশ কারখানা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিসিআইসি। ১৯৭০ সালে ঘোড়াশালে স্থাপিত ইউরিয়া সার কারখানার সক্ষমতা ছিল প্রায় পাঁচ লাখ টন। এখন পুরনো এ কারখানায় অর্ধেকের কম উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে ১৯৮৫ সালে স্থাপিত পলাশ ইউরিয়া কারখানার উৎপাদন এখন ৮০ হাজার টনের নিচে। এ দুই কারখানার জায়গায় নতুন সার কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়া সার ও ৫ লাখ টনের বেশি এ্যামোনিয়া উৎপাদন হবে। এছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএফ)। এই কারখানাটির যান্ত্রিক ত্রুটি সরিয়ে খুব সহসায় উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিইউএফএল চালু হলে বছরে আরও ৩ লাখ মে.টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ অবস্থায় অনেক কারখানা গ্যাস সরবরাহ ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকলেও গত অর্থবছর মুনাফা করেছে বিসিআইসি। গত অর্থবছরে ৭৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মুনাফা করেছে। ওই অর্থবছরে সরকারকে ১৫০ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা দিয়েছে। তবে সব ইউরিয়া সার কারখানা আধুনিকায়ন করা হলে দেশেই ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টনের বেশি সার উৎপাদন সম্ভব হবে। এর বাইরে আরও প্রয়োজন হলে কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার সার কারখানা থেকে বাড়তি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। ফলে সার আমদানি নির্ভরতা খেকে বেরিয়ে আসবে দেশ। এতে সার আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। বর্তমানে চালু থাকা যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি ৪ লাখ টন ও আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কেমিক্যাল কোম্পানিতে তিন লাখ ৫০ হাজার টনের বেশি সার উৎপাদন হচ্ছে। ইউরিয়া সার কারখানা ছাড়াও বিসিআইসির আওতাধীন একটি টিএসপি সার কারখানা ও একটি ডিএপি সার কারখানা রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, গ্যাসের অভাবে সার কারখানাগুলো বছরের প্রায় সিংহভাগ সময় বন্ধ ছিল। এরপরও আমরা চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করতে পেরেছি। সরকারী প্রতিষ্ঠানে লাভের মুখ দেখা কম পাওনা নয়। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান হিসেবে ইকবাল যোগদানের পর থেকেই মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক সময়ে সার সরবরাহ করতে পারছে বিসিআইসি। সময় মতো সার সরবরাহ করায় দেশে বাম্পার ফলনের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছে। বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। বিসিআইসির নিজস্ব উৎপাদন ও আমদানি করে ডিলারের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হচ্ছে। কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিসিআইসি গত কয়েক বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে কাজটি করছে। বিসিআইসির কর্মকর্তারা বলছেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনার কারণে সার সরবরাহ ঠিকভাবে করতে পারছে বিসিআইসি। এছাড়া সংস্থার সৎ, দক্ষ ও যোগ্য চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবালের সঠিক নেতৃত্বের কারণে চ্যালেঞ্জের এ কাজটি সহজ হয়েছে।
×