ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালনে সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৪ মে ২০১৭

বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালনে সম্ভাবনা

গ্রামের নাম কালাপানি। এ গ্রামটি অন্য দশটি গ্রামের মতো নয়। প্রতিবেশী দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম। গ্রামবাসী অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কমতি চোখে পড়ার মতো। সরকারী সুযোগ-সুবিধা এখানে কমই পৌঁছে। এমন অজ পাড়া গায়ে কেউ আসতে চায় না। বিপদে না পড়লে। অভাব-অনটন নিত্যকার ব্যাপার। শিশুদের মলিন মুখ, হাড্ডিসার দেহ বলে দেয় কতটা পিছিয়ে তারা। এমনটাই ছিল কিছুদিন আগে। এখন আর এই চিত্র নেই। বদলে গেছে অনেকটাই। জাদুর কাঠি নয়। নয় আলাদিনের চেরাগ। গ্রামবাসী নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনেছেন খরগোশ পালন করে। শুরুতে তাদের পাশে ছিল ওয়াল্ডভিশন নামে একটি সংস্থা। ৩২টি বাড়িতে প্রাথমিকভাবে খরগোশ পালন করা হয়। প্রথমবারেই গ্রামবাসী সফলতার মুখ দেখেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় শতাধিক পরিবারে ছড়িয়ে পড়েছে খরগোশ পালন। এ গ্রামের দেখাদেখি পার্শ¦বর্তী গ্রামের অনেকেই খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বƒী হয়েছেন। খরগোশ একটি সম্ভাবনাময় প্রাণী। বাণিজ্যিকভাবে খরগোশের উৎপাদন সম্ভব। কারণ খরগোশের প্রজনন ক্ষমতা খুব ভাল। একটি খরগোশ প্রতিমাসে ৭-৮টি বাচ্চা দেয়। নজরকাড়া সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় জীবন, মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব এসব কারণে খরগোশ জনপ্রিয়। শাকসবজি লতাপাতা খরগোশের খাবার। এসব তো বসত বাড়িতেই হয়। তাই বাড়তি খাবার তেমন কিনতে হয় না বলে জানান মামুন খান। তিনি অনেক দিন ধরে খরগোশ পালন করছেন। পরিণত একটি খরগোশের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এক জোড়া বাচ্চার দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। দুই বেলা ভাত জুটত না। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হতো। এখন দুই বেলা ভাত তরকারি জুটছে। সংসারে অভাব নেই। খরগোশ বিক্রির টাকায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে। নিত্যকার জীবন বদলে দেয়ার এ গল্প পারুল রিচিংয়ের। পুরো গ্রামের চেহারা পাল্টে গেছে খরগোশ নামক প্রাণীটির কল্যাণে। এমনটাই জানালেন মহিউদ্দিন। তিনি এনজিওতে কর্মরত। কালাপানির মানুষেরা পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য বদলের এক অনুপম নজির সৃষ্টি করেছেন। যা চোখে না দেখলে বুঝানো কঠিন। ওয়াল্ডভিশন নামে সংস্থাটি প্রথম দিকে সহযোগিতা করেছিন। তবে এখন তারা নেই। সরকারী কোন রকম সুযোগ-সুবিধা এখানে পৌঁছে না। চিকিৎসকরা এখানে আসতে চান না বলে জানান মিনু বড়ুয়া। বর্ষাকালে নানা রোগে খরগোশ মারা যায়। আধুনিক পদ্বতিতে কিভাবে খরগোশ পালনে করতে হয় তা এখানে অনেকেরই জানা নেই। নিজেদের অভিজ্ঞতায় তারা পথ চলেন। খরগোশের চিকিৎসা করেন। যেটা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নেত্রকোনার কলমাকান্দার কালাপানি গ্রামের খরগোশ পালনকারীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে ব্যাপকভাবে খরগোশ উৎপাদিত হতে পারে বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। কম শিক্ষিত একদল মানুষ নিজেদের উদ্যোগে খরগোশের মতো একটি প্রাণী পালন করে সফলতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অনেকের জন্য অণুকরণীয় অনুসরণীয় হতে পারে। আর বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন যে অতি লাভজনক তা আরেকবার প্রমাণ করলেন কালাপানির পরিশ্রমী অদম্য গ্রামবাসী।
×