ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশীয় উপগ্রহ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৮ মে ২০১৭

দক্ষিণ এশীয় উপগ্রহ

শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতে সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য একটি বিশেষ প্রাপ্তি। দক্ষিণ এশিয়ার মহাকাশে স্যাটেলাইট ওড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্নও ডানা মেলল। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের সরকারপ্রধানের একযোগে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট উদ্বোধন নিঃসন্দেহে আঞ্চলিক সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি খাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দেশই বিশেষ লাভবান হবে, এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। জিস্যাট-৯ নামের উপগ্রহটির উৎক্ষেপণ দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মানুষের জন্য আনন্দবার্তা নিয়ে এসেছে। সাত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এ উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতই শুধু নয়, বলা যায় অভিন্ন পাটাতনে এক সৌন্দর্যম-িত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অন্তর্ভুক্ত হন। পারস্পরিক এই বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার মনোভাব আরও বাড়াবেÑ এমনটা আশা করা যায়। সার্ক সদস্যভুক্ত আট দেশের মধ্যে শুধু পাকিস্তান এই উপগ্রহের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেনি। পাকিস্তানকে যোগ দেয়ার ভারতীয় প্রস্তাব সে দেশটি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে এক ধরনের অসহযোগিতা ও সার্কের আদর্শবিরোধী অবস্থানই আরও একবার স্পষ্ট করে তুলল। দেখা যাচ্ছে সার্কের অগ্রযাত্রায় পাকিস্তান বরাবরই প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে। উপগ্রহটি সফলভাবে কক্ষপথে স্থাপিত হওয়ার সময় থেকেই পাকিস্তান ছাড়া সার্কের বাকি সাত সদস্য দেশ এর সুবিধা ভোগ করতে থাকবে। উপগ্রহের সক্রিয়তার কারণে যেসব সুবিধা মিলবে তার ভেতর প্রথমেই রয়েছে সাত দেশের ভেতর বিভিন্ন ধরনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম বার্তা পাওয়া সাপেক্ষে তার সুষ্ঠু মোকাবেলা করাও সম্ভবপর হবে। উপগ্রহের প্রাপ্ত সুবিধার ভেতর আরও রয়েছে ভৌগোলিক ম্যাপিং। সাত দেশের মজুদ প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানেও উপগ্রহটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। দেখা যাচ্ছে কেবল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনই নয়, জিস্যাট-৯ উপগ্রহ বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজও দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই মন্তব্য করেছেনÑ এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দৃশ্যপট বদলে দেবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন তিনি। অন্যদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এটিকে প্রতিবেশীদের জন্য অনন্য উপহার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। নেপাল, ভুটানসহ সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিক্রিয়ায় ওই বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে। উল্লেখ্য, চলতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এর লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ ৬৫ ভাগ ও উৎক্ষেপণ কাজের রকেট নির্মাণের কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল সøট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। মহাকাশে ঘুরে ঘুরে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশকে সেবা দিয়ে যাবে। দেশবাসী স্বপ্ন দেখতেই পারে শুক্রবার ‘জিস্যাট-৯’ উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ এবং বছর শেষের আগেই মহাকাশে স্থাপিতব্য উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে।
×