ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

লাকী আখন্দের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোক

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

লাকী আখন্দের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোক

সাজু আহমেদ ॥ সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তারুণ্যের আবেগ সুরে বেঁধে ‘এই নীল মণিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘আগে যদি জানতাম’- এর মতো জনপ্রিয় সব গান উপহার দিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু সংবাদে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও তার কাছের মানুষ আত্মীয় স্বজনসহ বাংলা গানের ভক্ত ও তার গুণগ্রাহীরা। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষরা। তারা বলছেন সুরের এই জাদুকরের মৃত্যুতে বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তারা বলেন, লাকী আখন্দ একজন মুক্তিযোদ্ধা সুরকার, গীতিকার ও একজন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী। তার সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশের অগণিত ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর : অসাধারণ সৃজনশীল সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন লাখী আকন্দ। যে বয়স মানুষের শেখার সেই বয়সেই তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন। তিনি জীবনভর যেটুকু সৃষ্টি করেছেন তা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। তার সৃষ্টি অবহেলায় ছড়িয়ে রাখার অবকাশ নেই। লাকী শক্তিমান শিল্পী। তার মৃত্যু নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। বন্ধুর প্রতি আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা। ফাহমিদা নবী : লাকী চাচা সত্যি আর নাই। সত্যি বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি কিছু ভাবতে পারছি না। শোক প্রকাশ করার ভাষা নেই। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। এত স্মৃতি ভুলব কি করে। আধুনিক বাংলা গানে তার যে অবদান তা মানুষ স্মরণ করবে চিরদিন। সৃষ্টিকর্তা তাকে ভাল রাখুন, শান্তিতে রাখুন। কুমার বিশ্বজিৎ : এখনও মনে পড়ছে, ১৯৭৭ সালে তিনি যখন আমার প্রথম এ্যালবামের জন্য প্রথম গানটা দিলেন। আরও একটা গান দিয়েছিলেন তিনি ‘যেখানেই সীমান্ত তোমার’। গানটি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিল। বাংলা সঙ্গীতে তোমার অবদান কখনও ভোলার নয়। আপনি সবসময় আমাদের হৃদয়েই থাকবে। প্রার্থনা করি, আপনি ওপারে স্বর্গসুখ পাবেন। মানাম আহমেদ : লাকী ভাই সবসময় আক্ষেপ করতেন, তার গানের কপিরাইট নিয়ে। এত বছর হয়ে গেল, তার গানের কোন কপিরাইট তিনি পাননি। আজ লাকী ভাই চলে গেলেন। আশা করি তার গানের কপিরাইট তার পরিবার পাবে। লাকী ভাই যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন। তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। লাবু রহমান : আমি লাকী আখন্দের গান গেয়ে প্রেম করেছি। শুধুমাত্র আমি নই আমার মতো সেই সময়টায় যারা ছিল তারা সবাই তখন তার গান গেয়ে প্রেম করত। ‘নীল মনিহার’, ‘আগে যদি জানতাম’ এই গানগুলো গেয়ে আমি আমার প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম করেছি। শুধু তাই নয় সেই সময়টায় আমরা যারা গান করতাম তখন অনেকেই তার গান গেয়ে অন্যদের মুগ্ধ করেছি। লাকী আখন্দ আমাকে খুব ভালবাসতেন। তার বড় ভাই হ্যাপী আমার গিটার বাজানো খুব পছন্দ করতেন। সেজন্য তিনিও আমার গিটার বাজানো খুবই পছন্দ করতেন ও সবসময় আমার প্রশংসা করে আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন। যখন আমি জানতে পেরেছি, লাকী ভাই আমার গিটার বাজনো পছন্দ করেন তখন আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তবে হঠাৎ করে তার চলে যাওয়াটা আমার জন্য খুবই আকস্মিক এবং শোকের। আলাউদ্দিন আলী : গতকাল শুনলাম বাসায় আছো, খুব ভাল আছো। একটু আগে পৌনে ৮টায় এক সাংবাদিক জানালো, তুমি সন্ধ্যায় চলে গেছো। আল্লাহকে বলি-তোমায় দেখে রেখো, শান্তিতে রেখো। শাফিন আহমেদ : লাকী ভাই আপনি আমাদের অনেক কালজয়ী গান দিয়েছেন। আপনাকে আমাদের মাঝে রেখে দিতে পারলে বাংলা গানের জন্য মঙ্গল হতো। কিন্তু তা না পারায় আমরা দুঃখিত। আপনার গান আমরা উপভোগ করে যাব। আপনি শান্তিতে থাকুন। শারমিন সুলতানা সুমী : সত্যিকারের এক শিল্পী। সৃষ্টিতে, ব্যক্তিত্বে। কোন দিন নিজেকে জাহির করতে দেখিনি তাকে। তার জন্য শ্রদ্ধাটা তাই মন থেকেই। ভাল থাকবেন কিংবদন্তী লাকী আখন্দ। আল্লাহ আপনাকে নিশ্চয় শ্রেষ্ঠ জায়গায় রাখবেন।
×