ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরপরাধ বন্দীর মুক্তি

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৫ মার্চ ২০১৭

নিরপরাধ বন্দীর মুক্তি

বিচারহীনতার সংস্কৃতি এমনভাবে গ্রাস করে আছে যে, বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়। আর বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে-নিভৃতে। রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় যা অকল্পনীয়, সেই অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহ। কারও কোন ভ্রƒক্ষেপই যেন নেই বিষয়টিতে। বছরের পর বছর গড়িয়ে যায় বিচার শেষ হতে। অভিযুক্ত কারাভোগ করছে দশকের পর দশক; কিন্তু বিচার আর শেষ হয় না। কেন হয় না তার নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নানা সময়ে। কিন্তু বিষয়টির আর সুরাহা হয় না। ভুক্তভোগীদের সাংবিধানিক অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত রাখা হয় বলেই বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়তে হয়। আর এটা তো বিচারহীনতারই নামান্তর। মামলার অভিযোগ গঠন আর হয় না, বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আবার অভিযোগ গঠন হলেও আদালত অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা দুর্বল বলে চিহ্নিত করে। তখন পুনরায় তদন্তে আরও সময়ক্ষেপণ হয়। আবার চার্জশিট আমলে নিয়েও সাক্ষী হাজির হয় না আদালতে। অবহেলা, ঔদাসীন্য, দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা, অনৈতিকতার অজস্র উদাহরণ কাজ করে আসছে এসব ক্ষেত্রে। দ্রুত বিচারের নজির সহজে মেলে না বলেই বিনা বিচারে কারাভোগ স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। আবার বিবাদী দরিদ্র শ্রেণীর হলে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় রায় প্রকাশেও বিলম্বের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বিনা বিচারে আটক অভিযুক্তরা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে রয়েছে, অথচ তাদের বিচারই শুরু হয়নি। এমন উদাহরণ অজস্র। এসবই অমানবিক কাজ। যা কোনভাবেই আইনের শাসনকে সমর্থন করে না। আইনের শাসন হচ্ছে কেউ অপরাধ করলে সেই অপরাধের বিচার করা। অথচ বিচারই শুরু হয় না। তারপরও অভিযুক্তকে কারাগারে আটক থাকতে হয় ১৫ থেকে ১৮ বছর। দেখা গেছে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করার পরও কারাবন্দী থেকে যেতে হয়। বিনা বিচারে কারাভোগ বেদনায় দীর্ণ হওয়ার মতোই। মানুষের জীবন নিয়ে এই এক ধরনের ছেলেখেলা চলে আসছে। কেউ অপরাধ করলে আদালত তাকে শাস্তি দেবে। তবে সেটুকু শাস্তিই তার প্রাপ্য, যতটুকু অপরাধ তিনি করেছেন। সম্প্রতি বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক বন্দীদের তালিকা তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। মামলায় যে দ- হতো তার চেয়েও বেশি কারাভোগ করছে এমন বন্দীর নামও মিলেছে। বড় করুণ তাদের চিত্র। কেউ যুবক বয়সি কারাগারে ঢুকে আজ মধ্য বয়সে বা বৃদ্ধে পরিণত হয়েছেন। শিশুরা যুবকে পরিণত হয়েছে। এই যে এদের জীবনকে এভাবে নিগৃহীত করা হলো তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে, কে দেবে কারামুক্তির পর বেঁচে থাকার আশা-ভরসা, সেসবের জবাব তো পেতেই হবে। এই প্রথম এ দেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা যারা বিনা অপরাধে আটক রয়েছেন তাদের অবিলম্বে জেল থেকে মুক্ত করার কথা বলেছেন যেমন, তেমনি তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ, এমনকি রাষ্ট্রের কাছেও চাইতে পারেন। এটা দীর্ঘদিনের একটা জনপ্রত্যাশা এবং তা পূরণে অঙ্গীকার ব্যক্ত করার জন্য শেখ হাসিনা গণমানুষের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করে একটি মাইলফলক স্থাপন করেছেন। তবে বিষয়টি যেহেতু নতুন, তাই রাষ্ট্র বা সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে।
×