ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষায় ভাঙ্গন আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১১ মার্চ ২০১৭

বর্ষায় ভাঙ্গন আতঙ্ক

মাজহার মান্না, মিঠামইন থেকে ফিরে ॥ হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার প্রত্যন্ত উড়িয়ন্দ নতুনহাটি গ্রামসহ নিচু এলাকায় প্রতিবছর বর্ষার শুরুতেই দেখা দেয় ভাঙ্গন আতঙ্ক। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনে হাওড়াঞ্চলের বহু গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে শত শত পরিবার এলাকা ছেড়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন। আবার অনেক গ্রামের আয়তন ছোট হতে হতে মানচিত্রই পাল্টে গেছে। অথচ হাওড়াঞ্চলে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, আর আবাসন ব্যবস্থা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় কোন কোন এলাকায় মাটি ভরাট করে ছোট ছোট গ্রাম গড়ে তোলা হচ্ছে। সেগুলোও ভাঙ্গনের হুমকি মোকাবেলা করে কোনরকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এরকমই অতি ঝুঁকিপূর্ণ গ্রাম হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপসদৃশ্য ‘উড়িয়ন্দ নতুনহাটি’। মিঠামইন সদর ইউনিয়নের উড়িয়ন্দ নতুন ছোট্ট গ্রামটি তৈরি করতে কয়েক বছর আগে এগিয়ে আসে পপি-রিকল প্রজেক্ট। সংস্থাটি অক্সফামের আর্থিক সহযোগিতায় এখানে বসতি স্থাপনের পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু গ্রামের একদিকে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হলেও তিন দিক এখনও অরক্ষিত রয়েছে। ফলে গ্রামের ধার ঘেঁষে মাটি ভরাট করে কোনরকমে বসতবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করা হলেও বর্ষার তা-বে এসব মাটিও ভেঙ্গে চলে যায়। তখন হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে নেমে আসে চরম হতাশা। রিকল প্রকল্পের সমন্বয়কারী মোশারফ হোসেন খান জানান, ‘হাওড়ের ভেতর দ্বীপের মতো গ্রামটিকে উঁচু করাসহ প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে বসবাসের উপযোগী করে দেয়া হয়েছে। ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাটসহ ২০টি পরিবারের জন্য ৪ লাখ ২৭ হাজার ৫শ’ টাকায় গ্রামের দক্ষিণ পাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ঢেউয়ের ঝাপটা তেমন লাগে না। কিন্তু এখন গ্রামটির উত্তর ও পূর্ব পাশেও দেয়াল নির্মাণ করা দরকার। তা না হলে বর্ষার প্রচ- ঢেউয়ের আঘাতে গ্রামটির প্রভূত ক্ষতি সাধিত হবে। আবারও পরিবারগুলো উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়ে যেতে পারে’। জানা যায়, উড়িয়ন্দ নতুনহাটি গ্রামের পরিবারগুলোর অধিকাংশই নিরক্ষর-অল্পশিক্ষিত। তবুও এখানে গ্রামীণ গৃহবধূরা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা আনতে দিনমজুর স্বামীর সঙ্গে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। এসব হতদরিদ্র নারীরা এখন সেলাই কাজ ও মুদি মনোহরী ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে পপি-রিকল অক্সফার্মের সহযোগিতায় ১০টি ল্যাট্টিন নির্মাণসহ তিনটি গভীর এবং একটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। এছাড়া হাওড়ের নারীদের এতদিন উন্মুক্ত নদী বা ডোবায় গোসল করে খোলামেলা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে হতো। গোসলখানার ব্যবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় ৩৮ হাজার টাকায় গ্রামের নারীদের জন্য পাকা গোসলখানা তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান লিটন জানান, ২০১৪ সালে উড়িয়ন্দ নতুনহাটিতে ২০টি পরিবারের ১০৫ নারী-পুরুষ বসবাস করছেন। বিদ্যুতবিহীন গ্রামের অনগ্রসর এসব হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু করার জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন। মিঠামইনের ইউএনও তাসলিমা আহমেদ পলি উড়িয়ন্দ গ্রাম পরিদর্শন করে জানান, বর্ষায় গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এখানে বেশিরভাগ হতদরিদ্র পরিবার বসবাস করে। এ জন্য তিনি গ্রামের ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ গ্রামে সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।
×