ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বাজার আফ্রিকা!

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৯ মার্চ ২০১৭

নতুন বাজার আফ্রিকা!

বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের নতুন বাজার হতে যাচ্ছে আফ্রিকা। বর্তমানে আফ্রিকায় ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। মিসর, কেনিয়া, লিবিয়া, মরক্কো ও দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে বাংলাদেশের দূতাবাস। তবে অন্তত এই মুহূর্তে কেনিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, বিশেষ করে নিট পণ্যে। বিকেএমইএর কিছু উদ্যোক্তা এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে কেনিয়ার একটি পদস্থ প্রতিনিধি দল এসেছিল বাংলাদেশে। তারা বাণিজ্যমন্ত্রীসহ নিট সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতা চুক্তিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক দিক হলো চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা চাইতে পারে কেনিয়ার কাছে। এর মধ্য দিয়ে সে দেশে সৃষ্টি হতে পারে নিট পণ্যের নতুন বাজার। এর পাশাপাশি কেনিয়ায় পাটপণ্যও নিতে পারে বাংলাদেশ থেকে। প্রাথমিক এই উদ্যোগটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে আফ্রিকায় অন্যান্য দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনার দরজা খুলে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ববাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি গত পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগত কমছে। আর এর জন্য প্রধানত রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়া তথা ব্রেক্সিট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানকেই দায়ী করেছে বিশ্ববাণিজ্য প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যাওয়ার জন্য। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, বিশ্ববাণিজ্য প্রবৃদ্ধি যতটা কমেছে, তার ৭৫ শতাংশই কমেছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের দিকে ঝুঁকেছে এবং এটিপি বাতিলসহ বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধাও ফিরিয়ে দেয়নি। অন্যদিকে ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যেও বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। এ অবস্থায় আপাতত কেনিয়া এবং অনতিপরেই সুবৃহৎ মহাদেশ আফ্রিকা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের হাতছানি নিয়ে অপেক্ষমাণ বাংলাদেশের জন্য। এই সুযোগ কাজে লাগাতে প্রয়োজনে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ২০১০ সালে আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সং ছিল ইটস টাইম ফর আফ্রিকা। বাস্তবিকই আফ্রিকা জেগে উঠছে। সেই বিশাল মহাদেশের কয়েকটিতে বিচ্ছিন্ন গোলযোগ ও সহিসংতা সত্ত্বেও আফ্রিকার শান্তিশৃঙ্খলা সুরক্ষায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে সেখানে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা শান্তিরক্ষী। বাহিনী। প্রয়োজনে এই সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে। সুদান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, আলজিরিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশী পাটপণ্যের সুবিশাল বাজার। এর পাশাপাশি পোশাকশিল্প, নিটপণ্য, চামড়া শিল্প, হস্তশিল্প, চা ইত্যাদিও হতে পারে রফতানি পণ্যের বিশাল ও আকর্ষণীয় বাজার। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাবে বলেই প্রত্যাশা।
×