ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৈরাজ্য থেকে শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৪ মার্চ ২০১৭

নৈরাজ্য থেকে শিক্ষা

জনদুর্ভোগে কী লাভ হলো ধর্মঘটীদের? আইন সবার জন্য সমান। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলার কথা। আইনের সেই সুরাহায় ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার রায় বদলে দেয়ার অভিপ্রায়ে মানুষকে জিম্মি করা কোন কাজের কথা নয়। এতে হিতে বিপরীতই হয়। পরিবহন ধর্মঘটে আমরা যুগপৎ প্রত্যক্ষ করলাম পেশী শক্তি ও সঙ্ঘ শক্তির দাপট। অবশেষে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডাকা কেন অবৈধ নয়Ñ এ মর্মে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যে সকল মন্ত্রী ও এমপি গণপরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি অথবা ধর্মঘটে যাওয়ার নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী তাদেরকে সংসদ অধিবেশনে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলে কি ভুল হবে? পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দুই দিন অফিসযাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে নেয়াসহ নানা প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রাজধানীতে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ধর্মঘটী শ্রমিকরা। প্রাইভেট কার চলাচলেও বাধা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ব্যক্তিগত বাহনও বাধার মুখে পড়ে। দূরপাল্লার রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে চালককে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্মঘট চলাকালে বিশেষত রাজধানীর গাবতলীতে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। ঘটে ভাঙচুরের ঘটনা। এতে নিহত হন একজন শ্রমিক। আহত হন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এমন পরিস্থিতি মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না। দুই দিনের ধর্মঘট শ্রমিকদের পক্ষে জনসমর্থন টানতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের অনৈতিক কর্মসূচীতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় একজন বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদে খুলনা বিভাগের ১১টি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা। এই ধর্মঘট প্রত্যাহারে যখন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছিল, তখন সাভারে সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত একজন চালককে মৃত্যুদ- দেয়। আদালতে প্রমাণিত এক ‘হত্যাকারী’ বাসচালকের পক্ষে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তা দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। এটা আইনের প্রতি তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশ্রদ্ধারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি, বহু ঘাতক চালকের অপরাধের বিচার হয়নি। তারেক-মিশুক হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চালকের অপরাধ প্রমাণিত হলেও তার মৃত্যুদ- হয়নি, যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার সব ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করার পরই রায় দেয়া হয়েছে। আসামিপক্ষ আত্মসমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। পরবর্তী রায় সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। যাত্রীসাধারণকে জিম্মি করে সরকারকে রায় বদলে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়ার বিষয়টিকে কোনমতেই সমর্থন করা যায় না। মনে রাখা চাই, দোষী চালকদের বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা না গেলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকোপ কমবে না। সরকারকে এই সড়ক নৈরাজ্য নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে যাত্রীসাধারণ পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে বিকল্প পরিবহন হিসেবে রেলওয়ের উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি বিআরটিসিকে আবার দূরপাল্লার ও মহানগরীর গণপরিবহনে ব্যাপকহারে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণও জরুরী।
×