ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মিডিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ছেই

বর্জন করবেন ট্রাম্প ॥ ডব্লিউএইচসিএ’র বার্ষিক ভোজ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বর্জন করবেন ট্রাম্প ॥ ডব্লিউএইচসিএ’র বার্ষিক ভোজ

মিডিয়ার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। তিনি শনিবার হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএইচসিএ) বার্ষিক নৈশভোজ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। শতাব্দী প্রাচীন এই ভোজ চলতি বছর ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। খবর এএফপি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়ে মিডিয়ার সঙ্গে তিক্ততাপূর্ণ সময় পার করেছেন ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংকালে কয়েকটি মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিবিসি, সিএনএন, গার্ডিয়ান, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস ও পলিটিকো। ব্রিটবার্ট এবং ওয়ান আমেরিকা নিউজ নেটওয়ার্কের মতো ছোটখাট মিডিয়া যেগুলো সাধারণ ট্রাম্পের পক্ষে কভারেজ করে থাকে তারা প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত থাকতে পারবে বলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার জানিয়েছেন। এর পরদিন ট্রাম্প ডব্লিউএইচসিএ’র বার্ষিক নৈশভোজ বর্জনের ঘোষণা দিলেন। ট্রাম্পের মতে, মূলধারার মার্কিন গণমাধ্যমগুলো হলো ‘গণ মানুষের শত্রু’। তিনি ‘ভুয়া খবর’ পরিবেশনের জন্য গণমাধ্যমকে ‘বিরোধী দলের’ আখ্যা দেন। হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএইচসিএ) বলেছে তারা হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংয়ে কয়েকটি মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের ‘জোরাল প্রতিবাদ’ করবে এবং বিষয়টির প্রতি তারা রিপাবলিকান প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলেও জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের মিডিয়া নিষিদ্ধকে নিউইয়র্ক টাইমস ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর সন্দেহাতীত অবমাননা’ বলে অভিহিত করেছে। সিএনএন একে ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ এবং লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস ‘মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের আক্রমণের মাত্রা আরেক ধাপ বাড়ানো’ বলে মন্তব্য করেছে। ট্রাম্প শনিবার ডব্লিউএইচসিএ’র বার্ষিক নৈশভোজ বর্জনের ঘোষণা দিয়ে একটি টুইট করেছেন। তিনি এতে লেখেন ‘আমি এ বছর হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের ডিনারে অংশ নেব না। সকলের প্রতি আমার শুভ কামনা রইল’। ডিনার আয়োজনকারীরা জানিয়েছেন, যে কোন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট (গণমাধ্যমের স্বাধীনতা) এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তারা পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানটি করবেন। ১৯২১ সাল থেকে নৈশভোজের আয়োজন হয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও কোরিয়া যুদ্ধেও জন্য অনুষ্ঠানটি তিনবার হতে পারেনি। ভ্যানিটি ফেয়ার ও নিউইয়র্কার পত্রিকার মতো ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, তারা নৈশভোজে অংশ নেবে না। নিউইয়র্ক টাইমস ২০০৮ সাল থেকে এতে অংশ নিচ্ছে না। এবারের নৈশভোজে গার্ডিয়ানও অংশ নেবে না। অনেক পর্যবেক্ষকই এবারের আয়োজনের সঙ্গে ২০১১ সালের নৈশভোজের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। সেবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্যবসায়ীদের নিয়ে উপহাস করেছিলেন। ওবামা অবশ্য তার দুই মেয়াদকালে আটটি নৈশভোজেই যোগ দিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমে শুরু থেকেই ট্রাম্প মূলধারার মার্কিন গণমাধ্যমকে আক্রমণের নিশানা করে এসেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরও তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে আসেননি বরং সংবাদ মাধ্যমের প্রতি সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের তুলোধুনা করেন। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, তার এক মাসের শাসনকালের চিত্রটি গণমাধ্যমগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরেনি। তার চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যাননও মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন যে নীতি অগ্রসর হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামীতে মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটবে। ব্যানন দক্ষিণপন্থী অনলাইন ব্রিটবার্টের মালিক। গত ডিসেম্বরে পলিটিকোকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘কোন নিউজ আউটলেটকে নিষিদ্ধ করবে না হোয়াইট হাউস’। মিডিয়া ছাড়াও আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
×